নতুন কোনো উদ্ভাবনে অনুসৃত নীতিমালা: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

আমরা কি নিজেকে জিজ্ঞাসা করি?

ক.

আমরা কতটা জানি?

খ.

আমরা কতটা অনুধাবন করতে পারি?

গ.

আমরা সবাই দায়ী কতটা?

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, নতুন কোনো আবিষ্কার গ্রহণ বা বর্জন করার জন্য যে অবকাঠামো থাকা দরকার, তা বাংলাদেশের আছে। বর্তমানে ডিজিডির অধীনে দেশে ৪৭টি জেলা কার্যালয় রয়েছে। ডিজিডির সব কর্মকর্তা ওষুধ আইন অনুসারে ‘ড্রাগ ইন্সপেক্টর’ হিসেবে কাজ করেন এবং লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষকে তার দায়িত্বগুলো যথাযথভাবে পালনে সহায়তা করেন। এ ছাড়া ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটি (ডিসিসি), কাঁচামাল এবং সমাপ্ত ওষুধ আমদানির জন্য স্থায়ী কমিটি, মূল্য নির্ধারণ কমিটি এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত অন্য কয়েকটি সম্পর্কিত কমিটি লাইসেন্সের পরামর্শের জন্য রয়েছে।

এটা সত্যি, আমাদের অবকাঠামো থাকলেও তা সঠিকভাবে চালানোর জন্য সঠিক লোকবল নেই। এখানে একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। আপনার ব্যক্তিগত গাড়ির কথা ধরুন। এটার সমস্যা হলে আপনি মেরামত করবেন বা নতুন আরও একটি গাড়ি কিনবেন। কিন্তু আপনার যদি এই গাড়ি চালানোর মতো চালক না থাকে অথবা চালক যদি ঠিকমতো গাড়ি চালাতে না জানেন বা রাস্তাঘাট ভালোমতো না চেনেন, আপনার নতুন গাড়ি থাকা সত্ত্বেও আপনি আপনার গন্তব্যে ঠিকমতো যেতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, অনভিজ্ঞ চালক হলে আপনার এই গাড়ি আবার দুর্ঘটনায় পড়তে পারে।

বাংলাদেশের সমস্যা হলো ঠিক এই জায়গায়। আমাদের ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন আছে, কিন্তু তা চালানোর জন্য সঠিক লোকবল নেই। নতুন উদ্ভাবন করতে কী কী নিয়ম অনুসরণ করতে হয়, তা আমাদের ঔষধ প্রশাসন হয়তো জানে না। একটা আবিষ্কার কীভাবে গবেষণা থেকে বাজার পর্যন্ত আসবে, তা হয়তো তাঁরা জানেন না।

গণস্বাস্থ্য চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের যে সিস্টেম আছে, তা কতটা ভঙ্গুর। তারা একটি কিট তৈরি করে দাবি করছে এই কিট শতভাগ কার্যকর। কিন্তু তারা ঠিকমতো টেস্ট করেছে কি না বা করলেও টেস্ট ফলাফল উপস্থাপন করল কি না, এ ব্যাপারগুলোতে আমাদের ঔষধ প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত ছিল।

হ্যাঁ মানছি, সরকারের উচ্চপর্যায় এই বিষয় নিয়ে না ভাবতেই পারে। কিন্তু ঔষধ প্রশাসন গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবিত কিটের গুণাগুণ এবং সম্ভাব্যতা নিয়ে সরকারকে দিকনির্দেশনা দিতে পারত। সমস্যা হলো, আমাদের সরকারের এ ধরনের লোকবলের সংকট প্রবল।

গণস্বাস্থ্যের উচিত ছিল একটি পাইলট স্টাডি করা। তারা ২০-৮০ জন সুস্থ এবং কোভিড-১৯-এর নমুনা টেস্ট করে তার ফলাফল ঔষধ প্রশাসনে উপস্থাপন করতে পারত। আমরা ঠিক জানি না, এটা তারা করছে কি না। এ ধরনের কোনো রিপোর্ট আমরা দেখিনি।

তবে হ্যাঁ, ইমারজেন্সি কন্ডিশনে সরকার চাইলে বাধ্যতামূলক যে নিয়ম আছে, তা থেকে সরে এসে গণস্বাস্থ্যকে সহায়তা করতে পারত। সরকার বলতে পারত, যদি তোমাদের কিট ৯০ শতাংশ সংবেদনশীল এবং সুনির্দিষ্ট হয়, তবে আমরা খুব দ্রুতই অনুমোদন দেব। এটা নতুন কিছু উদ্ভাবনে মানুষকে অনুপ্রাণিত করত। যদিও হেলথ সেক্টরে ব্যবহৃত কোনো উদ্ভাবনের মানের সঙ্গে কোনোভাবেই কম্প্রোমাইজ করা উচিত নয়।

এটা ঠিক, গণস্বাস্থ্যের স্বচ্ছতা আরও বাড়ানো উচিত। যে ব্যাপারগুলো নিয়ে সংশয় আছে, তা প্রকাশ করা উচিত। এমনও হতে পারে, তারা সিস্টেম সম্পর্কে জানে না। আবার এটাও হতে পারে, তারা দ্রুত কিট বাজারে আনতে চায়, এ জন্য সিস্টেম বাইপাস করতে চায়। তাদের এটাও ভেবে দেখা দরকার যে তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুসরণ করে মেথোডলজি করেছে কি না? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোন পরিপ্রেক্ষিতে অ্যান্টিবডি টেস্ট করার পরামর্শ দিয়েছে, তাও তাদের মাথায় রাখা দরকার।

এটা মনে রাখতে হবে একটা নতুন আবিষ্কারের ক্ষেত্রে তিনটি গ্রুপের সম্পর্ক থাকে: ভোক্তা, ডিসকভারি ইউনিট এবং অনুমোদন সংস্থা। অনুমোদন সংস্থার কাজ হলো, কোন নতুন আবিষ্কার কতটা সাধারণ মানুষের (ভোক্তা শ্রেণি) জন্য উপযোগী, তা ভালোভাবে যাচাই করা। আর এটা যেহেতু স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত, তাই এর মানের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করা অনুচিত। আমরা যত দ্রুত এই কানেকটিং নেটওয়ার্ক আমাদের দেশে কার্যকর করতে পারব, ততই আমাদের জন্য মঙ্গল।

লেখক: ড. জুবায়ের রহমান, এনআইএইচ, মেরিল্যান্ড এবং ড. মো. ফজলুল করিম, পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, পেনসেলভানিয়া, যুক্তরাষ্ট্র। [email protected]