মাস্ক না পরার যত অজুহাত

করোনা নিয়ন্ত্রণে জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে বলা হলেও অনেকের মধ্যেই তা মানতে অনীহা দেখা যায়। নিউমার্কেট, ঢাকা, ১৭ জানুয়ারি
ছবি: খালেদ সরকার

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে ছয় হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু এখনো মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না। মাস্ক পরার ক্ষেত্রেও দেওয়া হচ্ছে নানা বাহানা।

করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিধিনিষেধে বলা আছে, দোকান, শপিং মল ও বাজারে ক্রেতা–বিক্রেতা, হোটেল–রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় তাঁকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরা বা স্বাস্থ্যবিধি কতটা মানা হচ্ছে, তা দেখতে আজ সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষ মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মানায় আগের মতোই উদাসীন।

দুপুরে কারওয়ান বাজারে সাতটি বাসের চালক ও তাঁর সহকারীর মাস্ক পরার বিষয়টি খেয়াল করা হয়। দেখা যায়, সাতজন চালকের সহকারীর মধ্যে কেবল একজন মাস্ক পরে ছিলেন। একজনের মুখে মাস্ক ছিলই না। বাকি পাঁচজন সহকারীর মাস্ক ছিল থুতনিতে। আর সাতজন চালকের মধ্যে তিনজনের মাস্ক ছিল, তিনজনের মাস্ক ছিল না ও একজনের মাস্ক ছিল থুতনিতে।

মাস্ক থুতনিতে কেন, জানতে চাইলে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআরটিসির একটি বাসচালকের সহকারী মো. ইব্রাহীম বলেন, ‘মাস্ক পরি ভাই। যহন যাত্রী ডাহি, তহন পরি না।’

কিছু যাত্রীর মধ্যেও ছিল মাস্ক না পরার প্রবণতা। বিআরটিসির ওই বাসের ১৯ জন যাত্রীর দিকে লক্ষ করে দেখা যায়, ৪ জনের মাস্ক থুতনিতে, ২ জন মাস্কই পরেননি। তবে অন্যরা যথাযথভাবে পরেছেন। কারণ জানতে চাইলে বিরক্তি প্রকাশ করে এক যাত্রী বলেন, ‘গরম লাগতাছে, ঘামতাছি, এইটাই কারণ।’ যদিও বাসের সবার পরনেই গরম কাপড়, কারও মুখে গরম লাগার কথা শোনা যায়নি।

বাজারের বিক্রেতাদের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে কম। কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারের ১৮ জন বিক্রেতার দিকে লক্ষ করে দেখা যায়, তাঁদের কেউ মাস্ক ব্যবহার করছেন না। এমন কী থুতনিতেও না।

সবজি বিক্রেতা মো. ফরিদ বলেন, ‘মাস্ক পকেটে আছে। বেশিক্ষণ পরে থাকতে পারি না।’ পাশে আরেক বিক্রেতা মো. শরীফের কাছে কোনো মাস্কই নেই। তিনি বলেন, ‘মাস্ক পরে কথা বললে কাস্টমার শোনে না।’ পাশের আরেক নারী বিক্রেতা বলেন, ‘পান খাইতে গিয়া খুলি, চিল্লাইতে গিয়া খুলি, আবার মাথাব্যথা করলেও খুলি। এসব করতে গিয়া পরা হয় না।’

এই কাঁচাবাজারের ১৪ জন ক্রেতার দিকে তাকিয়ে দেখা যায়, দুজনের মাস্ক নেই, আর দুজনের মাস্ক থুতনিতে। বাকিদের ঠিকঠাক আছে। বাজার করতে আসা গৌরাঙ্গ চন্দ্র রায়ের মুখে মাস্ক ছিল না। তবে তাঁর সঙ্গে আসা নাতির মুখে ছিল। গৌরাঙ্গ চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমি মাস্ক পরি। সত্য কথা হলো, আজকে মাস্ক আনতে ভুলে গেছি।’
এ তো গেল মাস্কের কথা। কিন্তু শারীরিক দূরত্ব মানারও বালাই নেই এই কাঁচাবাজারে।
হোটেলে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না

কারওয়ান বাজারের হোটেল সুপার স্টারে আজ সকালের নাশতা করছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. জাকির হোসেন। তিনি করোনার টিকা দিয়েছেন। মুঠোফোনে তাঁর টিকার সনদ রয়েছে। তবে হোটেল কর্তৃপক্ষ তাঁর কাছে টিকার সনদ দেখতে চায়নি। কথা বলে সেটিই জানা গেল।

সরকারের বিধিনিষেধ অনুযায়ী, হোটেল বা রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণের জন্য টিকার সনদ দেখানো বাধ্যতামূলক। কেন হোটেল কর্তৃপক্ষ তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে না, জানতে চাইলে হোটেল সুপার স্টার লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার জয় রাজবংশী বলেন, ‘আমরা সরকারি নির্দেশনা মানার চেষ্টা করছি।’

বিধিভঙ্গ ট্রেনেও

রেলস্টেশনেও বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে না। রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসা আন্তনগর চট্টলা ট্রেনে পাশাপাশি সিটে দুজন বসেছেন। এ ছাড়া ঢাকা থেকে জামালপুরগামী কমিউটার ট্রেনে অনেক যাত্রীকে দাঁড়িয়েও যেতে দেখা গেল।