করোনায় আরও ২৩৭ জনের মৃত্যু

করোনায় স্বজনদের কান্না বাড়ছেই
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

দেশে করোনা সংক্রমণে গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে আজ বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) আরও ২৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৪২০ জন।

আজ বুধবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশে করোনা সংক্রমণের সবশেষ পরিস্থিতি জানানো হয়। করোনায় মৃত্যু ও রোগী শনাক্ত আগের দিনের তুলনায় কমেছে। আগের দিন ২৬৪ জনের মৃত্যু এবং ১১ হাজার ১৬৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৪৪ হাজার ৪৩০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আগের পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ছিল ২৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সব মিলিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৮৬ হাজার ৭৪২। মোট মৃত্যু হয়েছে ২৩ হাজার ৩৯৮ জনের। আর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৭৫ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১৩ হাজার ৩১৩ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এরপর চট্টগ্রাম বিভাগে মারা গেছেন ৫৪ জন, সিলেট বিভাগে ২৩ ও খুলনা বিভাগে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিরা অন্যান্য বিভাগের।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। কয়েক মাসের মধ্যে এই ভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ।

এরপর বিভিন্ন সময়ে সংক্রমণ কমবেশি হলেও দুই মাসের বেশি সময় ধরে দেশে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। করোনার ডেলটা ধরনের দাপটে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যু কয়েক গুণ বেড়েছে। গত জুলাই মাসে দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ১৮২ জনের। প্রায় দেড় বছর ধরে চলা এই মহামারিতে এর আগে কোনো মাসে এত মৃত্যু দেখেনি বাংলাদেশ। এর আগে বেশি মৃত্যু হয়েছিল গত এপ্রিলে ২ হাজার ৪০৪ জনের।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত মাসের মাঝামাঝিতে ঈদুল আজহা ঘিরে আট দিন ছাড়া পুরো সময় কঠোর বিধিনিষেধ পালন করা হয়। সেই বিধিনিষেধ গতকালই শেষ হয়েছে। আজ সব অফিস–আদালত, ব্যাংক, রেস্তোরাঁ, দোকানপাট ও গণপরিবহনসহ প্রায় সব কিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এতদিন বাস–ট্রেন–লঞ্চে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহন করতে দেওয়া হয়েছিল। তবে এবার আর সেই বিধিনিষেধ আর নেই।

বর্তমানে সারা বিশ্বেই করোনার ডেলটা ধরনের দাপট চলছে। এরইমধ্যে বিশ্বের অন্তত ১৩৫টি দেশ ও অঞ্চলে করোনার অতিসংক্রামক এই ধরন ছড়িয়েছে। এর ফলে বিশ্বজুড়েই করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে।

সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় বর্তমানে বিশ্বের যেসব দেশে এক দিনে সবচেয়ে বেশি রোগী মারা যাচ্ছে, সেই তালিকায় নবম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সোমবার সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মৃত্যুর যে তালিকা করেছে, সেখানে বাংলাদেশের এই অবস্থান হয়েছে।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ইন্দোনেশিয়ায় ১ হাজার ৪৭৫ জনের। তারপরে মৃত্যু হয়েছে ব্রাজিলে ৯৯০ জনের। তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে রাশিয়ায় ৭৬৯ জনের।

এ সময় সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে ব্রাজিলে ৪৩ হাজার ৩৩ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে ইরানে ৩৯ হাজার ৬১৯ জন। রোগী শনাক্তের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত, ৩৫ হাজার ৪৯৯ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিশ্বে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ২০ কোটি ২৬ লাখ ৮ হাজার ৩০৬ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৪২ লাখ ৯৩ হাজার ৫৯১ জনের। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এরপরে বেশি মৃত্যু হয়েছে ব্রাজিল ও ভারতে।