শেষ এক হাজার মৃত্যুও ২৮ দিনে

করোনাভাইরাস
রয়টার্স প্রতীকী ছবি

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মোট মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে শেষ এক হাজার মৃত্যু হয়েছে ২৮ দিনের ব্যবধানে।এর আগে মোট মৃত্যু তিন হাজার থেকে চার হাজার ছাড়াতেও একই সময় লেগেছিল।

কোভিড-১৯-এ প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করা হয় গত ১৮ মার্চ। শুরুর দিকে প্রায় এক মাস মৃত্যু ছিল অনিয়মিত ঘটনা। ৪ এপ্রিল থেকে গতকাল পর্যন্ত প্রতিদিন দেশে করোনায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।  সংক্রমণের ১৯৯তম দিনে আজ মঙ্গলবার মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭।

সংক্রমণ শনাক্তের দিন থেকে শুরু করে প্রথম এক হাজার মৃত্যু হয়েছিল ৯৫ দিনে। দ্বিতীয় এক হাজার পূর্ণ হতে সময় লাগে ২৫ দিন। তৃতীয় এক হাজার পূর্ণ হতে সময় লাগে ২৩ দিন। চতুর্থ এক হাজার মৃত্যু পূর্ণ হয় ২৮ দিনে। আর সর্বশেষ এক হাজার মৃত্যুও পূর্ণ হয় ২৮ দিনের ব্যবধানে।

অবশ্য কিছুদিন ধরে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা আগের তুলনায় কম। এক সপ্তাহের মধ্যে তিন দিনই দৈনিক মৃত্যু ৩০-এর নিচে ছিল। কিন্তু নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যা যে হারে কমছে, এখনো মৃত্যু সে হারে কমছে না। এর ফলে মোট শনাক্তের সংখ্যা বিবেচনায় মৃত্যুর হার ধীর গতিতে হলেও বেড়ে যাচ্ছে। ৫ জুলাই করোনায় মোট মৃত্যু দুই হাজার ছাড়িয়েছিল। সেদিন পর্যন্ত মোট শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। গতকাল পর্যন্ত হিসাবে সেটা বেড়ে হয়েছে ১ দশমিক ৪২ শতাংশ।

৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কথা জানানো হয়। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে যেতে শুরু করে। জুনে তা তীব্র আকার নেয়। এমন প্রেক্ষাপটে জুলাইয়ের শুরু থেকে সরকারের তরফে কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপে সংক্রমণ শনাক্তের পরীক্ষার সংখ্যা কমে যায়। এতে নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যাও কমে আসে। অবশ্য মাসখানেক ধরে পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণ শনাক্তের হারও নিম্নমুখী। কিন্তু মৃত্যু টানা কমতে দেখা যায়নি। মৃত্যুর সংখ্যা নিয়মিত ওঠানামা করতে দেখা গেছে।

দেশে করোনায় মৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটছে ঢাকায়। এখন পর্যন্ত মারা যাওয়াদের অর্ধেক অর্থাৎ ৪৯ দশমিক ২৭ শতাংশ ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। এরপর সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে চট্টগ্রাম বিভাগে। মোট মৃত্যুর ২০ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে এই বিভাগে। অন্য বিভাগগুলোতে মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলক কম। সবচেয়ে কম মানুষের মৃত্যু হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। মোট মারা যাওয়াদের ২ দশমিক ১৪ শতাংশ (১০৭ জন) এই বিভাগের বাসিন্দা।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। পরে সেটা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। চীনে সংক্রমণ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীনের একটি যৌথ মিশন গত ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। তাতে বলা হয়, ষাটোর্ধ্ব এবং উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ ও ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। চীনে মারা যাওয়াদের ৮০ শতাংশের বয়স ছিল ষাটের ওপরে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও করোনায় আক্রান্ত মানুষের মধ্যে বয়স্ক বিশেষত ষাটোর্ধ্ব এবং একই সঙ্গে অন্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে। ইতিমধ্যে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। কিন্তু চীনের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশে কম বয়সী মানুষের মৃত্যু বেশি হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের বয়স ছিল ৬০ বছরের কম।

বয়স্কদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি হলেও শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষেরই মৃত্যু হচ্ছে করোনায়। এখন পর্যন্ত দেশে ২৩টি শিশুর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে সরকার। করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী ৪২ জন। ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী মারা গেছে ১১৭ জন। এ ছাড়া ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ২৯১ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ৬৪৮ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী এক হাজার ৩৫৯ জন এবং ষাটোর্ধ্ব ২ হাজার ৫২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।