চীন চাইলে টিকার কো–প্রডাকশনে যেতে পারি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন
ছবি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘আমাদের এই টিকা তৈরির সামর্থ্য আছে। আমরা তাদের (চীনের) সাহায্য নিয়ে এই টিকা তৈরি করতে পারি। চাইলে আমরা কো-প্রডাকশনে যেতে পারি। আমরা “র ম্যাটেরিয়াল” এনে ওই টিকা বাংলাদেশে তৈরি করতে পারি। আর এটা করা সম্ভব হলে তা দুই দেশের জন্যই উইন-উইন সিচুয়েশন থাকবে।’
চীনের কাছ থেকে পাওয়া সিনোফার্মের পাঁচ লাখ ডোজ টিকা হস্তান্তর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাংলাদেশ নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছে উপহারের এই টিকা হস্তান্তর করেন। রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এই টিকা হস্তান্তর করা হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমরা চীনের কাছ থেকে প্রথমেই টিকা পেতে চাইনি। কারণ, চীনের টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদিত ছিল না এবং আমাদের কিছু নীতিমালা আছে। ডব্লিউএইচওর অনুমোদন ছাড়া আমরা টিকা ব্যবহার করি না। এই নীতিমালা নতুন নয়। ফলে, আমরা দেরি করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আনন্দিত এ জন্য যে চীন আমাদের টিকা উপহার দিয়েছে। আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমরা সামনে আরও টিকা পেতে কাজ করছি।’

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে আমরা বাংলাদেশের কাছ থেকে চিকিৎসাসংক্রান্ত সরঞ্জাম পেয়েছিলাম। তখন চীনের জন্য সেই সহযোগিতা খুব প্রয়োজন ছিল। ঠিক এই কক্ষেই সেই সাহায্য আমার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। আমি সেই সময় বলে বোঝাতে পারিনি যে আমরা বাংলাদেশের প্রতি কতখানি কৃতজ্ঞ।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আজ প্রায় এক বছর পর করোনাভাইরাসের মহামারি মোকাবিলায় আমরা আরেকটি মাইলফলক প্রত্যক্ষ করছি। চীনে করোনার টিকার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এরপরও চীন সরকার তার বন্ধুরাষ্ট্র বাংলাদেশের সহযোগিতার জন্য হাত বাড়িয়েছে, সাহায্যের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।’ এই টিকা হস্তান্তরের সময় বাংলাদেশের নাগরিকদের ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘এই দুঃসময়ে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও দেশটির নাগরিকদের ধন্যবাদ জানাই। আমরাও চীনের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম, যখন চীনের উহানের করোনা ছড়িয়েছিল।’

এর আগে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাইট এস-৩ এজিএফ গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা ১২ মিনিটে করোনাভাইরাসের পাঁচ লাখ টিকা আনতে চীনের উদ্দেশে যাত্রা করে। এরপর আজ বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সিনোফার্মের টিকা ও এডি সিরিঞ্জ নিয়ে রাজধানীর কুর্মিটোলায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে অবতরণ করে উড়োজাহাজটি।

সিনোফার্ম চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। গত বছরের জানুয়ারিতে বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রডাক্টস বিবিআইবিপি-করভ নামে একটি টিকা তৈরি করে। সে বছর তিন ধাপে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষে সিনোফার্মের টিকাটি সেপ্টেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এবং নভেম্বরে চীনে লক্ষাধিক মানুষকে দেওয়া হয়।

এ বছরের ৭ মে জরুরি ব্যবহারের জন্য সিনোফার্ম টিকার অনুমোদন দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই টিকার কার্যকারিতা ৭৮ দশমিক ১ শতাংশ। পশ্চিমা দেশগুলোর বাইরে একমাত্র চীনই এককভাবে দুটি টিকা সফলভাবে উদ্ভাবনের দাবি করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সিনোফার্মের টিকা।