'করোনাকে জয় করে আবার রোগীদের সেবায় ফিরব'

ছবি: রয়টার্স
ছবি: রয়টার্স

করোনা মোকাবেলায় সামনের সারি ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক কানাডিয়ান স্বাস্থ্যকর্মী। মন্ট্রিয়াল জুইস জেনারেল হাসপাতালে এতদিন লড়েছেন করোনা আক্রান্ত রোগীদের সারিয়ে তুলতে। পাশাপাশি ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ওয়ার্ডের বাকি রোগীদের দেখভালের দায়িত্ব পালন করেছেন। বেশ কিছু দিন ধরে রোজ ১২ ঘণ্টা শিফট করেছেন। আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিবেদিত ছিলেন দায়িত্বে। গতকাল বিকেল থেকে নতুন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি এই নারী। কোভিড–১৯ পজিটিভ হওয়ার এবার যুদ্ধের কৌশল পাল্টাতে হচ্ছে তাঁকে। নিজের শরীরে ঢুকে পড়া করোনার সঙ্গেই এবার তাঁর লড়াই।

কানাডার শহর মন্ট্রিয়ালের জুইস হাসাপাতালের নানা বিভাগে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজ করেন জন বিশেক বাংলাদেশি। তাঁদের মধ্যে তিনজন গত মঙ্গলবার করোনা মোকাবেলায় নিজেদের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের একজন ছিলেন আক্রান্ত নারী।

আলাপচারিতায় এই নারী স্বাস্থ্যকর্মী জানান, দুই বছর হয় তিনি সেবিকা সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন হাসপাতালের বয়স্ক স্বাস্থ্যসেবা সেন্টারে। তাঁর বিভাগটি বয়স্কসেবা সেন্টার হলেও সেখানে নানা বয়সী রোগী রয়েছেন। সেদিনও তাঁর ওয়ার্ডে ছিলেন ১৮ জন কোভিড–১৯ পজিটিভ রোগী। তাঁর ওয়ার্ডের ধারণক্ষমতা ৩৬। ওয়ার্ডের বাকি রোগীদের স্থানান্তরিত করার সুযোগ কম। নিজেদের সুরক্ষাসামগ্রীও অনেকটা অপ্রতুল হয়ে যাচ্ছে। সামনের দিনগুলো আরও কঠিন হবে বলে মনে হচ্ছে।

তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবাদান করছেন। নিজে সংক্রমিত হওয়ার ভয় কাজ করে না?

উত্তরে তিনি বলেছিলেন, 'সংক্রমণের ভয়ে আক্রান্ত রোগীদের সেবাদানের মানসিকতা হারালে কি আমাদের চলবে? আমরা সবাই অচেনা এক পরিস্থিতির মোকাবেলা করছি। শুরুর দিকে একটা অস্বস্তি ছিল। ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।'

সেদিন তিনি বলেছিলেন, 'সম্প্রতি আমাদের তিন সহকর্মীর কোভিড–১৯ পজিটিভ হওয়ায় উৎকন্ঠা বাড়ে। পাশাপাশি আমাকে নিয়ে পরিবারের সদস্য, স্বজনদেরও ভয় বাড়ে। অনেক কাছের মানুষ পরিবারকে পরামর্শ দিয়েছেন, আমাকে কাজ থেকে বিরত রাখতে। আমার স্বামী ও সন্তান সব সময় আমাকে সাহস দিয়েছে। মনোবল হারাতে দেয়নি।'

তাঁর ভাষ্য, 'আর্মিতে নিজের গরজে আপনি নাম লেখালেন। দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ নিলেন। দেশের জন্য, মানবতার জন্য কাজ করবেন বলে। আর যুদ্ধে শুরু হয়ে গেলে কি ভয়ে পালিয়ে আসবেন?'

গতকাল সন্ধ্যায় এই স্বাস্থ্যকর্মীর কোভিড-১৯ পজিটিভ হাওয়ার খবর পেয়ে তাঁকে ফোন করি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, 'আসলে এত তাড়াতাড়ি এমন পরিস্থিতির সামনে নিজেকে দাঁড়াতে হবে ভাবিনি। নিয়ম মেনে পরিবার পাশে আছে। বাড়িতেই আছি। নিজেকে তৈরি করছি। করোনার সঙ্গে লড়াই তো চালিয়ে যেতে হবে। আমাকে আপনাদের প্রার্থনায় রাখবেন। আমি আশাবাদী, করোনাকে জয় করে আবার রোগীদের সেবায় ফিরব।'

ফোনে আত্মবিশ্বাসের হাসি দিয়ে তিনি বললেন, 'যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিক আক্রান্ত হয়নি, এমন যুদ্ধের কোনো ইতিহাস তো নেই।'

কথা হয় তাঁর সহকর্মী জুইস জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের সেবিকা সহযোগী শর্মিলা ধর এর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, 'আমরা দুজনেই এক হাসপাতালে কাজ করছি। ওর কোভিড পজেটিভ জেনে খারাপ লাগছে। তবে আমার বিশ্বাস, শারিরীকভাবে অসুস্থ বোধ করলেও মানসিকভাবে সে সাহসী যোদ্ধা।'

শর্মিলা ধর বলেন, নিজে কয়েকদিন ছুটিতে ছিলাম। আবার করোনা যুদ্ধের ময়দানে ফিরছি। এর কোনো বিকল্প নেই।

জুইস জেনারেল হাসপাতালের আরেক বাংলাদেশি স্বাস্থ্যকর্মীর করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে কয়েক দিন আগে। তাঁর পরিবারের কাছ থেকে জানা যায়, চিকিৎসকদের পরামর্শে বাড়িতেই মোটামুটি সুস্থ রয়েছেন তিনি।