করোনার পর টিকাগ্রহীতাদের দ্বিতীয় ডোজ না নিলেও সমস্যা নেই: বিএসএমএমইউ উপাচার্য

যাঁরা অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে তাঁদের অন্য কোনো কোম্পানির টিকা দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকা আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিকল্প উৎস থেকে টিকা আনার চেষ্টা করছে সরকার।

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনার টিকাদান চলছে
ফাইল ছবি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পর যাঁরা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন, তাঁদের দ্বিতীয় ডোজের টিকা না নিলেও ‘সমস্যা নেই’। কারণ, তাঁদের শরীরে এক ডোজ টিকাতেই ‘যথেষ্ট পরিমাণে’ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায়। তাই তাঁদের দ্বিতীয় ডোজ টিকা না নিলেও চলে।

আজ রোববার বিএসএমএমইউয়ে নিজের কার্যালয়ে উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সঠিকভাবে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার মাধ্যমেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।

দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়ে ‘দুশ্চিন্তার কারণ নেই’ বলে মন্তব্য করেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য। এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, ‘যাঁরা অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে তাঁদের অন্য কোনো কোম্পানির টিকা দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।’

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা দিয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে গণটিকাদান শুরু হয়েছিল। সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ৩ কোটি ডোজ টিকা আনার চুক্তি হয়েছিল। সে অনুযায়ী প্রথম দুই চালানে ৭০ লাখ টিকা পায় বাংলাদেশ। এর বাইরে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে এসেছে আরও ৩৩ লাখ ডোজ টিকা।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতে বেসামাল পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর গত মার্চ থেকে টিকা রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করে দেশটির সরকার। এরপর থেকে সেরাম থেকে আর কোনো টিকা পায়নি বাংলাদেশ। এ কারণে এখন কয়েক লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়াসহ বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা পাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। এর মধ্যে চীন থেকে উপহার হিসেবে পাঁচ লাখ টিকা এসেছে। দেশটি আরও ছয় লাখ টিকা দেবে বলে জানিয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ
ছবি: সংগৃহীত

বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, প্রথম ডোজের টিকা নেওয়ার তিন থেকে চার মাস পরেও দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেওয়া যায়। যাঁরা প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন, এই সময়ের মধ্যেই তাঁদের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া সম্ভব হবে।

উপাচার্য বলেন, ভারত ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ যেসব দেশে টিকা আছে, তা পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় যোগাযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাক উৎপাদিত টিকা পাওয়া গেছে। ফাইজার কোম্পানির টিকা, রাশিয়ার টিকা স্পুতনিক–ভি পাওয়া যাবে। তাই ভ্যাকসিন নিয়ে ‘দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই’।

বিএসএমএমইউতে টিকা নিয়েছেন ৯৭ হাজার

বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন ৯৭ হাজার ১২১ জন। এর মধ্যে আজ ২৩ মে পর্যন্ত করোনার দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন ৪২ হাজার ৫৬৫ জন। আর গত ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত করোনার প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ৫৪ হাজার ৫৬৪ জন।

বিএসএমএমইউয়ের বেতার ভবনের পিসিআর ল্যাবে আজ পর্যন্ত ১ লাখ ৪৩ হাজার ২৯৬ জনের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়েছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এই ক্লিনিকে ৯৬ হাজার ৪৪৮ জন চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। একই হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আজ সকাল আটটা পর্যন্ত ৮ হাজার ৭৪৮ জন রোগী সেবা নিয়েছেন। এর মধ্যে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৯১৪ জন। আর সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৪ হাজার ১৮৯ জন। বর্তমানে ৫৭ জন রোগী ভর্তি আছেন এবং আইসিইউতে ৬ জন ভর্তি আছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৫ জন।