দেশে করোনা সংক্রমিত রোগীর হার পাঁচ সপ্তাহ ধরেই কমছে। সাপ্তাহিক হিসাবে, এখন রোগী শনাক্তের হার ১৩ শতাংশের মতো। তিন সপ্তাহ আগেও এই হার ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। তবে জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, দেশে এখনো শনাক্তের যে হার, তা বিপৎসীমার ওপরে। টানা তিন সপ্তাহ রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে মনে করা হয়।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, সংক্রমণ ঠেকাতে কার্যকর উদ্যোগ ছাড়া আপনাআপনি করোনাভাইরাস চলে যাবে, এমনটা ভাবা বড় বোকামি হবে। লোকসমাগম যত বেশি হবে, সংক্রমণের ঝুঁকিও তত বাড়বে। জীবনযাত্রা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রেও সর্বত্রই গা–ছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে। এতে সংক্রমণ বাড়ার কথা। কিন্তু নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যা ও শনাক্তের হার কেন তুলনামূলক কম, তা পরিষ্কার নয়।
দেশে গত ৮ মার্চ করোনায় সংক্রমিত প্রথম রোগী শনাক্তের তথ্য জানায় সরকার। শুরুর দিকে পরীক্ষা কম ছিল, যে কারণে শনাক্তের হারও কম ছিল। পরে পরীক্ষা বাড়ানো হলে শনাক্তের হারও বাড়তে থাকে। মে মাসের শেষ সপ্তাহ বা সংক্রমণের ১২তম সপ্তাহ (২৪ থেকে ৩০ মে) থেকে পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণ শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে চলে যায়। সংক্রমণের ২৪তম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি ছিল। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সপ্তাহওয়ারি হিসাবে দেশে রোগী শনাক্তের হার সবচেয়ে বেশি ছিল ২২তম সপ্তাহে (২ থেকে ৮ আগস্ট) ২৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। সংক্রমণের ২৩তম সপ্তাহ থেকে পাঁচ সপ্তাহ ধরে শনাক্তের হার আগের সপ্তাহের চেয়ে কমতে দেখা যাচ্ছে।
এর মধ্যে ২৫তম সপ্তাহ (২৩–২৯ আগস্ট) থেকে সাপ্তাহিক মোট পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের নিচে নেমে আসে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরামর্শক মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শনাক্তের হার একটা জায়গায় স্থির ছিল। কিছুদিন ধরে এটা নিম্নমুখী। তবে এখনো বিপৎসীমার ওপরে। বড় বড় শহরে সংক্রমণের একটা পর্যায়ে গিয়ে সংক্রমণ ‘হল্ট’ হয়, এটা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণা চলছে। দেশে সে অবস্থা হয়েছে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়। কারণ, অ্যান্টিবডি পরীক্ষা হয় না।
মুশতাক হোসেন বলেন, এখন যাঁরা পরীক্ষা করাচ্ছেন, তাঁদের একটি অংশ বাধ্যতামূলক হওয়ায় পরীক্ষা করাচ্ছেন। যেমন বিদেশগামী কোনো ব্যক্তি। তাঁর হয়তো লক্ষণ নেই বা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে আসেননি, তারপরও তাঁকে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের এ ধরনের পরীক্ষা করাচ্ছে। এ ধরনের পরীক্ষা যদি মোট পরীক্ষার ৫ শতাংশ বা তার বেশি হয় তাহলে তা শনাক্তের হারে প্রভাব ফেলে। এ ধরনের পরীক্ষাগুলোর ফল আলাদা দেখানো যেতে পারে। তবে সার্বিকভাবে শনাক্তের হার নিম্নমুখী বলেই মনে হচ্ছে।
দেড় মাসের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় সর্বনিম্ন মৃত্যু
গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত রোববার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে আরও ১ হাজার ৮১২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময় মারা গেছেন ২৬ জন। এ নিয়ে দেশে শনাক্ত হওয়ার রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩২। এর মধ্যে মোট ৪ হাজার ৭৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর সুস্থ হয়েছেন ২ লাখ ৪৩ হাজার ১৫৫ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা গত প্রায় দেড় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২ আগস্ট এক দিনে এর চেয়ে কম, ২২ জনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়েছিল। তবে মৃত্যু কমলেও গত ২৪ ঘণ্টায় আগের দিনের তুলনায় নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যা ও হার বেড়েছে। আগের দিন ১ হাজার ৪৭৬ জন রোগী শনাক্ত হয়। মৃত্যু হয়েছিল ৩১ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ২১৬ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আগের দিন এটা ছিল ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
করোনা সংক্রমণে মোট মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে গতকাল চীনকে পেছনে ফেলে বিশ্বে ২৮তম স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। শনাক্ত রোগীর সংখ্যার দিক থেকে তিন মাস আগেই চীনকে ছাড়িয়ে যায় দেশ।