করোনাকালের খাদ্যাভ্যাস

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের এই সময় বাড়িতে থাকার কারণে অনেকের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসছে। কিন্তু এ সময় সবচেয়ে জরুরি সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকালের খাদ্যাভ্যাস ও আচরণ বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছে।

প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্যদ্রব্য কিনুন ও মজুত করুন। আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত খাদ্যপণ্য কিনলে খাদ্যের সুষম বণ্টন ও ক্রয়-বিক্রয় যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনই এতে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা বাড়ে। খাবারের অপচয়ও হয়।

টাটকা ও পচনশীল খাবার আগে শেষ করবেন (যেমন ফল, সবজি)। আর বাকি খাদ্যদ্রব্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ করবেন। সংরক্ষণের সময় মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেখে নিন।

বাড়িতে তৈরি খাবার খান। বাইরের খাবার যত কম খাবেন, ততই ভালো।

বাড়িতে থাকার কারণে এ সময় কায়িক শ্রম কমে গেছে। ফলে স্থূলতার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের জটিলতা স্থূলদের বেশি। তাই এখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খাবেন না।

এ সময় নানা রকমের খাবার তৈরির চেয়ে বরং খাদ্য সুরক্ষার দিকে মনোযোগ দিন বেশি। যেমন রান্নাঘর, তৈজসপত্র ও থালাবাসন ধোয়ার স্থান জীবাণুমুক্ত করা, রান্না ও কাঁচা জিনিস আলাদা রাখা, কাটা ও আস্ত খাবার আলাদা রাখা, হাত ধোয়া, কাঁচা মাছ-মাংস যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা, বাজার থেকে আনা প্যাকেট ও ব্যাগ জীবাণুমুক্ত করা ইত্যাদি। অতিরিক্ত রান্না করতে গিয়ে নিজেকে ক্লান্ত করে ফেলবেন না।

লবণ সীমিত খাবেন। নয়তো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। চিনির বেলায়ও তা–ই। স্ট্রেস বা মানসিক চাপ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস—দুটোই বাড়ায়। আর এগুলো অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়লে সংক্রমণের জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যাবে। ডেজার্ট হিসেবে ফলমূল, দই খান। ফলের রস পান করুন, তবে তা হতে হবে চিনি ছাড়া।

দৈনিক মোট ক্যালরির ৩০ শতাংশের কম চর্বিজাতীয় খাবার খাবেন। রান্নায় কম তেল ব্যবহার করুন। মাছ, বাদামে অসম্পৃক্ত ভালো চর্বি থাকে। সম্ভব হলে অলিভ অয়েল বা সানফ্লাওয়ার অয়েল ব্যবহার করুন। ভাজা–পোড়া, রেড মিট (গরু, ছাগলের মাংস), মাখন, ঘিসমৃদ্ধ খাবার, ট্রান্সফ্যাট (যেমন ডোনাট, পেস্ট্রি, কেক, বিস্কুট, পাই, পিৎজা ইত্যাদি) কম খাবেন।

আঁশযুক্ত খাবার যেমন গোটা শস্যের খাবার, লাল আটা, ওটস, লাল চাল, শাকসবজি, ডালে পেট ভালো থাকে। এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

প্রচুর পানি পান করুন। সাইট্রাস ফলের (যেমন লেবু, মাল্টা, কমলা) রস খান। শসা, পুদিনা, তরমুজ খেলে পানিশূন্যতা দূর হবে। চিনিযুক্ত কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংক, অতিরিক্ত কফি, চা পান করবেন না। এতে পানিশূন্যতা বাড়ে, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। তবে আদা বা লেবু দেওয়া চিনি ছাড়া লিকার চা পান করতে পারেন।

এই মহামারির কারণে খাদ্যসরবরাহ শৃঙ্খলে সমস্যার কারণে সারা বিশ্বেই খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই খাবার অপচয় করবেন না। বরং স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।