চট্টগ্রামে করোনার নতুন ধরনের উপস্থিতি মেলেনি

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি: রয়টার্স

পুনরায় সংক্রমণ বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে—করোনাভাইরাসের এমন কোনো নতুন ধরনের (ভ্যারিয়েন্ট) উপস্থিতি আপাতত চট্টগ্রামে নেই বলে মনে করছেন একদল গবেষক।

গত এক বছরে চট্টগ্রামে করোনার ৩০০টি নমুনার স্পাইক প্রোটিনের জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে এমনটাই মনে করছেন গবেষকেরা।

গবেষণার অন্তর্ভুক্ত ৬৭টি নমুনার স্পাইক প্রোটিনের মধ্যে মিউটেশন (রূপ পরিবর্তন) রয়েছে। তবে তা থেকে নতুন ধরন সৃষ্টির আলামত পাওয়া যায়নি। স্পাইক প্রোটিনের এ ধরনের মিউটেশন টিকার কার্যকারিতায় কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেও গবেষকদের ধারণা।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) একদল গবেষক এই গবেষণাটি করেন। গবেষণায় নেতৃত্ব দেন সিভাসু উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ দাশ। গবেষণায় অংশ নেন অধ্যাপক শারমিন চৌধুরী, সহকারী অধ্যাপক ইফতেখার আহমেদ, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ত্রিদীপ দাশ, মলিকুলার বায়োলজিস্ট প্রনেশ দত্ত, ভেটেরিনারি চিকিৎসক মো. সিরাজুল ইসলাম ও তানভীর আহমদ নিজামী। আজ বুধবার সকালে এই গবেষণার ফলাফল প্রথম আলোর হাতে আসে।

গবেষণায় গত বছরের জুন থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৩০০ জন কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর নমুনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এসব নমুনার স্পাইক প্রোটিনের জিন সিকোয়েন্সের মিউটেশন নিয়ে গবেষণাটি করা হয়। পরে ঢাকার ডিএনএ সলিউশন লিমিটেডে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়।

সিভাসু উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, ‘গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল নমুনার স্পাইক প্রোটিনের জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য মিউটেশন ও উচ্চ সংক্রমণে সক্ষম করোনার সম্ভাব্য নতুন ধরনের উপস্থিতি শনাক্ত করা। গবেষণায় মিউটেশনের প্রমাণ পাওয়া গেলেও ভাইরাসের নতুন ধরনের উৎপত্তির সম্ভাবনা দেখা যায়নি। তবে কোনো দেশ থেকে নতুন ধরন যেকোনো সময় যে এখানে আসবে না, তার নিশ্চয়তা নেই। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’

গবেষকদল জানায়, চীনের উহানে প্রথম নভেল করোনাভাইরাস শনাক্তের পর থেকে এখন পর্যন্ত ভাইরাসটি অনেকবার রূপ পরিবর্তন করেছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হয়। বছরের বিভিন্ন সময় চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভাইরাসটির তিনটি উল্লেখযোগ্য ধরনের (আলফা, বিটা, ডেলটা) সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশনের কারণে এসব ধরনের সংক্রমণ ও মৃত্যু হারে ভিন্নতা দেখা যায়। পাশাপাশি ভাইরাসের নতুন ধরনের উপস্থিতিরও সম্ভাবনা থাকে।

গবেষকেরা জানান, গবেষণায় দেখা যায়, ৩০০ টির মধ্যে ৬৭টি নমুনার স্পাইক প্রোটিনের মধ্যে মিউটেশন রয়েছে। যার মধ্যে নিউক্লিওটাইডের সিঙ্গেল মিউটেশন হয়েছে ৪৩টি নমুনায়। একের অধিক নিউক্লিওটাইডের মিউটেশন হয়েছে ২৪টি নমুনায়। এসব মিউটেশনের কারণে স্পাইক প্রোটিনের ৪৯টি বিভিন্ন স্থানে এমাইনো অ্যাসিডের পরিবর্তন হয়েছে। তবে বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ দ্বারা স্পাইক প্রোটিনের গঠনের উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি।

জানতে চাইলে গবেষক অধ্যাপক শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের নিয়মিত স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশন বিশ্লেষণ করে অধিক কার্যকরী টিকা ও অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ উৎপাদন করা সম্ভব। যা করোনা প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। গবেষণার ফলাফলে আমরা নিউক্লিক অ্যাসিডের মিউটেশনের কারণে স্পাইক প্রোটিনের গঠনে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন দেখিনি। স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশনের কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলে করোনার নতুন কোনো ধরনের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়নি। এ ছাড়া স্পাইক প্রোটিনের এ ধরনের মিউটেশন টিকার কার্যকারিতায় কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেই আমরা মনে করি।’