হাসপাতালের বুথে টিকার নিবন্ধন করতে সমস্যায় পড়ছেন অনেকে

টিকা নেওয়ার জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আজ কাগজ জমা দিচ্ছেন হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা
ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সকাল থেকে শুরু হয়েছে করোনার টিকাদান কার্যক্রম। আজ রোববার এখানে ২০০ জনের টিকা দেওয়ার কথা। তবে হাসপাতালের নিবন্ধন বুথে নিবন্ধন করতে অনেকেই সমস্যায় পড়ছেন। টিকা নেওয়ার পর বিশ্রাম নেওয়ার কথা থাকলেও অনেকেই তা নিচ্ছেন না।

দুপুর ১২টার দিকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনফারেন্স-১ কক্ষে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম টিকাটি নেন কলেজের অধ্যক্ষ এ বি এম মাকসুদ কামাল। এরপর টিকা নেন হাসপাতালের পরিচালক মো. খলিলুর রহমান। এ হাসপাতালে টিকা নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তবে তিনি টিকা নেননি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা গতকাল জানিয়েছিলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের আজ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা নেওয়ার কথা।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন শেষে বক্তব্য দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চলে যান। এ সময় এ বি এম মাকসুদ কামাল ও খলিলুর রহমানের টিকা নেওয়া শেষ হয়। টিকা নেওয়ার পর এ দুজনের ১৫ থেকে ৩০ মিনিট বিশ্রাম করার কথা থাকলেও তাঁরা বিশ্রাম না নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কনফারেন্স কক্ষ ত্যাগ করেন।

করোনা টিকার নিবন্ধন বুথে ব্যস্ত স্বাস্থ্যকর্মী। আজ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে করোনার টিকা নেন সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এস এম কামরুল আক্তার। তিনি টিকা নেওয়া শেষে বিশ্রাম না নিয়ে কনফারেন্স কক্ষ ত্যাগ করেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি কারও হাইপারটেনশন থাকে, তাহলে একটা স্টেরয়েড ইনজেকশন নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। টিকা নেওয়ার পর বিশ্রাম নেওয়াটা জরুরি। তিনি আরও বলেন, টিকা নিতে কেউ অসুবিধা বোধ করবেন না। টিকা দিলে একটু ব্যথা হতে পারে। সেটার কোনো সমস্যা নেই। তিনি বলেন, এই টিকায় ভয়ের কোনো কারণ নেই। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ বিকেল চারটা পর্যন্ত করোনার টিকা দেওয়া হবে। আজ মূলত টিকা নেবেন হাসপাতালটির চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৪৯১ জন করোনার টিকা নেওয়ার জন্য এ হাসপাতাল থেকে নিবন্ধন করেছেন।

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা দেওয়ার জন্য মোট চারটি বুথ আছে। এর মধ্যে নারীদের জন্য দুটি বুথ। আজ সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বুথে ঢুকতেই হাতের ডান দিকে একটি নিবন্ধন বুথ। সেখানে একটি কম্পিউটার ও প্রিন্টারের মাধ্যমে নিবন্ধনের ব্যবস্থা রাখা আছে। তবে নিবন্ধন করার দায়িত্বে আছেন হাসপাতালটির ব্রাদার মো. শফিউল। তিনি জানালেন, নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাঁর প্রশিক্ষণ নেই। তিনি চেষ্টা করছেন। কয়েকজনের নিবন্ধন করতে পেরেছেন। দু-একজনের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নম্বর নিচ্ছে না। একটু পর তিনি ব্যক্তিগত কাজের কথা বলে বুথ ছেড়ে চলে যান।

দুপুর ১২টার দিকে সেখানে আসেন ৭২ বছর বয়সী আবুল কালাম আজাদ চাকলাদার। তিনি এসে বুথের দায়িত্বরত শফিউলকে তাঁর এনআইডি দেন। কয়েকবার চেষ্টার পর তা ব্যর্থ হয়। আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাসায় নিবন্ধনের কাজ করেছি, ওটিপি এসেছে। তবে মেসেজ আসেনি। এখন হাসপাতালে নিবন্ধন করতে এলাম। বলছে, এনআইডি নিচ্ছে না। অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও হলো না। এই স্মার্টকার্ডেই তো সব কাজ করি। সব জায়গায় হয়, এখানে হলো না।’

এরপর বুথের দায়িত্বে থাকা শফিউল হাল ছেড়ে চলে যান। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে করোনা টিকা নিবন্ধনের জন্য আসেন হাসপাতালটির পাঁচজন নার্স। এসে তাঁরা নিজেরাই কম্পিউটারের সামনে বসে পড়েন। নিজে নিজে নিবন্ধন করার কাজ শুরু করেন।
অন্তত পাঁচজন নার্স জানালেন, তাঁদেরও নিবন্ধন করতে জটিলতা হচ্ছে। নতুন স্মার্টকার্ডে থাকা নম্বর নিবন্ধন করার সময় কাজে আসছে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা পুরোনো ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে নিবন্ধন করা যাচ্ছে।

হাসপাতালটির নার্সিং অফিসার শিল্পী মণ্ডল সহকর্মীদের সাহায্য নিয়ে অবশেষে নিবন্ধন করতে পারেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিবন্ধন বুথে যাঁদের থাকার কথা তাঁরা নেই। আমরা তো এগুলো বুঝি না। তবু চেষ্টা করছি।’

এর আগে টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশ যেমন ভালো করেছে, তেমনি কোভিড নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ বিরাট সফলতা পেয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে যা যা প্রয়োজন, প্রধানমন্ত্রী করছেন। সোহরাওয়ার্দীতে টিকাদান শুরু করতে আজকের আয়োজন।

সব কার্যক্রম শেষে টিকা নিচ্ছেন এক স্বাস্থ্যকর্মী। আজ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ এ বি এম মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত ১০টি বুথে করোনা টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা হাসপাতালে রাখা হয়েছে।

তবে হাসপাতালের পরিচালকের এ বক্তব্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, কেবল চারটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। বেলা দুইটার আগেই নারী বুথ তালা মেরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর নারীদের টিকা দেওয়া হয় পুরুষ বুথের ভেতরে থাকা দুটি কাপড়ঘেরা আচ্ছাদিত বুথে। বেলা তিনটার দিকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এ হাসপাতালে সস্ত্রীক টিকা নেন।

আজ বিকেল ৫টার দিকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে জানান, আজ সারাদিনে ১৩৬ জন পুরুষ ও ৭৭ জন নারীকে করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল থেকে স্বাস্থ্যকর্মীসহ নিবন্ধন করা ব্যক্তিদের টিকাদান কার্যক্রম চলবে। এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৫১২ জন এ হাসপাতাল থেকে টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন।