ট্রাম্পের অভিবাসনে বিধিনিষেধ: সাময়িক নাকি দীর্ঘস্থায়ী

অভিবাসনকে সংকুচিত ও বাধাগ্রস্ত করতে ট্রাম্পের একের পর এক নির্বাহী আদেশ আসছে। করোনা মহামারির সুযোগ নিয়ে এবারে খড়্গ এসেছে ওয়ার্কার্স ভিসার ওপর। তবে মহামারির সুযোগ নিয়ে আমেরিকার অভিবাসন প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি নতুন কিছু নয়। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, আমেরিকায় অতীতে এ রকম বড় বড় সংকটের সময়ে অভিবাসন সংকোচন এবং সীমিতকরণের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।

২০ জুন ফক্স নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইমিগ্রেশন বিষয়ে নতুন এই নির্বাহী আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি বিষয়টি নিয়ে আগেভাগেই বিস্তারিত বলতে চাননি। দেশটির অভিবাসন ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এই মহামারিতে আরও বেশি বিধিনিষেধ এবং নির্বাহী আদেশ জারির মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াকে কঠিনতর করা হচ্ছে।

ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও সঞ্চালক ডেবোরা আমোস বলেন, ট্রাম্পের আরোপ করা এই বিধিনিষেধ দেশটিতে এক শ বছর আগে ঘটে যাওয়া মহামারিকালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।

ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিশেষজ্ঞ ড্যান টিচেনর বলেন, দেশের সংকটময় মুহূর্তে অভিবাসন বিষয়ে এমন কঠোরতা আরোপ নতুন নয়। তিনি ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লুর সময়ের ঘটনাবলির প্রতি ইঙ্গিত দেন। সেই মহামারিতে পাঁচ লাখের বেশি আমেরিকানের মৃত্যু হয়। তিনি এটিকে ইতিহাসের স্পষ্ট পুনরাবৃত্তি বলে উল্লেখ করেন। অথবা মার্ক টুইনের ভাষায় ইতিহাসের শুধু পুনরাবৃত্তিই হয় না, ইতিহাস প্রায়ই ছন্দ মেলায়।

১৯১৮ সালের মহামারিকালে বিশ্বযুদ্ধ ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় দেশ যখন সংকটে ছিল, তখন কংগ্রেস ছিল নেটিভিস্ট নামের একটি রাজনৈতিক আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণে। তখনো তারা দেশের অভিবাসনকে টার্গেট করেছিল। তখন পূর্ব ইউরোপীয়দের তারা নিকৃষ্ট মনে করত। সেসব দেশের অভিবাসীদের সংখ্যা কীভাবে কমানো যায়, সে লক্ষ্যে কাজ করেছিল তারা। অবশ্য অন্যান্য দেশের অভিবাসীদেরও বিধিনিষেধের আওতায় এনেছিল। ধারণা আর ভাবটা তখন এমন ছিল, অভিবাসীদের কারণে দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও উন্নয়ন ব্যাহত হয়ে যাচ্ছে। আজকের প্রেক্ষাপটেও একই ধারণার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।

১৯১৮ সালের মহামারিতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বিশ্বযুদ্ধের কারণে অভিবাসীদের সংখ্যা এমনিতেই কমে গিয়েছিল। ইতিহাস বিশেষজ্ঞ অ্যালেন ক্রাউট বলেন, তখন নতুন দেশ গড়ার যুদ্ধে অভিবাসীরাও ছিলেন সম্মুখভাগে।
অভিবাসীরা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি, এটা প্রমাণ করা কঠিন। বরং এরা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সহায়ক শক্তি বলে প্রমাণিত। কিন্তু টিচেনর বলেন, ১৯২০ সালে যখন অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়, কংগ্রেসের নেটিভিস্ট এবং তাদের অভিবাসীবিরোধী মিত্রদেরই জয় হয়েছিল। অর্ধশতাব্দী ধরে চলে আসা নীতির আমূল পরিবর্তন হয়েছিল। অভিবাসনসংক্রান্ত রীতিনীতিতে কঠোর সীমাবদ্ধতা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তখন থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত এ রকম চলেছিল।

অধুনা কোভিড-১৯ মহামারি সময়ে আমেরিকা তার দেশের সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। এটি অনুসরণ করেছে অন্যান্য দেশও। ট্রাম্প প্রশাসন দেশটির দক্ষিণ সীমান্তে সম্ভাব্য অভিবাসীদের আশ্রয় আবেদনও বন্ধ করে দেয়। শরণার্থীদের পুনর্বাসন পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেয়। উপরন্তু এপ্রিল মাসে ট্রাম্প অস্থায়ীভাবে আমেরিকার অভিবাসন প্রত্যাহার করে নেন।

তবে স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে ট্রাম্প এটি করেননি। বরং তিনি এটা করেছেন চাকরিক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা এড়াতে। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এ ব্যবস্থা নিয়েছেন এ উদ্দেশ্যে। যেন মহামারি–পরবর্তী চাকরির বাজারে আমেরিকানরা লাইনে প্রথম থাকতে পারেন।

‘জোলবার্গ সেন্টার অব মাইগ্রেশন অ্যান্ড মোবিলিটি’–এর প্রধান অ্যালেক্স অ্যালেনিক্বফ বলেন, আসলে ট্রাম্পের এই মেয়াদে তাঁর যা করার অভিপ্রায় ছিল, করোনাভাইরাস মহামারি তাঁকে সেটি করার ক্ষেত্রে সুযোগ এনে দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঐতিহাসিকভাবেই মহামারিকে অভিবাসনে কাটছাঁট করার একটি মোক্ষম সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্যের দোহাই দিয়ে আজও এই কোভিড-১৯ মহামারিকে ব্যবহার করে অভিবাসনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

ডেবোরা আমোস বলেন, অভিবাসনে এসব বিধিনিষেধকে অস্থায়ী বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। তবে ইতিহাসে দেখা গেছে, মহামারির সুযোগ নিয়ে আরোপিত এসব বিধিনিষেধ দীর্ঘদিন পর্যন্ত চলতে থাকে।