করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা বেড়েছে

প্রতীকী ছবি।

দেশে গত ডিসেম্বর মাসে করোনাভাইরাস শনাক্তের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালু হয়। কিন্তু উপসর্গযুক্ত সন্দেহভাজন রোগী কম থাকায় গত মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত দৈনিক গড়ে ১১০টি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়। মার্চে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর থেকে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা বাড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এখন দৈনিক ৬০০টির বেশি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হচ্ছে। ফলে সব মিলিয়ে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি—তিন মাসে যত পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলোর চেয়ে বেশি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে গত এক মাসে। গত ৫ ডিসেম্বর থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয় ১০ হাজার ৫৮২টি। এরপর থেকে গত বুধবার পর্যন্ত ৩০ দিনে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে ১০ হাজার ৬৩৬টি। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে ২১ হাজার ২১৮টি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এখন দেশে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা হচ্ছে ২৩৭টি কেন্দ্রে। এগুলোর মধ্যে ৮২টি জায়গায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হচ্ছে। কারও শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে কি না, সেটি স্বল্প সময়ে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়। যেসব রোগীর জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলাব্যথার মতো উপসর্গ রয়েছে, শুধু তাঁদেরই অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়। সরকার গঠিত করোনার নমুনা পরীক্ষা সম্প্রসারণ নীতিমালা কমিটির প্রধান অধ্যাপক লিয়াকত আলী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আরও বেশি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে গত ৫ ডিসেম্বর থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ১ হাজার ১০০ জনের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়। তাঁদের মধ্যে ১০৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক সরদার রাশেদ মোবারক প্রথম আলোকে বলেন, কিছুদিন আগেও অ্যান্টিজেন পরীক্ষা ও করোনা শনাক্তের হার কম ছিল। দুই সপ্তাহ ধরে তা বাড়তি।

কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত না হলেও পরে আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় পজিটিভ আসছে। মানে হলো করোনা শনাক্ত হচ্ছে। সরকারের কোভিড-১৯ পরীক্ষা নীতিমালায় বলা হয়েছে, অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় কোভিড-১৯ সংক্রমিত ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ ফলও পাওয়া যেতে পারে। উপসর্গ থাকার পরও অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় নেগেটিভ এলে আরটি-পিসিআর বা জিন এক্সপার্ট পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে। আর অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় পজিটিভ হলে ওই ব্যক্তি নিশ্চিত পজিটিভ হিসেবে গণ্য হবেন।

নারায়ণগঞ্জে ৫৬১ জনের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করে ৩৬৪ জনের নেগেটিভ ফল আসে। পরে তাঁদের নমুনা আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হয়। আরটি-পিসিআরে এই ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ফেনীতে একইভাবে ৬৮ জনের নেগেটিভ আসার পর আরটি-পিসিআরে ৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। গাইবান্ধায়ও ২১ জনের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছে।

অবশ্য সব ক্ষেত্রে অ্যান্টিজেনে নেগেটিভ আসা ব্যক্তিদের পুনরায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হচ্ছে না। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা তানজিমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কিটের সংকটসহ নানা কারণে অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় নেগেটিভ আসা ব্যক্তিদের আবার আরটি-পিসিআরে পরীক্ষা সম্ভব হচ্ছে না।

যেসব জেলায় কিট না থাকায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হচ্ছে না, সেগুলোর একটি সুনামগঞ্জ। জেলাটিতে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হয় গত বছরের ২০ ডিসেম্বর। শুরুতে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ২৫০টি কিট দেওয়া হয়েছিল। কিট না থাকায় গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র এবং নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের (এনসিডিসি) পরিচালক রোবেদ আমিন বলেন, খুব শিগগির আরও ৬ লাখ অ্যান্টিজেন কিট দেশে আসবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গত মঙ্গলবার দেশে অ্যান্টিজেন পরীক্ষাকেন্দ্রের তালিকায় ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাম ছিল। তবে এসব জেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁদের জেলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হয়নি। অন্যদিকে কিট না থাকায় সুনামগঞ্জ জেলায় দেড় মাসের বেশি সময় ধরে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। লালমনিরহাটেও কিটের সংকট রয়েছে।

রাজশাহীর সিভিল সার্জন মো. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, জেলায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হয়নি; যদিও প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধিরা]