তিন কারণে দরিদ্র দেশের মানুষ পর্যাপ্ত টিকা পায়নি

ছবি: রয়টার্স

আন্তর্জাতিক সরবরাহের ঘাটতি ও অভ্যন্তরীণ বিতরণব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে আফ্রিকার দেশগুলোর মানুষ পর্যাপ্ত পরিমাণে করোনার টিকা পায়নি। চলমান মহামারির ইতি টানতে হলে আরও গবেষণা এবং গবেষণালব্ধ জ্ঞান প্রয়োগের সক্ষমতা গড়ে তোলা দরকার।

আজ শুক্রবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক আহমেদ মুশফিক মোবারক এসব কথা বলেন। আহমেদ মুশফিক মোবারক জুমের মাধ্যমে এই অধিবেশনে যুক্ত হয়েছিলেন। রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে তিন দিনের এ সম্মেলন শুরু হয়েছে।

আহমেদ মুশফিক মোবারক বলেন, উচ্চমাত্রায় বৈশ্বিক চাহিদা ও সীমিত সরবরাহের কারণে টিকার দাম দিতে সক্ষম ও ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো করোনার টিকা বেশি পেয়েছে।

তিনটি কারণে আফ্রিকার অধিকাংশ দেশসহ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের অনেক দেশ তাদের মানুষকে পর্যাপ্ত টিকা দিতে পারেনি: ‘আন্তর্জাতিক সরবরাহের ঘাটতি, টিকা নেওয়ার ব্যাপারে অনেক দেশের মানুষের মধ্যে দ্বিধা-সন্দেহ এবং কিছু দেশের অভ্যন্তরীণ বিতরণব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা। আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওনে টিকা নিতে গড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে এবং প্রতি ডোজ টিকার দাম সেখানে ছয় মার্কিন ডলারের বেশি।’

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের বক্তৃতার শিরোনাম ছিল, ‘নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর স্বাভাবিক অবস্থায় প্রত্যাবর্তন: কোভিড-১৯ মহামারি থেকে শিক্ষা’। তাতে তিনি সাতটি বিষয়কে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘মহামারির কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যায়। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মানুষের আয় ৯ থেকে ৮৭ শতাংশ কমে যেতে দেখা গেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মানুষের জীবনমানে। বিশ্বের দেশগুলোর জনমিতির কাঠামোতে ভিন্নতা আছে।

কিন্তু মহামারি মোকাবিলায় ধনী দেশগুলোর নেওয়া নানা পন্থা কিছু দরিদ্র দেশ অন্ধভাবে অনুসরণ করেছে। তথ্য-উপাত্ত এবং উদাহরণযোগ্য সফল উদ্যোগগুলোতে অসম্পূর্ণতা ছিল। অন্যদিকে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর বিশ্বকে অনেক কিছু দেওয়ার ছিল, তারা একে অন্যকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারত, একে অন্যের কাছ থেকে শিখতে পারত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সিডিসির মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও তথ্য-উপাত্তের দরকার ছিল যে গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলো এবং নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো সরবরাহ করতে পারত।অংশীদারত্ব বা যৌথ উদ্যোগ অনেক বড় ভূমিকা রাখে, এ ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তার দরকার। চলমান মহামারির ইতি টানতে হলে আরও গবেষণা এবং গবেষণালব্ধ জ্ঞান প্রয়োগের সক্ষমতা গড়ে তোলা দরকার।’

আহমেদ মুশফিক মোবারক সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্কের ভূমিকা বর্ণনা করার সময় মাস্ক নিয়ে তাঁর গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি নিয়মিত হাত ধোয়ারও প্রয়োজন আছে। কোভিড-১৯ মহামারি মানসিক স্বাস্থ্যের গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে।

বিআইডিএসের সম্মেলনে আজ বিভিন্ন অধিবেশনে আরও সাতটি প্রবন্ধ উপস্থাপন ও তিনটি পৃথক বক্তৃতা হওয়ার কথা আছে।