করোনায় ২৩১ মৃত্যু, শনাক্ত ১৪ হাজারের বেশি

দেশে করোনার ডেলটা ধরনের দাপটের মধ্যে শনিবার এভাবে গাদাগাদি করে ফেরি পার হয়ে ঢাকায় আসেন শ্রমিকেরা, এই যাত্রা সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাস সংক্রমণে গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা থেকে আজ রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে আরও ২৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৪ হাজার ৮৪৪ জন।

আজ রোববার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আগের দিনের তুলনায় আজ করোনায় মৃত্যু ও নতুন রোগী শনাক্ত দুটোই বেড়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৪৯ হাজার ৫২৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আগের দিন ২১৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৯ হাজার ৩৬৯ জন। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ছিল ৩০ দশমিক ২৪ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সব মিলিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৩২৮। মোট মৃত্যু হয়েছে ২০ হাজার ৯১৬ জনের। আর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১০ লাখ ৯৩ হাজার ২৬৬ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ৫৪ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা গেছেন ৫৩ জন, খুলনা বিভাগে ৪৪ এবং রংপুর বিভাগে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিরা অন্যান্য বিভাগের।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। কয়েক মাসের মধ্যে এই ভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ।

এরপর বিভিন্ন সময়ে সংক্রমণ কমবেশি হলেও দুই মাসের বেশি সময় ধরে দেশে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। করোনার ডেলটা ধরনের দাপটে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যু কয়েক গুণ বেড়েছে। গত জুলাই মাসে দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ১৮২ জনের। প্রায় দেড় বছর ধরে চলা এই মহামারিতে এর আগে কোনো মাসে এত মৃত্যু দেখেনি বাংলাদেশ। এর আগে বেশি মৃত্যু হয়েছিল গত এপ্রিলে ২ হাজার ৪০৪ জনের।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে গত মাসের প্রথম দুই সপ্তাহ দেশে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ পালন করা হয়। এ সময় সব ধরনের অফিসের পাশাপাশি গণপরিবহন চলাচলও বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু ২১ জুলাই ঈদুল আজহা উপলক্ষে এই বিধিনিষেধ আট দিনের জন্য শিথিল করা হয়। ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে আবার দুই সপ্তাহের লকডাউন চলছে।

ঈদের ছুটিতে লাখ লাখ মানুষের শহর থেকে গ্রামে যাওয়া এবং তাদের ফিরে আসায় সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি কমিটি ঈদ ঘিরে বিধিনিষেধ শিথিলের সরকারি সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছিল। ঈদের পরে করোনায় মৃত্যু ও রোগী শনাক্ত আগের চেয়ে বেড়েছে।

এরমধ্যে রোববার থেকে তৈরি পোশাকসহ সব ধরনের রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা চালু হয়েছে। গত শুক্রবার কারখানা খোলার ঘোষণা দিলে দেশের নানা প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মানুষ ঢাকার পথ ধরেন। বিধিনিষেধে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ট্রাক, পিকআপভ্যান, অটোরিকশায় গাদাগাদি করেন আসেন শ্রমিকেরা। ফেরিতে গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে পদ্মা পার হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এতে নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যানুসারে, করোনার ডেলটা ধরনের কারণে বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ বাড়ার পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও ব্যাপক বেড়েছে। বিশ্বে গত সপ্তাহের চেয়ে চলতি সপ্তাহে মৃত্যু বেড়েছে ২১ শতাংশ। আঞ্চলিকভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সংক্রমণ নতুন করে বাড়ছে। এভাবে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বিশ্বে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ২০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।

মহামারি শুরুর পর থেকে করোনার ধরনগুলোর মধ্যে ডেলটা সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। এটি আগের যেকোনো ধরনের চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশসহ এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৩২ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া এ ধরন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শনিবার পর্যন্ত বিশ্বে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৯ কোটি ৬৫ লাখ ৫৩ হাজার ৯ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৪২ লাখ ৪১২ জনের।

ডব্লিউএইচও বলেছে, সাত দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চসংখ্যক নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। শনিবার দেওয়া তথ্যে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, ৯০ হাজার ৬৬০ জন। এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় ৪০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে (মৃত্যুর তালিকায় অষ্টম)।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়, ১ হাজার ৭৫৯ জনের। এই সময়ে দেশটিতে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৪১ হাজার ১৬৮ জন (চতুর্থ)।

একই সময়ে শনাক্ত ও মৃত্যুর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ৪৮ হাজার ১৩ জন, মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৩৪৪ জনের।