যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে ৩৬ লাখ টিকা আনার চেষ্টা

দেশে টিকার মজুত কমে আসছে। টিকার বিকল্প উৎসের চেষ্টা করছে সরকার।

করোনার টিকা
প্রতীকী ছবি : রয়টার্স

সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০ লাখ এবং যুক্তরাজ্য থেকে ১৬ লাখ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সংগ্রহের চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। তবে যুক্তরাজ্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টিকা সংগ্রহের পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশকে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ওই দুই দেশের পাশাপাশি কানাডার মজুত থাকা অক্সফোর্ডের টিকা সংগ্রহেরও চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি কানাডা তার মজুত থাকা এই টিকা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

# এ পর্যন্ত ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জনকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।
# গতকাল পর্যন্ত ৩৯ লাখ ৭২ হাজার ২১৮ জন দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন।
# প্রথম ডোজ পাওয়া প্রায় ১৫ লাখ মানুষ দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায়।

গত শুক্রবার ওয়াশিংটনের একটি কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, অক্সফোর্ডের টিকার বিষয়ে বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে ২০ লাখ টিকা পেতে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনকে চিঠির বিষয়ে যে অনুরোধ জানিয়েছেন, সে সম্পর্কে ওয়াশিংটনের মনোভাব ইতিবাচক। শিগগিরই টিকার বিষয়ে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক অনুরোধের জবাব দেবে যুক্তরাষ্ট্র।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মজুত থেকে টিকা পেতে দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের যুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন পেশার অন্তত দেড় হাজার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক সে দেশের সরকারের কাছে বাংলাদেশকে টিকা দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈশ্বিক কোভিড-১৯ মোকাবিলা স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক সমন্বয়কারী গেইল স্মিথ গত বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিজের মজুত থেকে অক্সফোর্ডের ছয় কোটি ডোজসহ মোট আট কোটি ডোজ টিকা বিভিন্ন দেশকে দেবে। প্রয়োজনের ভিত্তিতে, গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের সঙ্গে সমন্বয় করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ওই ব্রিফিংয়ে গেইল স্মিথ বলেন, টিকা বিতরণের সময়সীমা নির্ভর করছে মজুতের ওপর। এ ছাড়া অক্সফোর্ডের ছয় কোটি ডোজ বিতরণ করতে মার্কিন ওষুধ প্রশাসনের (এফডিআই) অনুমতিও লাগবে।

বাংলাদেশে বর্তমানে অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে। এই টিকা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি করা। এ পর্যন্ত ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জনকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৩৯ লাখ ৭২ হাজার ২১৮ জন দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন। সরকারের হাতে অক্সফোর্ডের টিকার মজুত ফুরিয়ে আসছে। প্রথম ডোজ পাওয়া প্রায় ১৫ লাখ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার মতো টিকা সরকারের হাতে নেই। সে কারণে সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে জরুরি ভিত্তিতে অক্সফোর্ডের টিকার সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। চীন থেকে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে উপহার হিসেবে পাঁচ লাখ টিকা পেয়েছে। এ ছাড়া আরও ছয় লাখ টিকা উপহার হিসেবে দেবে বলে জানিয়েছে চীন। তবে ওই টিকা অক্সফোর্ডের দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ নেই বলে জনস্বাস্থ্যবিদেরা মত দিয়েছেন।

যুক্তরাজ্য বলছে অন্য কথা

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে ১৬ লাখ অক্সফোর্ডের টিকা পেতে গত মাসে দেশটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেছিল বাংলাদেশ। সম্প্রতি বাংলাদেশকে দেওয়া এক আনুষ্ঠানিক চিঠিতে যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ এশিয়া ও কমনওয়েলথবিষয়ক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লর্ড আহমেদ জানিয়েছেন, তাঁদের পক্ষে বাংলাদেশকে অক্সফোর্ডের টিকা দেওয়া সম্ভব নয়। যুক্তরাজ্যের হাতে যে টিকা রয়েছে, তা করোনা টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সকে দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিকভাবে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা চালাতে পারে।

যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে বেসরকারি পর্যায়ে টিকা সংগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কূটনীতিকেরা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে বেসরকারিভাবে যুক্তরাজ্যে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলে বিষয়টির সুরাহা হতে পারে। এখন যুক্তরাজ্যের সরকারই বলছে বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নিতে। এর অর্থ, খুব সহজে দেশটি থেকে টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

টিকার অন্য উৎস

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে খুব শিগগির টিকা আসা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ার পর সরকার অনানুষ্ঠানিকভাবে পশ্চিমা দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টিকার মজুতের খোঁজে নামে। বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিকভাবে মূলত ইউরোপীয় দেশগুলোর পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে টিকা পাওয়ার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়।

এ নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক মাস ধরে দূতাবাসের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে টিকার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই দেশগুলোতে যে পরিমাণ টিকার খোঁজ আমরা পেয়েছি, তা বাংলাদেশের চাহিদার তুলনায় একেবারে কম। ফলে বিকল্প এসব উৎস থেকে টিকা সংগ্রহ কাজে আসবে না।’