বন্ধুত্ব গড়তে চীনের টিকানীতি

চীন যে দেশগুলোকে নিজের স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে, তাদেরই কাছে টানার চেষ্টা করছে টিকা কূটনীতি দিয়ে।

চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেক লিমিটেডের উদ্ভাবিত করোনার সম্ভাব্য টিকা সাজিয়ে রাখছেন এক কর্মী। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে ৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়
ছবি: রয়টার্স

চীনে উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা দ্রুত পেয়ে যাবে ফিলিপাইন। লাতিন আমেরিকা আর ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলো টিকা কিনতে ঋণ পাবে ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। আর বাংলাদেশ পাবে চীনা কোম্পানির উদ্ভাবিত টিকার এক লাখ ডোজ বিনা মূল্যে। এরই মধ্যে এসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়ে গেছে। যদিও চীনে করোনার নিরাপদ ও কার্যকর টিকার ব্যাপক উৎপাদন শুরু হতে আরও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। মূলত সম্পর্ক ঠিক করতে আর বন্ধুরাষ্ট্রগুলোকে আরও কাছে টানতে দেশটি করোনার টিকা উদ্ভাবনের বিষয়টি ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। বিশেষত, চীন যে দেশগুলোকে নিজের স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে, তাদেরই কাছে টানার চেষ্টা করছে টিকা কূটনীতি দিয়ে।

এ ক্ষেত্রে একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। বেইজিংয়ের ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। গত সপ্তাহে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোকে টেলিফোন করেন। এ সময় সি চিন পিং তাঁকে আশ্বস্ত করেন, চীন ইন্দোনেশিয়ার উদ্বেগের বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। জাকার্তার করোনার টিকার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিও বেইজিং গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।

পরে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, টেলিফোনে আলাপের সময় টিকা উদ্ভাবনে চীনের প্রেসিডেন্ট তাঁর দেশ ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে সহযোগিতার প্রয়াসের প্রশংসা করে বলেন, দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কে এটি একটি উজ্জ্বল অধ্যায়। তিনি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন, করোনারা বিরুদ্ধে এ লড়াইয়ে চীন ও ইন্দোনেশিয়ার ঐক্য অব্যাহত থাকবে।

যে সময়টায় যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক নেতৃত্ব থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে, ঠিক তখনই চীনের টিকা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি আসছে। বিশ্বজুড়ে দ্রুততর সময়ের মধ্যে মাস্ক ও ভেন্টিলেটর সরবরাহের উদ্যোগ দেশটিকে (চীন) বিশ্ব মঞ্চে দায়িত্বশীল এক খেলোয়াড় হিসেবে উপস্থাপন করেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ে। দেশটির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওই সময় ভুল পদক্ষেপ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। চীনের এখনকার পদক্ষেপগুলো ওই অভিযোগ মুছে দিতে সহায়ক হবে। এ ছাড়া টিকা উদ্ভাবন এবং অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলোয় তা সরবরাহ করার সক্ষমতা মহামারি–পরবর্তী বিশ্বে চীনের বৈজ্ঞানিক গবেষণার মোড়ল হিসেবে উত্থানেও ভূমিকা রাখবে।

চীনে উদ্ভাবিত করোনার দুটি সম্ভাব্য টিকার পরীক্ষা চলছে পাকিস্তানে। এই দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গাজালা পারভীন বলেন, ‘মানুষ চীনের টিকা নিতে অত্যন্ত আগ্রহী। জনগণ তো আমাদের কাছে টিকা প্রস্তুত হওয়ামাত্র তা আমদানির দাবি জানাচ্ছে।’

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট রোগ কোভিড–১৯–এর টিকা উদ্ভাবনে চীন এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই দেশটিতে উদ্ভাবিত চারটি সম্ভাব্য টিকা এখন মানবদেহে পরীক্ষার শেষ পর্যায়ে রয়েছে, যে সংখ্যা যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভাবিত তিনটি সম্ভাব্য টিকা মানবদেহে পরীক্ষার শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে ফাইজার এবং মডার্নার সম্ভাব্য টিকা অন্যতম। ফাইজার বলেছে, তারা অক্টোবরের শুরুর দিকে তাদের টিকা জরুরিভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমোদনের জন্য আবেদন করবে। আর মডার্না আশা করছে, তাদের টিকাটি বাজারে আসবে চলতি বছরের শেষ দিকে। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ–সুইডিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনার টিকা উদ্ভাবনে মার্কিন সরকারের তহবিল পেয়েছিল। এই টিকাটিও মানবদেহে পরীক্ষার শেষ ধাপে রয়েছে। সম্প্রতি একজন স্বেচ্ছাসেবী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার পর অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার পরীক্ষা স্থগিত করেছিল। পরে যুক্তরাজ্যের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে গত সোমবার থেকে আবারও পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

মানুষ চীনের টিকা নিতে অত্যন্ত আগ্রহী। জনগণ তো আমাদের কাছে টিকা প্রস্তুত হওয়ামাত্র তা আমদানির দাবি জানাচ্ছে।
গাজালা পারভীন, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, পাকিস্তান

