করোনার সংক্রমণরোধে অফিস-কারখানা বন্ধ, বাসে যাত্রী অর্ধেক করার প্রস্তাব

করোনার বিস্তার ঠেকাতে দেশে গত বছর অনেক জায়গায় করা হয়েছিল লকডাউন
ফাইল ছবি

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পুনরায় বেড়ে যাওয়ায় পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি সেবা–প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব অফিস ও কারখানা বন্ধ রাখা, উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা, জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা, গণপরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন, শপিংমল বন্ধসহ আরও কিছু প্রস্তাবনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
২৫ মার্চ এ সংক্রান্ত চিঠি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মীরজাদী সেব্রিনা।

অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আগামী দিনগুলোতে কী করণীয়, সে বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক যে কমিটি আছে, তাদের পরামর্শক্রমে এ করণীয় ঠিক করা হয়েছে।’

এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি অন্তত ৩ সপ্তাহ পালনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবনায়। তবে মন্ত্রণালয় তা বাস্তবায়ন করবে কিনা তা জানা যায়নি।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আগামী দিনগুলোতে কী করণীয়, সে বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক যে কমিটি আছে, তাদের পরামর্শক্রমে এ করণীয় ঠিক করা হয়েছে
অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা , স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন)

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য সব অফিস–শিল্পকারখানা বন্ধ রাখা। জরুরি সেবা–প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩৩ ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মস্থলে থাকা এবং অসুস্থ, গর্ভবতী ও ৫৫ বছরের ঊর্ধ্ব ব্যক্তিদের বাড়ি থেকে অফিস নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

এ ছাড়া সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়সহ যে কোনো উপলক্ষে জনসমাগম নিষিদ্ধ করা এবং কমিউনিটি সেন্টার বা কনভেনশন সেন্টারে বিয়ে, জন্মদিন, সভা, সেমিনার ইত্যাদি অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

উপাসনার ক্ষেত্রে ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ন্যূনতম উপস্থিতির কথা প্রস্তাবনায় রাখা হয়েছে। যেমন, মসজিদে প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজের সময় সর্বোচ্চ ৫ জন এবং জুম্মার নামাজের সময় ১০ জনের বেশি ব্যক্তিকে মসজিদে গিয়ে নামাজ পরতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

লকডাউনে ফাঁকা রাজধানীর ব্যস্ততম কারওয়ান বাজার
ফাইল ছবি

গণপরিবহনের ক্ষেত্রে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ধারণ ক্ষমতার অর্ধেকের বেশি যাত্রী পরিবহন না করা এবং উচ্চঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতে আন্তঃজেলা পরিবহন বন্ধ রাখা। অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী উড়োজাহাজেও ধারণক্ষমতার অর্ধেকের বেশি যাত্রী পরিবহন না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি আকাশপথ, জল ও স্থলপথেও সব আন্তর্জাতিক যাত্রী চলাচল সীমিত করা এবং দেশে ফেরার পর যাত্রীদের ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের অন্যতম স্থান বাজার। সে জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়, বিক্রয়ের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত স্থান বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে শপিংমল বন্ধ, পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

লকডাউন হওয়া মিরপুরের টোলারবাগ এলাকায় পুলিশের সতর্ক উপস্থিতি
ফাইল ছবি

হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোয় বসে খাওয়া নয়, তবে খাবার কিনে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
সশরীরে উপস্থিত হতে হয় এমন পরীক্ষা স্থগিত রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া খুব প্রয়োজনে বাইরে গেলে সবসময় যথাযথভাবে মাস্ক পরতে বলা হয়েছে। অন্যথায় আইনের আওতায় আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে প্রস্তাবে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাত ৮টার পর বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

প্রয়োজনে উচ্চ সংক্রমিত এলাকাতে লকডাউন করার প্রস্তাবও রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া প্রস্তাবনায়।

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যু ও সংক্রমণের হার ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম দফায় সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে সংক্রমণের হার না কমায় সাত দফায় ছুটি বাড়িয়ে টানা ৬৬ দিন বন্ধের পর ১৩ জুন খোলা হয়েছিল দেশের সব সরকারি-বেসরকারি অফিস, পুঁজিবাজারসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান।