বিপণিবিতানের ভিড় সংক্রমণ আবার বাড়াতে পারে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে ঈদের কেনাকাটা করতে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় মানুষের ভিড়। নিউমার্কেট, ঢাকা, ৬ মে
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

বিপণিবিতানগুলোতে ভিড়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের। চলমান লকডাউন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে বেশ ‘কার্যকর’ ছিল বলেও দাবি করেন মন্ত্রী। তবে লকডাউন দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয় বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।

‘কোভিড-১৯–এর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় করণীয় এবং অক্সিজেন–সংকট ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় স্বাস্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ টিটু মিয়াসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিরা।

জাহিদ মালেক বলেন, ‘যে ভিড় মার্কেটে দেখতে পাচ্ছি, এর মাধ্যমে সংক্রমণ বাড়বে বলে আমার ধারণা। একটা ঈদে জামাকাপড় না কিনলে কী হয়? মার্কেট সরকার খুলেছে, যাওয়া না যাওয়া আমাদের বিষয়। অনেক নারী ও শিশু মাস্ক পরছে না। সবকিছু তো সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। লোকজন এগুলো (স্বাস্থ্যবিধি) সেভাবে মানছে, বিষয়টা তা নয়।’

লকডাউনের ফলে সংক্রমণ কমে এসেছে বলে দাবি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর। তিনি বলেন, ‘সংক্রমণ কমাতে এটা ছিল সবচেয়ে কার্যকরী পন্থা।’ তবে লকডাউন কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয় উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, ‘এটা ক্ষতি করে, অস্থিরতা তৈরি করে। কাজেই ব্যালেন্স (ভারসাম্য) করে চিন্তা করেছি মহানগরের ভেতর লকডাউন দিতে।’

সরকারের সচেতনতামূলক ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ গ্লোগানটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরি দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটা খুব কাজে দিয়েছে। এই স্লোগানে সচেতনতা বেড়েছে। বিশ্বের অনেক দেশে এটা অ্যাডাপ্ট (অবলম্বন) করেছে। এটা আমাদের এখান থেকে শুরু করেছি।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক
ফাইল ছবি

গত বছরের লকডাউনের পর মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানেননি উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, ‘ফলে অক্সিজেনের জন্য কীভাবে দাপাদাপি হয়েছে, সেটা আমরা দেখেছি। অ্যাম্বুলেন্সে, হাসপাতালের বারান্দায় কী হয়েছে, সেটা দেখেছি। ভারতেও এমনটা হয়েছে। এ বিষয়গুলো আমাদের মনে রাখতে হবে। আমরা ভুলে যাই। এটা খুবই অন্যায়। আমরা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে দিই। অর্থনীতির ক্ষতি হয়। পরিবারের ক্ষতি হয়।’

চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা দেওয়ার কথা থাকলেও ভারত এখন তা দিতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে চীন, রাশিয়ার টিকার পাশাপাশি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা অন্য দেশ থেকে পাওয়া যায় কি না, সে চেষ্টাও সরকার করছে বলে জানান মন্ত্রী।

গ্যাস অক্সিজেন বেশি ব্যবহারের নির্দেশ

করোনাভাইরাসের রোগীদের চিকিৎসায় তরল অক্সিজেনের চেয়ে গ্যাস অক্সিজেন বেশি ব্যবহারের নির্দেশ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘লিকুইড ব্যবহার না করে গ্যাস অক্সিজেন ব্যবহার করলে সুবিধা হবে। কারণ, গ্যাস অক্সিজেনের উৎপাদন ভালো অবস্থায় আছে। প্রায় ৫০টি হাসপাতালে বলে দিয়েছি গ্যাস অক্সিজেন ব্যবহার করব আমরা। কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে শুধু লিকুইড অক্সিজেন ব্যবহার করব।’
জাহিদ মালেক জানান, দেশে সাধারণ সময় অক্সিজেনের চাহিদা ৫০ থেকে ৬০ টন। এর মধ্যে অর্ধেক মেডিকেলে, বাকি অর্ধেক শিল্পে। বর্তমানে লাগছে ৭০ থেকে ৮০ টন। করোনাভাইরাসের চূড়ান্ত বিপর্যয়ে অক্সিজেন দরকার ছিল ২১০ টন।

অক্সিজেনের উৎপাদন প্রায় ২৭০ টন দাঁড়াবে

বর্তমানে তরল অক্সিজেনের উৎপাদন প্রতিদিন ১৭৫ টন। এর মধ্যে লিনডা সবচে বড় কোম্পানি। এ ছাড়া আরও ৩ থেকে ৪টি বেসরকারি কোম্পানিও উৎপাদন করছে। ঘাটতি কমাতে জুলাই নাগাদ দেশে অক্সিজেনের উৎপাদন প্রায় ২৭০ টন দাঁড়াবে বলে জানান মন্ত্রী।

জাহিদ মালেক জানান, বর্তমানে সরকারের হাতে রয়েছে ২২ হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডার। তা ছাড়া গ্যাস অক্সিজেন যদি তরল অক্সিজেনের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাহলে আরও বাড়তি ৪০ টন হয়। এ ছাড়া একটি কোম্পানি নতুন করে ৪০ টন উৎপাদন করবে। জুলাই মাসে আরও একটি কোম্পানি ২৫ থেকে ৩০ টন তৈরি করবে। সব মিলিয়ে তখন অক্সিজেনের উৎপাদন দাঁড়াবে ২৭০ টন।

সরকারিভাবে ৯০০ টন অক্সিজেন মজুত আছে

এর বাইরে সরকারিভাবে ৯০০ টন অক্সিজেন মজুত আছে বলে জানান মন্ত্রী। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে মজুত আছে সাড়ে চার শ টন। সরকার আরেকটা নতুন অক্সিজেন জেনারেটর কেনার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, সেটা আসতে সময় লাগবে।

অক্সিজেনের মজুত বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে মজুত ঠিক আছে। তবে সংক্রমণ বাড়লে ঘাটতি হতে পারে। ঈদের বাজারের মতো অবস্থা হলে সংক্রমণ বাড়বে। আমরা ভারতের মতো ভুল করতে চাই না, সেটা থেকে শিখতে চাই।’
করোনা রোগীদের জন্য ১২ হাজার বেড

মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন ৪০০টির বেশি ল্যাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষা হচ্ছে। ১৩০টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন কার্যকর আছে। এ ছাড়া ১৬ হাজার বেড সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনের আওতায় আছে। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা আছে তিন হাজারটি। চার হাজার ডাক্তার টেলিমিডিসিনে কাজ করেছেন।
এ ছাড়া করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ১২ হাজার বেড বরাদ্দ আছে।