এদিকে চীন এরই মধ্যে দুটি টিকার জরুরিভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। গত জুলাই থেকে চীনা সামরিক বাহিনীর সদস্য ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানির কর্মীদের তা প্রয়োগ করা হচ্ছে। এরপর এই কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা ও আকাশ পরিবহনকর্মীদেরও। চীনের টিকা উদ্ভাবনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে টিকা উৎপাদনে কারখানা নির্মাণ করে ফেলেছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ বৈশ্বিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণে স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত টিকা কাজে লাগাবে। এর বিস্তারিত অবশ্য তিনি কিছু বলেননি।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক অলাভজনক গবেষণা সংস্থা আরএএনডি করপোরেশনের রোগতত্ত্ববিদ ও চীনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ জেনিফার হুয়াং বুয়ে বলেন, নিরাপদ ও কার্যকর টিকা উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে চীনের সরকার নিশ্চিতভাবেই সাফল্য চাইবে। তারা চাইবে, অনেক দেশে এই টিকার চাহিদা তৈরি হোক। কূটনীতি এবং করোনা নিয়ে চীনের বিষয়ে বৈশ্বিক মত পরিবর্তন—উভয় ক্ষেত্রেই এটি সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যাবে চীনকে।

তবে চীনের টিকা উদ্ভাবনকারী যেসব প্রতিষ্ঠান দেশের বাইরে পরীক্ষা করতে গেছে, তারা কোনো না কোনোভাবে বিতর্কে পড়েছে। ওই সব দেশের মানুষগুলোকে গিনিপিগের মতো ব্যবহার করা হবে বলে ভীতি তৈরি হয়েছে। এদিকে নভেল করোনাভাইরাস সম্পর্কে এখনো খুব বেশি কিছু জানা যায়নি। এসব অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বেইজিং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাদের টিকা উদ্ভাবন কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে এবং বিভক্তি দূর করতে এ বিষয়টি কাজে লাগাচ্ছে।

এশিয়ার ভেতরে–বাইরে কূটনীতি

চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেছিয়াং গত মাসে থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার এই দেশগুলোয় ভয়াবহ খরার জন্য বেইজিং দায়ী। আলোচনায় তিনি এই সমালোচনা স্তিমিত করার চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি চীনা টিকা সরবরাহের প্রস্তাব করেন, যা ওই দেশগুলো বেশ ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে। ওই সম্মেলনে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন বলেন, টিকা উদ্ভাবনে চীনের যে প্রচেষ্টা, তার জন্য ব্যাপক প্রশংসা করাই যায়। চীনের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত হুন সেন এ সময় চীনকে ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ হিসেবে অভিহিত করেন।

ফিলিপাইনে প্রভাব বিস্তার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নীরব লড়াই চলছে চীনের। দেশটির প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে গত জুলাইয়ে তাঁর দেশের আইনপ্রণেতাদের বলেন, তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের কাছে টিকা সহায়তা চেয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের দাবির বিরুদ্ধে তিনি কিছু বলবেন না। এর এক দিন পরই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, ফিলিপাইনকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টিকা সরবরাহে ইচ্ছুক চীন।

আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, ক্যারিবীয় অঞ্চল, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া—যেখানেই চীনের প্রভাব বিস্তারের আগ্রহ রয়েছে, সেখানেই দেশটির নেতারা একই প্রস্তাব দিয়েছেন। গত জুনে আফ্রিকার দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, ‘আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, চীনে কোভিড–১৯–এর টিকা উদ্ভাবন ও সরবরাহ সম্পন্ন হওয়ামাত্র আফ্রিকার দেশগুলো টিকার সুবিধাভোগী হওয়া দেশগুলোর প্রথম সারিতে থাকবে।’ মেক্সিকো সরকারের তথ্যমতে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গত জুলাইয়ে প্রতিশ্রুতি দেন যে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে টিকা কিনতে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিতে প্রস্তুত চীন।

জনকল্যাণে টিকা ব্যবহারের কথা বললেও চীন সম্ভবত নিজের মতো করেই কাজটি করতে চায়। কারণ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা–সমর্থিত কোভ্যাক্স উদ্যোগ নিয়ে দেশটি খুব বেশি কিছু বলেনি। কোভ্যাক্স হলো বিশ্বের সব দেশে সমহারে করোনার টিকা বণ্টন নিশ্চিত করার উদ্যোগ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এ উদ্যোগে অংশ নিতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিয়াং গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে কয়েকটি দেশকে সহযোগিতা করেছি। চীন সব সময়ই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।’

চীন যদি টিকার এই প্রতিযোগিতায় জিতে যায়, তাহলে কয়েকটি দেশের কাছে তার ঋণ থাকবে। এই দেশগুলো চীনের টিকা উদ্ভাবনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে মানুষের ওপর পরীক্ষার সুযোগ দিয়ে অপরিহার্য ভূমিকা রেখেছে। চীনে করোনা মহামারি কয়েক মাস আগেই নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় দেশটির টিকা উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিদেশে পরীক্ষা চালাতে হচ্ছে।

আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, চীনে কোভিড–১৯–এর টিকা উদ্ভাবন ও সরবরাহ সম্পন্ন হওয়ামাত্র আফ্রিকার দেশগুলো টিকার সুবিধাভোগী হওয়া দেশগুলোর প্রথম সারিতে থাকবে।
সি চিন পিং, চীনের প্রেসিডেন্ট

দক্ষিণ এশিয়ায় বেইজিংয়ের পদক্ষেপ

বেইজিংভিত্তিক টিকা উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক বায়োটেক বাংলাদেশে তাদের টিকার পরীক্ষা চালাচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় ৪ হাজার ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবী স্বাস্থ্যকর্মী এই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) পরীক্ষায় সহযোগিতা করছে। আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক জন ডি ক্লিমেনসের তথ্যমতে, সিনোভ্যাক বিনা মূল্যে বাংলাদেশে তাদের টিকার ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি ডোজ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

যদিও এ সংখ্যা এশিয়ার দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি বাংলাদেশের জনসংখ্যার তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য। এ দেশের অনেকেরই আশঙ্কা, চীনের টিকার পরীক্ষায় অংশ নিলেও টিকাটি যখন বাজারে আসবে, তার দাম থাকবে বেশির ভাগ মানুষের নাগালের বাইরে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারমাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. সাইয়েদুর রহমান বলেন, বিশ্বের কেউ যদি করোনার টিকা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে তা হবে এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় অন্যায়।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য জোর দিয়ে বলেছে, টিকা সরবরাহের ক্ষেত্রে চীন একক আধিপত্য বিস্তার করতে চায় না। করোনার টিকাকে চীন কূটনীতির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা–ও প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো। আর চীনের সরকার–সমর্থিত শিক্ষাবিদেরা বলছেন, জনকল্যাণের উদ্দেশ্যেই টিকা নিয়ে চীনের উদ্যোগ। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিচালিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান চায়না ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট রুয়ান
জংজে বলেন, বৈশ্বিক জনস্বার্থেই টিকা সরবরাহ করা হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো শর্ত যুক্ত করলেই সন্দেহের সৃষ্টি হবে।

বিশ্বের কেউ যদি করোনার টিকা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে তা হবে এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় অন্যায়।
মো. সাইয়েদুর রহমান, অধ্যাপক, ফারমাকোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

তবে চীনের তৎপরতা এরই মধ্যে টিকা নিতে ইচ্ছুক বিভিন্ন দেশে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সেই সঙ্গে আঞ্চলিক শক্তিগুলোও এই তৎপরতাকে তাদের বলয়ে বেইজিংয়ের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা হিসেবে দেখছে। নেপালে একটি সিমেন্ট কোম্পানির ৫০০ কর্মীর ওপর চীন একটি টিকার পরীক্ষা চালাতে ইচ্ছুক। নেপালের রাজনীতিকেরা টিকাটির নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতার ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমানে প্রধান বিরোধী দল নেপালি কংগ্রেসের নেতা প্রকাশ শরণ মহত বলেন, ‘টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের নিশ্চয়তা দেওয়া কি উচিত নয়?’

দক্ষিণ এশিয়ায় বেইজিংয়ের পদক্ষেপ নিয়ে সদা সতর্ক ভারত এরই মধ্যে বাংলাদেশ ও নেপালে চীনের টিকা সরবরাহের প্রতিশ্রুতির পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে। তারাও মিত্রদের নিজেদের উদ্ভাবিত টিকা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ায় সিনোভ্যাকের টিকার মানবদেহে পরীক্ষার শেষ ধাপ চলছে। এতে অংশ নিচ্ছেন ১ হাজার ৬২০ জন স্বেচ্ছাসেবী। দেশটি সিনোভ্যাকের সঙ্গে ৫ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহের চুক্তি করেছে। এই চুক্তির আওতায় ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পিটি বায়ো ফার্মা স্থানীয়ভাবেও টিকা উৎপাদন করতে পারবে। ইন্দোনেশিয়ার কয়েকজন রাজনীতি বিশেষজ্ঞ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, চীন হয়তো দেশটির ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করবে। তবে তাঁরা এ–ও স্বীকার করেছেন, ইন্দোনেশিয়ার কাছে বিকল্প বলতে কিছু নেই বললেই চলে। ইউনিভার্সিটাস ইসলাম ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ জুলফিকার রাখমাত বলেন, ‘আমাদের কি সন্দীহান হওয়া উচিত, নাকি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত? আমার মনে হয়, দুটিই হওয়া উচিত।’

আমাদের কি সন্দীহান হওয়া উচিত, নাকি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত? আমার মনে হয়, দুটিই হওয়া উচিত।
মুহাম্মদ জুলফিকা, শিক্ষাবিদ, ইউনিভার্সিটাস ইসলাম, ইন্দোনেশিয়া