দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে 

দেশে করোনার নতুন উপধরন শনাক্ত হয়েছে। মাস্ক পরা ও ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ। 

ধীরগতিতে হলেও দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। দেশে করোনার নতুন উপধরন শনাক্ত হয়েছে। জনস্বাস্থ্যবিদেরা মনে করছেন, নতুন উপধরনের কারণে সংক্রমণ কিছুটা হলেও ঊর্ধ্বমুখী। 

গত ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল কম। প্রথম সাত দিনের কোনো দিন আক্রান্ত ৯ জনের বেশি ছিল না। চলতি জানুয়ারি মাসের প্রথম সাত দিনের প্রতিদিন আক্রান্ত ছিল ১০ জনের বেশি। আর সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার আক্রান্ত হয়েছেন ২২ জন। এই তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রের। 

গতকাল সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন প্রথম আলোকে
বলেন, ‘শনাক্তের যে সংখ্যা আমরা দেখছি, তা সংক্রমণের বাস্তব চিত্র নয়। মানুষ কোভিড-১৯ শনাক্তের পরীক্ষা করাচ্ছে কম, শনাক্ত হচ্ছে না। অনেক মানুষ উপসর্গ নিয়ে আছে, কিন্তু পরীক্ষা করায় না। আমরা সংক্রমণের কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি।’ 

মানুষ কোভিড-১৯ শনাক্তের পরীক্ষা করাচ্ছে কম, শনাক্ত হচ্ছে না। অনেক মানুষ উপসর্গ নিয়ে আছে, কিন্তু পরীক্ষা করায় না। আমরা সংক্রমণের কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি।
অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন, পরিচালক, আইইডিসিআর

বিশ্বের বেশ কিছু দেশের মতো বাংলাদেশেও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণ করোনার নতুন উপধরন জেএন.১। এটি করোনার অমিক্রন ধরনের একটি উপধরন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, জেএন.১ উপধরনটি নিয়ে উদ্বেগ আছে; কারণ, এটি অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে। তবে এর তীব্র উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও বলেছিল, যেসব অঞ্চলে বা দেশে শীতকাল আসন্ন বা শীতকাল চলছে, সেসব দেশে শীতকালীন ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ জেএন.১–এর সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে।

গত বৃহস্পতিবার দেশে জেএন.১ উপধরনের আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তের কথা জানিয়েছে আইইডিসিআর। করোনায় আক্রান্ত ছয়জনের নমুনা পরীক্ষায় পাঁচজনের জেএন.১ শনাক্ত হয়েছে। ঢাকা মহানগর ও ঢাকার পাশের একটি মহানগরের রোগীর নমুনা পরীক্ষায় এই উপধরন ধরা পড়েছে।

এর আগে ২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভায় জেএন.১ নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটি বৈশ্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার পাশাপাশি দেশে পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি জোরদার করার জন্য আইইডিসিআরকে পরামর্শ দেয়। এ ছাড়া হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার এবং বিদেশ থেকে আসা যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে সরকারকে পরামর্শ দেয় কমিটি।

প্রায় চার বছর আগে ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। করোনা শনাক্তের জন্য এ পর্যন্ত ১ কোটি ৬৩ লাখের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৪৬ হাজার ৭১১ জনের। শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে মারা গেছেন ২৯ হাজার ৪৭৯ জন। সর্বশেষ ১৪ জানুয়ারি মারা গেছেন ঢাকার একজন নারী। তাঁর বয়স ছিল ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে।

যাঁরা তৃতীয় ডোজ টিকা নিতে চান, তাঁদের দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার সদন এবং যাঁরা চতুর্থ ডোজ টিকা নিতে চান, তাঁদের তৃতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার সনদ টিকাকেন্দ্রে দেখাতে হবে। 

টিকার চতুর্থ ডোজ দিতে হবে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। সংস্থাটিকে অনুসরণ করে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি দেশের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। 

১৭ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শিগগির ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ টিকা দেওয়া হবে। এই তালিকায় আছেন: সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মী, ৬০ বছর বা এর বেশি বয়সী ব্যক্তি, ১৮ বছর বা এর বেশি বয়সী দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভোগা যেকোনো ব্যক্তি, স্বল্প রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ও গর্ভবতী নারী। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকা শহরের আটটি কেন্দ্রে তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ হিসেবে ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে। কেন্দ্রের তালিকায় আছে: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল এবং শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।

আরও পড়ুন

যাঁরা তৃতীয় ডোজ টিকা নিতে চান, তাঁদের দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার সদন এবং যাঁরা চতুর্থ ডোজ টিকা নিতে চান, তাঁদের তৃতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার সনদ টিকাকেন্দ্রে দেখাতে হবে। 

অন্যদিকে এত দিনেও ঝুঁকিপূর্ণ যাঁরা টিকার কোনো ডোজ নেননি, তাঁদেরও টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রাথমিকভাবে রাজধানীর মহাখালীর কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল ও মহানগর জেনারেল হাসপাতালে টিকা দেওয়া হবে।

১৬ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব জাহাঙ্গীর আলম জানান, আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্যাভির মাধ্যমে সরকার ফাইজার কোম্পানির আড়াই কোটি টিকা সংগ্রহ করছে। এপ্রিল মাসে এই টিকা দেওয়া শুরু হবে।