রোগী শনাক্ত সবচেয়ে বেশি রাজশাহী বিভাগে, তারপর খুলনা

ভারতের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

দেশে দৈনিক করোনা সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা এখন রাজশাহী বিভাগে সবচেয়ে বেশি। তারপরেই খুলনা বিভাগে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের এই দুই বিভাগের ভারত সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে।

আজ বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৮টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা) সারা দেশে ২ হাজার ৫৭৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮১৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। এরপর রয়েছে খুলনা বিভাগ, শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫৭৮ জন। ঢাকা বিভাগে শনাক্ত হয়েছেন ৫১৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৩৭, রংপুর বিভাগে ১৩০, ময়মনসিংহ বিভাগে ১১৯, সিলেট বিভাগে ৯২ এবং বরিশাল বিভাগে ৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

রাজশাহী বিভাগে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে রাজশাহী জেলায় ৩৫৩ জন। এরপর রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা, সেখানে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৫৮ জন। এ ছাড়া জয়পুরহাটে ৯৬, নওগাঁয় ৯৪, নাটোরে ৬২, পাবনায় ২৭, বগুড়ায় ১৫ ও সিরাজগঞ্জে ১০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে যশোরে ২০০ জন। এরপরে রয়েছে খুলনা জেলা, রোগী শনাক্ত হয়েছে ১২২ জন। এরপর কুষ্টিয়ায় ৭৩, বাগেরহাটে ৬৩, সাতক্ষীরায় ৪৮, চুয়াডাঙ্গায় ৩৭, ঝিনাইদহে ২১, মেহেরপুরে ৯ ও নড়াইলে ৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।

রোগী শনাক্তের দিক দিয়ে তৃতীয় ঢাকা বিভাগের মধ্যে এখনো সবচেয়ে বেশি রোগী ঢাকায়। ঢাকা মহানগর মিলিয়ে এই জেলায় শনাক্ত রোগী সংখ্যা ২৮৮ জন। এরপর বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে গাজীপুরে ৪৭ এবং ফরিদপুর ও টাঙ্গাইলে ৪৬ জন করে। এ ছাড়া মাদারীপুরে ২০, কিশোরগঞ্জে ১৬, নারায়ণগঞ্জে ১২, নরসিংদীতে ১১, মানিকগঞ্জে ৮, রাজবাড়ী ৭, গোপালগঞ্জে ৬, শরীয়তপুরে ৪ ও মুন্সিগঞ্জে ২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রাম জেলায় ১১৯। এরপর নোয়াখালীতে ৮৭ ও কক্সবাজারে ৬৩ সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। রংপুর বিভাগে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে দিনাজপুরে ৪৩ জন। এরপরে ঠাকুরগাঁওয়ে ৩৯ জন এবং রংপুরে ১৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে ময়মনসিংহ জেলায় ৩৫ জন।

বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে বরিশাল জেলায় ৩৪ জন। অন্য সব জেলার অবস্থা এখনো ভালো আছে। সিলেট বিভাগে বেশি রোগী সিলেট জেলায় ৬৯ জন। এরপরে রয়েছে মৌলভীবাজার ১৯ জন। অন্য দুই জেলায় রোগী শনাক্ত হয়েছে দুইজন করে।

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ৪০ জন। এ সময় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে, ১২ জনের। এরপর ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে ৮ জন করে, খুলনা বিভাগে ৬ জন, রংপুরে ৪ জন ও সিলেটে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

নতুন শনাক্তদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৮ লাখ ২০ হাজার ৩৯৫। মোট মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ৯৮৯ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৬৩০ জন।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। পরে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। তারপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। গত বছরের শেষ দিকে এসে সংক্রমণ কমতে থাকে।

এ বছরের মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণ আবার বেড়ে যায়। মার্চের প্রথমার্ধেই দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হাজারের ওপরে চলে যায়। বাড়তে থাকে মৃত্যুর সংখ্যাও। গত ২৬ মার্চের বুলেটিনে আগের ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ জনের মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়, সেখানে ১৯ এপ্রিলের বুলেটিনে আগের ২৪ ঘণ্টায় ১১২ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ওই দিনই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়।

করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় ৫ এপ্রিল থেকে মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যা এখনো বহাল রয়েছে। এ বিধিনিষেধে মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।

তবে গত মাসের মাঝামাঝিতে পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ‘লকডাউন’ ঢিলেঢালা হয়ে পড়ে । ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটা ও যাতায়াতে বিপুল লোকসমাগম দেখে জনস্বাস্থ্যবিদেরা এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আশঙ্কা করেছিল, ঈদের পর সংক্রমণ আবার বেড়ে যাবে। এর মধ্যে ভারত সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে রোগী দ্রুত বাড়তে শুরু করে। সব মিলিয়ে কিছুদিন ধরে সারা দেশেও করোনা শনাক্তের সংখ্যা আবার বাড়তে শুরু করেছে।