পরীক্ষা বাড়লেও এখনো তলানিতেই বাংলাদেশ

করোনা পরীক্ষার জন্য মানুষের দীর্ঘ লাইন। রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
ফাইল ছবি

ছয় লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে বাংলাদেশসহ ৩৬টি দেশে। এর মধ্যে জনসংখ্যা অনুপাতে সবচেয়ে কম করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা হচ্ছে বাংলাদেশে। এখন প্রতি ১০ লাখে ২৯ হাজার ৯৬৯ জনের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন পরীক্ষা হচ্ছে পাকিস্তানে, প্রতি ১০ লাখে ৪৭ হাজার ৬৭৯ জনের।

এদিকে সরকার এক মাস আগে সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও করোনার অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি পরীক্ষার অনুমোদন দিয়েছে। সরকারিভাবে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চলমান থাকলেও অ্যান্টিবডি পরীক্ষার বিষয়ে এখনো কোনো অগ্রগতি নেই।

করোনা মহামারির শুরু থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে আসছে, করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক শর্ত রোগী শনাক্ত করা। পরীক্ষা যত বেশি হবে, আক্রান্ত ব্যক্তিও তত বেশি শনাক্ত হবে। দেশে প্রথমবারের মতো গত ১৬ মার্চ এক দিনে ২০ হাজারের বেশি করোনা পরীক্ষা হয়। আর ৪ এপ্রিল প্রথমবারের মতো এক দিনে ৩০ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ মাসে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৪৯ জনের। সংক্রমণ শুরুর পর থেকে যা এক মাসে সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষার রেকর্ড। ৭ এপ্রিল এক দিনে ৩৪ হাজার ৬৩০ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়, যা এখন পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ। কয়েক দিন ধরে দৈনিক ৩০ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে।
পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস শুরু থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। গতকাল সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডোমিটারসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বেশি রোগী শনাক্ত ৩৬টি দেশের মধ্যে পরীক্ষার দিক থেকে তলানিতে রয়েছে বাংলাদেশ। আর জনসংখ্যা অনুপাতে পরীক্ষার দিক থেকে ২২১টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭১তম।  

ওয়ার্ল্ডোমিটারসের হিসাব অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে কম পরীক্ষা হচ্ছে শুধু আফগানিস্তানে। আর সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা হচ্ছে মালদ্বীপে। সাড়ে ৫ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে ৬ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি করোনা পরীক্ষা হয়েছে। প্রতি ১০ লাখের হিসাবে দেশটিতে পরীক্ষা হয়েছে ১২ লাখ ১৪ হাজার ১০০ জনের। ভারতে প্রতি ১০ লাখে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৪৭ জনের পরীক্ষা করা হচ্ছে।
দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানায় সরকার। সংক্রমণের শুরুর দিকে দেশে শনাক্তকরণ পরীক্ষার সংখ্যা ছিল একেবারেই কম। গত বছরের মে মাসে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে গড়ে ৮০ জনের পরীক্ষা হয়েছিল।
বর্তমানে দেশে ২৪৩টি পরীক্ষাকেন্দ্রে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা হচ্ছে। এর মধ্যে ১২১টি কেন্দ্রে আরটি–পিসিআর পদ্ধতিতে পরীক্ষা হচ্ছে। আর যক্ষ্মা শনাক্তে ব্যবহৃত কার্টিজ বেজড নিউক্লিক অ্যাসিড অ্যামপ্লিফিকেশন টেস্ট (সিবি ন্যাট) বা জিন এক্সপার্ট পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হচ্ছে ৩৪টি কেন্দ্রে। আর ৮৮টি স্থানে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হচ্ছে।

দেশে করোনা সংক্রমণের ১৩ মাস পার হয়েছে। এই সময়েও দেশের ৩৪টি জেলায় করোনার আরটি-পিসিআর নমুনা পরীক্ষাকেন্দ্র (ল্যাব) চালু করতে পারেনি সরকার। এখন যে ১২১টি আরটি-পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা চলমান, এর ৬৯টি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত। সারা দেশে সরকারিভাবে আরটি-পিসিআর ল্যাব রয়েছে ৫২টি। সব জেলায় আরটি-পিসিআর ল্যাব থাকলে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়ানো সম্ভব হতো।

অনুমোদন দিলেও অগ্রগতি নেই

সরকারের পরামর্শক কমিটি ১০ মাস আগে করোনার অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি টেস্ট চালুর সুপারিশ করে। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর দেশে করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এখনো অ্যান্টিবডি পরীক্ষা শুরু হয়নি।
কারও শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে কি না, সেটি অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়। আর করোনা থেকে যাঁরা সুস্থ হয়েছেন, তাঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বা অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না, তা অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়।

অনেক আলোচনার পর সরকার গত ১১ মার্চ সরকারি ও বেসরকারি খাতে করোনার অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করার নির্দেশিকা অনুমোদন দিয়েছে। নির্দেশিকায় অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ব্যবহারের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, প্রচুর মানুষ উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গের জন্য কোনো পরীক্ষা করান না। কমিউনিটিতে (গোষ্ঠী) সংক্রমণের মাত্রা সম্পর্কে ধারণা পেতে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা প্রয়োজন। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে এর কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণা পেতেও অ্যান্টিবডি পরীক্ষা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও নন–কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের (এনসিডিসি) পরিচালক রোবেদ আমিন প্রথম আলোকে বলেন, অ্যান্টিবডি পরীক্ষার বিষয়ে এখনো বেসরকারিভাবে কেউ এগিয়ে আসেনি। অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মূল্য এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। সরকারি ব্যবস্থাপনায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে সরকার।