কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ফাইজারের ১ কোটি ৩০ লাখ করোনার টিকা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

এএফপি প্রতীকী ছবি

করোনার টিকার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে বাংলাদেশ উপহার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের উৎপাদিত ১ কোটি ৩০ লাখ ডোজের বেশি টিকা পেতে যাচ্ছে। ওই টিকার একটি অংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের মজুত থেকে কোভ্যাক্সকে দিয়েছে। আর ফাইজারের বাকি টিকা কিনতে কোভ্যাক্সকে টাকা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে আগামী সপ্তাহে একটি চালানে কোভ্যাক্স থেকে ফাইজারের আড়াই লাখ ডোজের বেশি টিকার চালান বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

আজ শনিবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে কর্মরত কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, জনসংখ্যার আনুপাতিক ২০ শতাংশ হার ধরে কোভ্যাক্স থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশের ৬ কোটি ডোজের কিছু বেশি টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে। উপহারের ৬ কোটির পাশাপাশি কোভ্যাক্সের মাধ্যমে সরকার প্রায় সাড়ে ১০ কোটি ডোজ চীনা টিকা কিনছে। সেগুলো সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাকের টিকা। অর্থাৎ বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত যত টিকার প্রয়োজন তার বড় উৎসটা এখন কোভ্যাক্স।  

কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১ কোটি ৩৬ লাখ ডোজ করোনার টিকা ঢাকায় পৌঁছেছে। এর মধ্যে রয়েছে মডার্নার ৫৫ লাখ, সিনোফার্মের ৪০ লাখ, অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩০ লাখ ও ফাইজারের ১১ লাখ টিকা।

কোভ্যাক্স থেকে ফাইজারের টিকা পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেনেভায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মো. মোস্তাফিজুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কোভ্যাক্সের আওতায় বাংলাদেশের জন্য ফাইজারের ১ কোটি ৩১ লাখ ৫৭ হাজার করোনার টিকার ডোজের টিকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া তহবিল দিয়ে কোভ্যাক্স ৬০ লাখ ২০ হাজার টিকা ফাইজার থেকে সরাসরি কিনেছে। আর বাকি ৭১ লাখ ৩৭ হাজার ডোজ ফাইজারের টিকা যুক্তরাষ্ট্র তাদের মজুত থেকে কোভ্যাক্সকে দিয়েছে বাংলাদেশের জন্য। সেই হিসাবে ফাইজারের যে টিকা বাংলাদেশে যাচ্ছে তা যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া। এর মধ্যে আগামী সপ্তাহে একটি চালান যাওয়ার কথা রয়েছে।

মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কোভ্যাক্স থেকে উপহারের ৬ কোটি ডোজ করোনার টিকার মধ্যে ফাইজার ছাড়াও মডার্না, অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা পাওয়া গেলে সেটিও উপহারের তালিকায় যুক্ত করে বাংলাদেশকে দেওয়া হবে।

দরিদ্র দেশগুলোতে টিকাদান নিশ্চিতের বৈশ্বিক জোট গ্যাভি এ বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ১৯০ কোটি টিকা বিতরণ করতে চায়। আর কোভ্যাক্সের টিকা সংগ্রহের বড় উৎস ছিল ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। ভারতে করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হওয়ায় গত এপ্রিলে সেরাম টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এতে বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি কোভ্যাক্সও টিকা সংগ্রহে সংকটে পড়ে যায়। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে জুলাইতে গ্যাভি চীনের সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাকের টিকা কেনার জন্য আগাম ক্রয় চুক্তি করে।

এদিকে ভারতের করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় দেশটি আবার করোনার টিকা শিগগিরই রপ্তানি শুরু করার কথা জানিয়েছে। ফলে কোভ্যাক্স ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় সেরাম টিকা পাঠানো শুরু করবে।
জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এই প্রতিবেদককে বলেন, কোভ্যাক্সের টিকা সংগ্রহে যে ঘাটতি ছিল সম্প্রতি তা দূর হয়েছে। ফলে পরিকল্পনা অনুযায়ী এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিশ্রুত ৬ কোটি টিকা বাংলাদেশকে সরবরাহের বিষয়টি গ্যাভি নিশ্চিত করেছে।

কেনা টিকার চালান আসছে এ মাস থেকে

সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাক মিলিয়ে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ ১০ কোটি ৪৭ লাখ ৩৩ হাজার ডোজ করোনার টিকা কিনছে। চীনের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে ওই টিকা পাঠাতে চায়। এরই মধ্যে কেনাকাটার চুক্তির বিষয়গুলো চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এ মাস থেকে টিকার চালান বাংলাদেশে পাঠানো শুরু হবে।
টিকা কেনাকাটার সঙ্গে যুক্ত একাধিক সরকারি কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, টিকা কেনাকাটার জন্য চুক্তিসহ প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া বাংলাদেশ এর মধ্যেই শেষ করেছে। চলতি মাস থেকে টিকা পাঠানো শুরু করবে চীনের প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার কথা মাথায় রেখে সরকার প্রতি মাসে ২ কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে।

দেশের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকা দিতে হলে বাংলাদেশের ১৩ কোটি মানুষের জন্য দুই ডোজ করে ২৬ কোটি টিকা লাগবে। এর মধ্যে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য কোভ্যাক্সের ২০ শতাংশ বরাদ্দ অনুযায়ী বাংলাদেশের ৬ কোটি টিকা বিনা মূল্যে পাওয়ার কথা। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ১০ কোটি ৪৭ লাখ ৩৩ হাজার ডোজ টিকা কেনা হচ্ছে। চীন থেকে সরাসরি কেনা হচ্ছে সাড়ে ৭ কোটি ডোজ সিনোফার্মের টিকা। এ ছাড়া ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা হয়েছে ৩ কোটি ডোজ অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সাড়ে ২৭ কোটি ডোজ টিকা পাওয়া নিশ্চিত করেছে।