রাশিয়া থেকে এক কোটি টিকা কেনার প্রস্তুতি

চীনের সিনোফার্মের দেড় কোটি টিকা কেনার প্রক্রিয়া শেষ করার পর রাশিয়ার কাছ থেকে এক কোটি স্পুতনিক–ভি টিকা কিনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

রাশিয়ার তৈরি করোনার টিকা স্পুতনিক-ভি
ছবি: রয়টার্স।

রাশিয়া থেকে এক কোটি টিকা কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। এ মাসেই রাশিয়ার সঙ্গে টিকা কেনার আলোচনা শেষ করে বাংলাদেশ জুলাই থেকে স্পুতনিক–ভি টিকার প্রথম চালান পেতে আগ্রহী। সবকিছু ঠিকঠাক এগোলে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব টিকা দেশে আসবে। বিভিন্ন দেশ থেকে করোনাভাইরাস টিকা সংগ্রহের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট টিকা রপ্তানি বন্ধ করার প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের লক্ষ্যে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। মার্চ মাস থেকে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে নানা পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু হয়। এপ্রিলের শেষে এবং মে মাসের শুরুতে যথাক্রমে রাশিয়ার স্পুতনিক-ভি এবং চীনের সিনোফার্মের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় সরকার।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, রাশিয়া থেকে টিকা কেনার ব্যাপারে গত শুক্রবার প্রথম দফায় আলোচনা হয়েছে। ওই আলোচনায় টিকার পরিমাণসহ বেশ কিছু বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব বিষয়ে রাশিয়া খুব শিগগির তাদের মতামত দেবে বলে জানিয়েছে।

রাশিয়া থেকে কত টিকা কেনা হচ্ছে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, দুই পক্ষের প্রথম ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এক কোটি টিকা কেনার আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। রাশিয়া এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।

তিন মাসে আসবে রাশিয়ার টিকা

গত মাসে রাশিয়ার কাছ থেকে টিকা কেনা ও যৌথ উৎপাদনের বিষয়ে সরকার চুক্তি সই করেছে। এর ধারাবাহিকতায় টিকা কেনার বিষয়ে গত ২৮ মে দুই পক্ষের প্রথম আলোচনা হয়।

বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা কেনা ও যৌথ উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনায় যুক্ত সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বাংলাদেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে টিকার পরিমাণ। বাংলাদেশ এক কোটি স্পুতনিক–ভি টিকা কিনতে চেয়েছে। দ্বিতীয়ত এই টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ আলাদা ধরনের। তাই রাশিয়া টিকার যে চালান বাংলাদেশকে সরবরাহ করবে, তাতে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ যাতে সমান সংখ্যায় থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া জুলাই থেকে শুরু করে রাশিয়া যাতে তিন মাসের মধ্যে এক কোটি টিকা সরবরাহ করে, সেই অনুরোধও করেছে বাংলাদেশ।

গত ১৩ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে এক কোটি টিকা কেনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। খুব শিগগির দেশে টিকা আসতে শুরু করবে।

এ মাসে চীনের টিকার প্রথম চালান

চীনের চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ বা সিনোফার্ম থেকে দেড় কোটি টিকা কেনার প্রস্তুতি শেষ করেছে বাংলাদেশ।

গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, জুন, জুলাই ও আগস্ট—এই তিন মাসে প্রতিবার ৫০ লাখ করে টিকা সরবরাহ করতে রাজি হয়েছে চীন। সেই হিসেবে এ মাসে চীনের টিকার প্রথম চালান বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড নামে উৎপাদন করছে। গত বছরের নভেম্বরে সেরাম থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা কিনতে বেক্সিমকো ফার্মাকে যুক্ত করে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করে বাংলাদেশ। দুই দফায় সেরাম ৭০ লাখ ডোজ টিকা পাঠানোর পর রপ্তানি বন্ধ করে দিলে দেশে গণটিকাদান কর্মসূচির গতি কমে আসে।

বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ভারত সরকারের ৩০ লাখ টিকা উপহারসহ অক্সফোর্ডের এক কোটি তিন লাখ টিকা পেয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জনকে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে। আর গতকাল পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের টিকা পেয়েছেন ৪১ লাখ ৮৬ হাজার ২৪৩ জন। প্রথম ডোজ পাওয়া ১৫ লাখ মানুষ এখন দ্বিতীয় ডোজ টিকা পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন।

চীন ও রাশিয়া থেকে যে টিকা কেনা হচ্ছে, তা মূলত দেওয়া হবে দেশের সেই সব নাগরিককে, যাঁরা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেননি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বে–নজির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ইউরোপের অনেক দেশের আগে টিকা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ গণটিকাদানের ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিল। কিন্তু ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করলে সেরাম টিকা সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এতে বাংলাদেশ হোঁচট খায়। এমন এক পরিস্থিতিতে বিকল্প উৎস হিসেবে চীন ও রাশিয়া থেকে দ্রুত টিকা সংগ্রহ সরকারের কূটনৈতিক সাফল্যের বহিঃপ্রকাশ। সরকার চীন ও রাশিয়া থেকে যে টিকা সংগ্রহ করছে, তা জনগণের মধ্যে কাদের, কীভাবে দেওয়া হবে, সেটা নিয়ে দ্রুত কর্মপরিকল্পনা তৈরি জরুরি।