সংসদের ১০% সদস্য আক্রান্ত

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করেন সাংসদেরা। সামাজিক দূরত্ব মানার কারণে অনেকে নির্বাচনী এলাকাতেও যাননি। এরপরও এখন পর্যন্ত ৩৪ জন সাংসদ আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। অর্থাৎ, জাতীয় সংসদের (সংরক্ষিত নারী আসনসহ ৩৫০ আসন) প্রায় ১০ শতাংশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

এর মধ্যে ৩২ জনই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাংসদ। বাকি দুজন হলেন গণফোরামের মোকাব্বির খান ও বিএনপির রুমিন ফারহানা। আক্রান্ত সাংসদদের মধ্যে পাঁচজন মন্ত্রিসভার সদস্য। সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ রয়েছেন তিনজন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত সাংসদদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২৬ জন এবং চিকিৎসাধীন ৬ জন।

আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৩ জুন সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ মোহাম্মদ নাসিম এবং ২৭ জুলাই মারা যান নওগাঁ-৬ আসনের ইসরাফিল আলম। এর বাইরে টেকনোক্র্যাট কোটায় (সাংসদ নন) ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হওয়া শেখ মো. আব্দুল্লাহ করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৩ জুন রাতে মারা গেছেন।

করোনায় আক্রান্ত মন্ত্রিসভার সদস্যরা হলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। তাঁরা সবাই এখন সুস্থ।

সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ রুমিন ফারহানার হাতিরপুলের বাসায় তাঁর সঙ্গে থাকেন ৮৩ বছর বয়সী মা। যে কারণে শুরু থেকেই খুব সতর্ক ছিলেন। বাড়তি সতর্কতার অংশ হিসেবে কাঁচাবাজারও জীবাণুমুক্ত করে বাসায় ঢোকাতেন। এই কয়েক মাসে তিনি বাসার বাইরে বের হননি বলেই চলে। এত কিছুর পরও করোনার সংক্রমণ এড়াতে পারেননি। আক্রান্ত হওয়ার ১৪ দিন পর সুস্থ হয়েছেন, চিকিৎসা নিয়েছেনও বাসাতেই।

রুমিন ফারহানা প্রথম আলোকে বলেন, সব রকমের স্বাস্থ্যবিধি মানার পরও কীভাবে আক্রান্ত হলেন, সেটি অবাক করেছে তাঁকে। অবশ্য বাসায় আর কেউ আক্রান্ত হননি। করোনা আক্রান্ত হয়ে গতকাল প্লাজমা দান করেছেন।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, গত জুনে বাজেট অধিবেশনে যোগ দেওয়া সাংসদদের মধ্যে দুজনের করোনা শনাক্ত হয়। তাঁরা হলেন নড়াইল-২ আসনের মাশরাফি বিন মুর্তজা ও সিলেট-২ আসনের মোকাব্বির খান। দুজনেই এখন সুস্থ। এ ছাড়া সংসদ সচিবালয়ের প্রায় ১০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হন ওই সময়। তাই সতর্কতা হিসেবে নমুনা পরীক্ষা করাতে ১৭০ জন সাংসদকে চিঠি দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১২০ জনের মতো সাংসদ নমুনা দিলে দুজনের করোনা শনাক্ত হয়। এই দুই সাংসদ রাজশাহী-৪ আসনের এনামুল হক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সংরক্ষিত নারী আসনের ফেরদৌসি ইসলাম। তাঁরা এখন সুস্থ। বাকি সাংসদেরা নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় নমুনা পরীক্ষা করান বলে জানা গেছে।

সাংসদদের মধ্যে গত ১ মে প্রথম করোনা আক্রান্ত হন নওগাঁ-২ আসনের সাংসদ শহীদুজ্জামান সরকার। আর সর্বশেষ ২৩ আগস্ট ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সাংসদ দবিরুল ইসলামের করোনা শনাক্ত হয়। শুধু আগস্ট মাসেই ৮ জন সাংসদ করোনায় আক্রান্ত হন।

প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ১৭ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্থ হয়েছেন তিনি। এখন আর তেমন কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। নিয়মিত অফিস করছেন। এর মধ্যে তিনবার নির্বাচনী এলাকা বরিশালেও গেছেন।

বর্তমানে চিকিৎসাধীন ছয় সাংসদ হলেন ঠাকুরগাঁও–২ আসনের দবিরুল ইসলাম, রাজশাহী-৫–এর মনসুর রহমান, টাঙ্গাইল-৭–এর মো. একাব্বর হোসেন, পটুয়াখালী-৩–এর এস এম শাহজাদা, চট্টগ্রাম-৬–এর এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী ও মেহেরপুর-২–এর মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান।