বাড়ছে সংক্রমণ, কমছে টিকা গ্রহণ

করোনায় আক্রান্ত বাবা কার্তিক বর্মণের যত্ন নিচ্ছেন তাঁর সন্তান দিপু বর্মণ। গত কয়েক দিনে করোনা রোগী বেড়েছে হাসপাতালগুলোতে। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে
ছবি: আশরাফুল আলম

দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু একদিকে বাড়ছে, অন্যদিকে কমছে করোনা টিকাগ্রহীতার সংখ্যা। চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনা মোকাবিলায় প্রথম হাতিয়ার টিকা। তবে শুধু টিকা নিলেই হবে না, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলতে হবে।

গত ৯ ফেব্রুয়ারির পর দেশে সবচেয়ে কমসংখ্যক মানুষ করোনার টিকা নিয়েছেন আজ সোমবার। সারা দেশে আজ টিকা নিয়েছেন ৮৭ হাজার ৮৬০ জন। এর মধ্যে ঢাকায় আজ টিকা নিয়েছেন ১৫ হাজার ৯৮৪ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে আজ সন্ধ্যায় এসব তথ্য জানানো হয়।

গণটিকা কার্যক্রমের শুরুতে করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন ও দৈনিক টিকাগ্রহীতার সংখ্যা কম ছিল। তবে টিকা দেওয়া শুরু হলে এই সংখ্যা বাড়াতে শুরু করে। টিকাদান শুরুর দ্বিতীয় সপ্তাহে দৈনিক টিকাগ্রহীতার সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ওই সময় দৈনিক নিবন্ধনও হচ্ছিল আড়াই লাখের কাছাকাছি। কিন্তু তিন সপ্তাহ ধরে দেশে করোনার টিকাগ্রহীতার সংখ্যা কমছে। টিকা পেতে নিবন্ধনও কম হচ্ছে।

দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। সারা দেশে এ পর্যন্ত করোনার টিকা নিয়েছেন ৪৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯৫৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২৮ লাখ ৪৪ হাজার ৩৫৫ জন এবং নারী ১৬ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৯ জন।

চিকিৎসকেরা বলছেন, চারটি হাতিয়ার দিয়ে করোনা মোকাবিলা করা সম্ভব। করোনার টিকা নেওয়া, নিয়মিত মাস্ক পরিধান, বাইরে বের হলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা এবং নিয়মিত হাত ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করা। করোনার টিকা নিলেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে মানুষের। তবে টিকার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধিও মানতে হবে।

রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে আজ সোমবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের তিনতলায় করোনার টিকাদান কেন্দ্রের সামনে খুব একটা ভিড় নেই। টিকা নিতে আসা ব্যক্তিদের প্রথমে নিবন্ধন যাচাই করা হচ্ছে। এরপর সিরিয়াল দিয়ে কেন্দ্রে ঢোকানো হচ্ছে। টিকা নেওয়া শেষ হলে আধা ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ শেষে টিকাগ্রহীতাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

মুগদা হাসপাতালে আজ করোনার টিকা নিয়েছেন ৮৫৪ জন। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও এই হাসপাতালে দৈনিক ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ মানুষ করোনার টিকা নিতেন।

স্বাস্থ্যবিধিও মানতে হবে
মানুষের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা একেবারেই কম বলে জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট নজরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা একেবারেই মৌলিক বিষয়। ব্যক্তিগত সুরক্ষা না মানা হলে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হবেই। টিকা নেওয়ার পরও এমন ঘটনা দেখা যাচ্ছে। মাস্ক না পরা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানাটা বোকামি।

করোনার শুরু থেকে মুগদা হাসপাতাল কোভিড চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যা আছে ১৪টি। গতকাল একটি শয্যাও ফাঁকা ছিল না। আইসিইউ ফাঁকা না থাকায় জরুরি সেবার রোগীদের ফেরত দিতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। গত দুই সপ্তাহে দ্বিগুণের বেশি করোনা রোগী বেড়েছে উল্লেখ করে মুগদা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, আজ এখানে ১৫৩ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। অথচ দুই সপ্তাহ আগে রোগী ছিল ৬০ থেকে ৭০ জন।

