হঠাৎ পুরুষের চেয়ে নারীর মৃত্যু দ্বিগুণ

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি: রয়টার্স

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে নারীদের মৃত্যু বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার সারা দেশে করোনায় ৫৬ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে ৩৭ জনই নারী। অর্থাৎ করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় পুরুষের চেয়ে দ্বিগুণ সংখ্যক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে কখনো এমন চিত্র দেখা যায়নি।

সংক্রমণের শুরু থেকে দেশে করোনায় পুরুষের চেয়ে নারীদের মৃত্যু কম ছিল। গত জুন থেকে নারীদের মৃত্যু বাড়ছে। গত মাসে বেশ কিছু দিন দৈনিক মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক ছিল নারী।

সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় হঠাৎ নারীদের মৃত্যু বেড়ে গেল কেন সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ বলতে পারছেন না জনস্বাস্থ্যবিদেরা। এ বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নারীর মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ হতে পারে ডেলটা ভেরিয়েন্ট। ডেলটা ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর দেখা গেছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একজন আক্রান্ত হলে পরিবারের প্রায় সবাই আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময়ে আগের তুলনায় নারীরা বেশি সংখ্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। যে কারণে নারী মৃত্যুও বেড়েছে। কিন্তু সংক্রমণ কমে যাওয়ার পর আরও বেশ কিছুদিন যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে বিষয়টি গবেষণা করতে হবে। দেখতে হবে এর সঙ্গে অন্য কোনো বিষয় আছে কি না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১ মার্চ পর্যন্ত দেশে করোনায় মোট মৃত্যুর ২৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ ছিলেন নারী। আর গতকালের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, মোট মৃত্যুর ৩৫ দশমিক ৪০ শতাংশ নারী।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্তের খবর জানানো হয়। চলতি বছরের মার্চে এসে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দেয়। আর গত জুন থেকে করোনার ডেলটা ধরন (ভারতে উৎপত্তি) ছড়িয়ে পড়লে সংক্রমণ ও মৃত্যু ভয়াবহ আকার ধারণ করে। একই সঙ্গে মৃত্যুর ক্ষেত্রে কিছু বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন দেখা যায়। শুরু থেকে ষাটোর্ধ্ব মানুষের মৃত্যু বেশি ছিল। এখনো বেশি মৃত্যু হচ্ছে ষাটোর্ধ্বদের। তবে জুন মাস থেকে অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের মৃত্যু বাড়তে দেখা যাচ্ছে। একইভাবে নারীর মৃত্যুও এ সময়ে এসে আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়।

চার দিন ধরে শনাক্তের হার ১০%–এর নিচে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযাযী, গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২৭ হাজার ২৩৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ৬৩৯ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরীক্ষার সংখ্যা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ছিল ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এ নিয়ে টানা চতুর্থ দিন রোগী শনাক্তের হার ১০ শতাংশের নিচে থাকল।

গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ১৫ লাখ ১৯ হাজার ৮০৫ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭৫৪ জন সুস্থ হয়েছেন। আর মারা গেছেন ২৬ হাজার ৬৮৪ জন। মোট শনাক্তের সংখ্যা বিবেচনায় গতকাল পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

গত আগস্ট মাসের শুরু থেকে দেশে করোনার সংক্রমণ কমছে। এখনো নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত আছে। তবে জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে এখন যেভাবে রাস্তাঘাট ও বাজারে লোকসমাগম বাড়ছে, তাতে যেকোনো সময় সংক্রমণ পরিস্থিতি আবার খারাপের দিকে যেতে পারে।