টিকা উৎপাদনে ৩টি কোম্পানির সক্ষমতা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত

করোনার টিকা
ছবি: রয়টার্স

দেশে করোনার টিকা উৎপাদনের জন্য প্রাথমিকভাবে তিনটি ওষুধ কোম্পানির সক্ষমতা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোম্পানিগুলো হচ্ছে ইনসেপ্‌টা ফার্মাসিউটিক্যালস, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস ও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা সংগ্রহ ও বিতরণবিষয়ক আন্তমন্ত্রণালয়সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির গতকাল বুধবার প্রথম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। কমিটি এই তিনটি কোম্পানির উৎপাদন সক্ষমতার ভিত্তিতে স্কোরিংয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে বলেছে।

কমিটির প্রধান স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব বলেন, টিকার চাহিদা নিরূপণ, নিরাপদ ও কার্যকর টিকা নির্বাচন, টিকা সংগ্রহ, বিতরণ, দর-কষাকষির মাধ্যমে যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে কার্যপরিধির আলোকে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে।

বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে রাশিয়ার টিকা স্পুতনিক–ভি কেনার সরবরাহ চুক্তির জন্য বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে সম্ভাব্য পর্যবেক্ষণ সমন্বিত করে দ্রুত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এবং দর–কষাকষি করে সরবরাহ চুক্তি চূড়ান্ত করার কথা বলা হয়। এ ছাড়া বয়সভিত্তিক ৮০ শতাংশ জনসাধারণকে ধাপে ধাপে টিকার কর্মপরিকল্পনার আওতায় আনা, আপাতত ৬ কোটি টিকা (প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ) দ্রুত সংগ্রহের পরিকল্পনা এবং একক উৎসের পরিবর্তে বহুমাত্রিক উৎস থেকে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য কম ও যৌক্তিক মূল্যে টিকা সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত হয়।

এসব সিদ্ধান্তের বিষয়ে বক্তব্য জানতে স্বাস্থ্য বিভাগের সচিবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

স্বাস্থ্য বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে ৩ মে গঠিত সাত সদস্যের এই কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন মহাপরিচালক, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক পর্যায়ের একজন প্রতিনিধি এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব। গতকালের বৈঠকে এই কমিটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, সিপিটিইউর মহাপরিচালক, আইন ও বিচার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালককে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়।

এই কমিটি দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান ধারা ও ভবিষ্যৎ প্রক্ষেপণের আলোকে টিকার চাহিদা নিরূপণ করবে। টিকার মূল্য, প্রাপ্যতা, কার্যকারিতা ইত্যাদি বিবেচনায় নিরাপদ ও কার্যকর হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত টিকার সম্ভাব্য সব উৎস থেকে বাংলাদেশের জন্য উপযোগী টিকা নির্বাচন করবে।

এর আগে গত ১২ এপ্রিল পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে দেওয়া এক চিঠিতে জানিয়েছিলেন, রাশিয়া স্পুতনিক-ভি টিকা বাংলাদেশে পাঠানো, এ দেশে উৎপাদন ও ব্যবহারের বিষয়ে কিছু তথ্য জানতে চায়। তার মধ্যে ছিল বাংলাদেশে টিকার চাহিদা কত এবং কোন কোন প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে সক্ষম।

এরপর ১৩ এপ্রিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে টিকা উৎপাদন করতে পারে, এমন তিন প্রতিষ্ঠানের নাম পাঠান। তখন তিনি বলেছিলেন, ইনসেপ্‌টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের স্পুতনিক-ভি উৎপাদনের অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। প্রতিষ্ঠান তিনটি এক থেকে দুই মাসের মধ্যে উৎপাদনে যেতে পারবে।