গ্রাম ও শহরের বস্তির বাসিন্দাদের এক–তৃতীয়াংশ টিকার নিবন্ধন সম্পর্কে জানেন না: গবেষণা

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) বৃহস্পতিবার ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন: উইলিংনেস অ্যান্ড প্র্যাকটিস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে।

গ্রাম ও শহরের বস্তির বাসিন্দাদের এক–তৃতীয়াংশ করোনাভাইরাসের টিকার নিবন্ধন সম্পর্কে অবগত নন বলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) বৃহস্পতিবার ‘কোভিড–১৯ ভ্যাকসিনেশন: উইলিংনেস অ্যান্ড প্র্যাকটিস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে। জানুয়ারির শেষ থেকে মার্চের শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে করা তিনটি জরিপের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষণাটি করা হয়। জাতীয় পর্যায়, তরুণ জনগোষ্ঠী ও শহুরে বস্তিবাসীদের মধ্যে করোনার টিকা নেওয়ার আগ্রহ কেমন, সে বিষয়টি বের করার চেষ্টা করা হয় গবেষণায়।

বিআইজিডি জানায়, জরিপে অংশ নেওয়া শহরের বস্তিবাসী এবং গ্রামের ৩৫ শতাংশ মানুষ টিকার নিবন্ধন সম্পর্কে জানেন না বলে জানিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে নিবন্ধন সম্পর্কে জানতেন ৬৫ শতাংশ মানুষ। আর টিকার জন্য নিবন্ধন করেন ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এই নিবন্ধনকারীদের মধ্যে টিকা নিয়েছিলেন ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

সার্বিকভাবে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৯ দশমিক ২ শতাংশ করোনার টিকা পেতে নিবন্ধন করেননি। তাঁদের মধ্যে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশের নিবন্ধনের শর্ত পূরণ হচ্ছিল না, ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ নিবন্ধন করতে পারবেন কি না জানতেন না এবং ২৭ দশমিক ৯ শতাংশ নিবন্ধনের উপযুক্ত হলেও তাঁরা করেননি।

যাঁরা টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন, তাঁদের মধ্যে গ্রামের ২০ শতাংশ মানুষ নিজেই অনলাইনে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেছেন এবং শহরের বস্তিতে এ হার ১৩ শতাংশ।

বিআইজিডি জানিয়েছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতে যখন টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়, তখন জনগণের টিকা গ্রহণের আগ্রহ বেশি ছিল, ৮২ শতাংশ। ৪৭ শতাংশ মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী নন বলে জানিয়েছেন। ৩১ শতাংশের টিকায় আস্থা নেই। কার্যকারিতা নিয়ে নিশ্চিত নন ২৯ শতাংশ মানুষ।

গ্রামে অবশ্যই এবং সম্ভবত টিকা নেবে এমন আগ্রহ বেশি, যা প্রায় ৮৪ শতাংশ এবং শহরে ৭৮ শতাংশ। এ ছাড়া ৮২ শতাংশ পুরুষ টিকা নিতে ইচ্ছুক এবং ৮৩ শতাংশ নারী।

যাঁরা টিকা নিতে অনাগ্রহী, তাঁদের অধিকাংশই জানিয়েছেন, টিকা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে তাঁরা মনে করেন না। এমন ধারণা শহরের বস্তিবাসীদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি, ৭৫ শতাংশ।

বিআইজিডির রিসার্চ ফর পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (আরপিজি) প্রধান গবেষক মেহনাজ রাব্বানী, গবেষণা সহযোগী অভিন্ন ফারুক এবং ইশমাম আল কুদ্দুস গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন।

ওয়েবিনারে বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে যে শহরের বস্তি অঞ্চল এবং তরুণ জনগোষ্ঠী টিকার নিবন্ধন নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রমে ‘হটস্পট’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের গ্লোবাল আরবানিজমের অধ্যাপক ড. ডায়ানা মিটলিন বলেন, স্বাস্থ্যসেবাকে ঘিরে তথ্য পৌঁছানো, প্রচারণা এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরির গুরুত্ব অনেক। এটা টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া উদ্বেগ ও নেতিবাচক মনোভাব কমাতে সহায়তা করে।
টিকাস্বল্পতার কারণে নিবন্ধন বিষয়ে প্রচারণা কমিয়ে আনা হয়েছে বলে সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাকিলা সুলতানা জানিয়েছেন।