শনাক্তের চেয়ে সুস্থ বেশি, কমছে চিকিৎসাধীন রোগী

ফাইল ছবি

দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের চেয়ে সুস্থ হচ্ছেন বেশি। গত আড়াই মাসে দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৮১১ জনের। একই সময়ে সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮১৬ জন। অর্থাৎ গত ১ নভেম্বর থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত করোনা শনাক্তের চেয়ে ২৮ হাজার ৫ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন।

দেশে এখন সংক্রমণ শনাক্তের বিপরীতে সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি ১০ জন আক্রান্তের মধ্যে প্রায় ৯ জনই সুস্থ হয়ে গেছেন। ফলে চিকিৎসায় থাকা রোগীর সংখ্যা কমছে। যদিও আড়াই মাস আগে (১ নভেম্বর) এই হার ছিল ৭৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ। অর্থাৎ তখন ১০ জনের মধ্যে ৮ জন সুস্থ হয়েছিলেন।

জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, দেশে করোনার মৃদু সংক্রমণের রোগী বেশি। এমন রোগীদের সুস্থ হতে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ সময় লাগে। বেশ কিছুদিন ধরে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কম। আগে শনাক্ত রোগীরা এই সময়ে সুস্থ হচ্ছেন। এতে দৈনিক শনাক্তের চেয়ে সুস্থ রোগীর সংখ্যা বেশি হচ্ছে।

করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত নভেম্বর মাসে দেশে রোগী শনাক্ত হয় ৫৫ হাজার ৬৮০ জন। আর সুস্থ হন ৫৪ হাজার ৭৭১ জন। শনাক্ত ও সুস্থ রোগীর মধ্যে পার্থক্য বেশি ছিল গত ডিসেম্বর মাসে। ডিসেম্বরে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪৬ হাজার ২৮৫ জনের। আর ওই মাসে সুস্থ হয়েছেন ৭৪ হাজার ২৩৫ জন। আর চলতি বছরের প্রথম ১৬ দিনে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১২ হাজার ৫৬৩ জনের। বিপরীতে এই সময়ে সুস্থ হয়েছেন ১৩ হাজার ১০০ জন।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম ধরা পড়ে।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চীনের সংক্রমণ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীনের যৌথ মিশন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, মৃদু সংক্রমণের (মাইল্ড কেস) ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির সুস্থ হতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগে। আর যেসব রোগীর অবস্থা জটিল বা অন্য সংকটাপন্ন রোগ আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে সুস্থ হতে সময় লাগে তিন থেকে ছয় সপ্তাহ।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের কথা জানায় সরকার। ওই দিন থেকে ২ মে পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ছিলেন ৮ হাজার ৭৯০ জন। সুস্থ হয়েছিলেন ১৭৭ জন।

সুস্থতার হার ছিল ২ শতাংশ। তখন পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পরপর দুটি পরীক্ষায় করোনাভাইরাস শনাক্ত না হলে রোগীকে সুস্থ বলা হতো এবং হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হতো।

৩ মে থেকে সুস্থতার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাতে বলা হয়, ওষুধ ছাড়া টানা ৩ দিন জ্বর না থাকলে, কাশি বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হলে রোগীকে ছাড়পত্র দেওয়া যাবে। এই পরিবর্তন আনার পর সুস্থতার হার আগের তুলনায় বাড়তে থাকে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রোববার পর্যন্ত দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫ লাখ ২৭ হাজার ৬৩২ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৪ লাখ ৭২ হাজার ৪৩৭ জন। মারা গেছেন ৭ হাজার ৯০৬ জন। সুস্থ হওয়া ও মারা যাওয়াদের বাদ দিলে দেশে এখন চিকিৎসাধীন রোগী আছেন ৪৭ হাজার ২৯২ জন।

পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার শুরু থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সংক্রমণ শনাক্তের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ২৯তম। তবে চিকিৎসাধীন রোগীর দিক থেকে বাংলাদেশ ৩৫তম স্থানে রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যা রয়েছে ১০ হাজার ৩৮১টি। এসব শয্যায় গতকাল রোগী ভর্তি ছিলেন ২ হাজার ১২ জন। আর আইসিইউ শয্যা নির্ধারিত রয়েছে ৫৯৮টি। তাতে রোগী ভর্তি ছিলেন ২১০ জন।

দেশের মোট চিকিৎসাধীন রোগীর মাত্র ৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ রোগী হাসপাতালে সেবা নিচ্ছেন। দেশের চিকিৎসাধীন রোগীর বড় অংশ বাড়িতে থেকেই সুস্থ হচ্ছেন।

দেশে সংক্রমণ শুরুর দিকে রোগী শনাক্তের হার কম ছিল। গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সেটি ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এরপর থেকে নতুন রোগীর পাশাপাশি শনাক্তের হারও কমতে শুরু করেছিল। মাস দুয়েক সংক্রমণ নিম্নমুখী থাকার পর গত নভেম্বরের শুরুর দিক থেকে নতুন রোগী ও শনাক্তের হারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়।

নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে দৈনিক নতুন রোগী শনাক্তের গড় দুই হাজার ছাড়ায়। গত ১০ ডিসেম্বর থেকে নতুন রোগী শনাক্ত এবং শনাক্তের হার কম। গত তিন সপ্তাহ ধরে পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ১০ শতাংশের নিচে। চলতি বছরের অধিকাংশ দিন ১ হাজারের কম রোগী শনাক্ত হয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, দেশে মৃদু উপসর্গের রোগী বেশি। জটিল ও সংকটজনক রোগী তুলনামূলক কম। আক্রান্তদের একটি বড় অংশ বয়সে তরুণ। ফলে সুস্থতার হার বেশি। আর কিছুদিন ধরে রোগী শনাক্ত হচ্ছে কম। শনাক্তের চেয়ে সুস্থতা বাড়ার এটিও বড় কারণ।