চিকিৎসকেরা বলছেন, চারটি হাতিয়ার দিয়ে করোনা মোকাবিলা করা সম্ভব। করোনার টিকা নেওয়া, নিয়মিত মাস্ক পরিধান, বাইরে বের হলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা এবং নিয়মিত হাত ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করা। করোনার টিকা নিলেই রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়বে মানুষের। তবে টিকার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধিও মানতে হবে।

চারটি অস্ত্র দিয়ে করোনা মোকাবিলা করা সম্ভব। শুধু টিকা নিলেই করোনা আর হবে না, বিষয়টি এমন নয়। টিকা নিলেই নিরাপদ হয়ে গেল, বিষয়টি সত্য নয়। তবে টিকা নেওয়া নিজের জন্য ও দেশের জন্য জরুরি। টিকা নিলে রোগের ভয়াবহতা কম হবে এটা নিশ্চিত করা যায়।
অসীম কুমার নাথ, মুগদা হাসপাতালের পরিচালক

মুগদা হাসপাতালের পরিচালক অসীম কুমার নাথ বলেন, এই চারটি অস্ত্র দিয়ে করোনা মোকাবিলা করা সম্ভব। শুধু টিকা নিলেই করোনা আর হবে না, বিষয়টি এমন নয়। টিকা নিলেই নিরাপদ হয়ে গেল, বিষয়টি সত্য নয়। তবে টিকা নেওয়া নিজের জন্য ও দেশের জন্য জরুরি। টিকা নিলে রোগের ভয়াবহতা কম হবে এটা নিশ্চিত করা যায়।

গণটিকা কার্যক্রম শুরুর পর থেকে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দৈনিক গড়ে ১ লাখ ২৯ হাজার ৩৫২ জন করোনার টিকা নেন। এ সময় টিকা পাওয়ার জন্য দৈনিক নিবন্ধন করেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ২৬ জন।

গত ১৫ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি দৈনিক গড়ে টিকা নেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৬৮৭ জন। এ সময় টিকা পাওয়ার জন্য দৈনিক গড়ে নিবন্ধন করেন ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৮৫ জন। দেশে এখন পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ টিকা দেওয়া হয়েছে ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেদিন মোট ২ লাখ ৬১ হাজার ৯৪৫ জন করোনার টিকা নেন।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ পর্যন্ত টিকাগ্রহীতা ও নিবন্ধন—দুটিই কমতে শুরু করেছে। ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত দিনে গড়ে টিকা নিয়েছেন ১ লাখ ৪৮ হাজার ১২৬ জন। এ সময়ে দৈনিক গড়ে নিবন্ধন করেছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৪৮১ জন। এর মধ্যে ২৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ছুটির দিন থাকায়, টিকা কার্যক্রম চলেনি।
ঢাকাসহ সারা দেশে এক হাজারের বেশি হাসপাতালে করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে।

হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে করোনা রোগীর চাপ। বয়োজ্যেষ্ঠ রোগীদের ক্ষেত্রে লাগছে অক্সিজেন। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে
ছবি: আশরাফুল আলম

অধিকাংশ হাসপাতালে একাধিক বুথে টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি বুথে দিনে ১৫০ থেকে ২০০ জনকে টিকা দেওয়ার সক্ষমতা আছে। কোনো হাসপাতালে এক দিনে কতজনের টিকা দেওয়া হবে, সেটি নির্ভর করে বুথের সংখ্যার ওপর।

ঢাকায় ৪৭টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে। আজ সবচেয়ে বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানে আজ টিকা নিয়েছেন ১ হাজার ৬১৫ জন। ঢাকায় সবচেয়ে কম টিকা দেওয়া হয়েছে বিএএফ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল সেন্টারে। এখানে আজ ৭০ জন করোনার টিকা নিয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত সারা দেশে করোনা টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৫৭ লাখ ৭০ হাজার ১৯৮ জন। এ পর্যন্ত সারা দেশে ৮৯৪ জনের টিকা নেওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানা গেছে।