করোনায় নারীর মৃত্যু বেশি ৫০-৬০ বছর বয়সীদের

■ ৬০ শতাংশের বেশি রোগী আসছেন রক্তে অক্সিজেন ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে।

■ ৪২ শতাংশ মৃত্যু হচ্ছে হাসপাতালে আসার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে।

■ ৬৬ শতাংশের উচ্চ রক্তচাপ, ৬২ শতাংশের ডায়াবেটিস, ২৬ শতাংশের দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ ছিল।

করোনার সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। ঠিক কারণ চিহ্নিত করা সম্ভব হলে করোনায় মৃত্যু কমানো সম্ভব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে।
করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি

করোনায় নারীর তুলনায় পুরুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। মৃত্যুও পুরুষের মধ্যে বেশি। তবে নারীদের মধ্যে ৫০–৬০ বছর বয়সীদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে। করোনায় মৃত্যু পর্যালোচনায় এই তথ্য পাওয়া গেছে।

রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যাওয়া ২০২ জন রোগীর তথ্য পর্যালোচনা করেছেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও চিকিৎসকেরা। তাতে দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালে পৌঁছানোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগীর মৃত্যু বেশি হচ্ছে। করোনায় মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে ভোগার ইতিহাস বেশি।

কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত এই হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা শুরু হয় ২০ এপ্রিল। গতকাল রোববার পর্যন্ত এই হাসপাতালে ২ হাজার ৪৯৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৬৯ জনের। গবেষকেরা ২০২টি মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন।

পর্যালোচনার প্রধান কারণ মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে জানা এবং সেই অনুযায়ী করোনায় মৃত্যু প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া। একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা প্রবন্ধ তৈরি করাও এই পর্যালোচনার অন্যতম উদ্দেশ্য।’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পর্যালোচনার পাশাপাশি পরিস্থিতি উন্নতি করতে পদক্ষেপও তারা নিয়েছে
রুবিনা ইয়াসমিন, মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক

এই পর্যালোচনার উদ্দেশ্য বা কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক রুবিনা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পর্যালোচনার প্রধান কারণ মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে জানা এবং সেই অনুযায়ী করোনায় মৃত্যু প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া। একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা প্রবন্ধ তৈরি করাও এই পর্যালোচনার অন্যতম উদ্দেশ্য।’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পর্যালোচনার পাশাপাশি পরিস্থিতি উন্নতি করতে পদক্ষেপও তারা নিয়েছে।

মহামারির সময় বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ ও আতঙ্কের অন্যতম কারণ ছিল করোনায় মানুষের মৃত্যু। বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকেরা নতুন এই ভাইরাসের চরিত্র বুঝে ওঠার আগেই বহু মানুষের মৃত্যু হতে থাকে। সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা বা ওষুধ না থাকায় বিভিন্ন দেশের সরকারকে করণীয় ঠিক করতে হিমশিম খেতে দেখা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিস্থিতিকে ‘দিশাহীন’ বলে বর্ণনা করে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মৃত্যু না থাকলে করোনা গুরুত্বহীন হয়ে পড়ত।

নারী-পুরুষের মৃত্যু

গতকাল সর্বশেষ ৩২ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে এ পর্যন্ত দেশে করোনায় মোট ৪ হাজার ৪৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৩ হাজার ৫০৪ জন বা ৭৮ শতাংশ এবং নারী ৯৭৫ জন বা ২২ শতাংশ।

মুগদা হাসপাতালের ২০২ মৃত্যুর মধ্যে নারী ৫৩ জন বা ২৬ শতাংশ। পুরুষ ১৪৯ জন বা ৭৪ শতাংশ। অধ্যাপক রুবিনা ইয়াসমিন বলেন, মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সী পুরুষ বেশি। অন্যদিকে মৃতদের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারী বেশি। তবে কেন এই পার্থক্য, তা জানা যায়নি। তিনি বলেন, এটা জানার জন্য বড় পরিসরে গবেষণা হওয়া দরকার।

কখন, কেন মৃত্যু

২০২টি মৃত্যুর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে। অর্থাৎ ৪২ শতাংশ মৃত্যু হচ্ছে হাসপাতালে আসার প্রথম দুই দিনের মধ্যে।

মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৬ শতাংশের উচ্চ রক্তচাপ ছিল, ৬২ শতাংশের ছিল ডায়াবেটিস। ২৬ শতাংশ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে ভুগছিলেন। কেউ কেউ একই সঙ্গে একাধিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন।

মৃতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলেন ছোট-বড় ব্যবসায়ী। এ ছাড়া ছিলেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, চিকিৎসক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, গৃহিণী, সাংবাদিক, কৃষিজীবী। মৃতদের মধ্যে দুজন শিশু ছিল। ৪৩ জনের পেশাগত পরিচয় জানতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা হাসপাতালে এসেছিলেন শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশি, ডায়রিয়া, বমি ভাব, মাথাব্যথার মতো শারীরিক সমস্যা নিয়ে।

অধ্যাপক রুবিনা ইয়াসমিন বলেন, করোনা রোগীর মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ রক্তে অক্সিজেন–স্বল্পতা। ৬০ শতাংশের বেশি রোগী হাসপাতালে আসছেন রক্তে অক্সিজেন ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে চলে যাওয়ার পর।

কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, করোনা চিকিৎসা সম্পর্কে সরকার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশেষায়িত চিকিৎসা সাময়িকী যেসব নির্দেশনা ও পরামর্শ দিচ্ছে, তা প্রয়োগ করার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হাসপাতালে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।