প্রায় ১৬ লাখ মানুষ করোনার টিকা নিয়েছেন

সোহওয়াদী হাসপাতালে ভ্যাকসিন এর জন্য নারীরা অপেক্ষা করছেন। গতকাল বুধবার সকালে তোলা
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন।

গণটিকা কার্যক্রম শুরুর ১০ম দিনে এসে সারা দেশে করোনা টিকা নেওয়ার সংখ্যা দুই লাখের বেশি। আজ সারা দেশে করোনার টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ২৬ হাজার ৭৫৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ছিলেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ২০৩ জন, আর নারী ছিলেন ৮১ হাজার ৫৫২ জন।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের পাঠানো তথ্যে এ পরিসংখ্যান জানা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, আজ সারা দিনে ঢাকার ৪৬টি হাসপাতাল ও করোনা টিকাদানকেন্দ্র থেকে করোনার টিকা নিয়েছেন ৩১ হাজার ৮৭০ জন। এর মধ্যে নারী ১০ হাজার ৯২৪ জন।

দেশে প্রথম করোনা টিকা দেওয়া হয় গত ২৭ জানুয়ারিতে। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়। এ পর্যন্ত সারা দেশে ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৬৮ জন মানুষ করোনার টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে নারী ছিলেন ৫ লাখ ১৭ হাজার ৬৪৯ জন।
করোনার টিকা নেওয়ার বয়সসীমা সরকার আপাতত আর কমাবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। রাজধানীর ঢাকা ডেন্টাল কলেজে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, টিকা নিতে এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ২৫ লাখ মানুষ। ভারত থেকে আরও ৫০ লাখ করোনা টিকার ডোজ আসবে এ মাসের শেষে অথবা মার্চের প্রথম সপ্তাহে।

করোনাভাইরাস এর টিকা নিয়ে ফিরছেন দম্পতি মহিউদ্দিন আহমেদ ও সিমা আহমেদ। গতকাল সকালে সোহওয়াদী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে তোলা
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, অনেকেই টিকার নিবন্ধন করেছেন। তবে মুঠোফোনে খুদে বার্তা এখনো পাননি। যাঁরা নিবন্ধন করেছেন, তাঁদের কেউ বাদ পড়বেন না। পর্যায়ক্রমে নির্ধারিত তারিখ, সময় উল্লেখ করে নিবন্ধিত সবার কাছেই মুঠোফোনে বার্তা যাবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, এই মুহূর্তে টিকা নেওয়ার বয়সসীমা আর বাড়ানো বা কমানো হবে না। এটিই থাকবে। প্রথম দিকে টিকা নেওয়ার নিবন্ধন প্রক্রিয়া একটু ধীরগতির ছিল। সেটি বাড়াতে বয়সসীমা কমানো হয়েছিল।

এদিকে রাজধানীর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমরা আশা করছি, ভারত থেকে আরও ৫০ লাখ টিকা এই মাসের শেষে বা মার্চের প্রথমে আসবে।’

আজ ঢাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে। এখানে টিকা নিয়েছেন ২ হাজার ৯০০ জন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে টিকা নিয়েছেন ২ হাজার ২৭৪ জন। এ ছাড়া জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটে ১ হাজার ৩৫৫ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ১ হাজার ৪৬৭ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১ হাজার ৩৯২ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ হাজার ৬১ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগরে আজ সবচেয়ে কম টিকা দেওয়া হয়েছে মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতালে। এখানে ৬১ জনকে করোনার টিকা দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আজকের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, টিকা নেওয়াদের মধ্যে নারীর চেয়ে পুরুষের টিকা নেওয়ার হার দ্বিগুণের বেশি। এ পর্যন্ত সারা দেশে ১০ লাখ ৬৮ হাজার ৭১৯ জন পুরুষ করোনার টিকা নিয়েছেন। এর বিপরীতে ৫ লাখ ১৭ হাজার ৬৪৯ নারী টিকা নিয়েছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) আজ করোনার টিকা নিয়েছেন ৯৮০ জন। গতকাল মঙ্গলবার নিয়েছিলেন ৭৮০ জন। স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, ঢামেকের স্বাস্থ্যকর্মী ও স্টাফদের করোনার টিকা নেওয়া প্রায় শেষ। এ জন্য গত দু-এক দিন টিকাকেন্দ্রে ভিড় একটু কমেছে। সাধারণ মানুষেরা এখন টিকা নিচ্ছেন বেশি।

আজ দুপুর ১২টার দিকে ঢামেকে করোনার টিকা নিতে আসেন কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা মো. ওসমান। ৫৪ বছর বয়সী এই ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যানচালক। ৫০ টাকা দিয়ে তিনি কম্পিউটারের দোকান থেকে টিকা কার্ড সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু মুঠোফোনে তাঁর খুদে বার্তা আসেনি। এ জন্য সশরীরে তিনি ঢামেকে হাজির হন। ওসমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মেসেজ এগুলা বুঝি না। এখানে এসে কাগজ দেখাইলাম। তারপর টিকা নিলাম। টিকা নিয়া কোনো ভয় নাই আমার।’