স্বাস্থ্য খাতে জরুরি অবস্থা চলছে: বিএসএমএমইউ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ বলেছে, স্বাস্থ্য খাতে জরুরি অবস্থা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় মনে করে, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এখনই বিয়েসহ সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশ ও পর্যটন বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৮ দফা নির্দেশনা অপর্যাপ্ত, অস্পষ্ট এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এসব নির্দেশনা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে না।

দেশে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার বিএসএমএমইউ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন স্বাস্থ্যে জরুরি অবস্থা চলছে। শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার পর্যটন বন্ধ করলে চলবে না। কক্সবাজারসহ সারা দেশের পর্যটন বন্ধ করতে হবে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিদিন যে সমাবেশ, মিছিল বা মানববন্ধন হয়; তা বন্ধ করতে হবে।

‘করোনা পরিস্থিতি: বর্তমান প্রেক্ষিত ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সহ-উপাচার্য, একাধিক বিভাগের প্রধানসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনের পরে উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে। পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা অনুমানও করা যাচ্ছে না। জরুরি পরিস্থিতিতে যেমন মানুষকে কিছু কাজে বাধ্য করা হয়, সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতিতে একইভাবে মানুষকে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাধ্য করার উদ্যোগ নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনার যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনা হয়। উপাচার্য বলেন, জনস্বাস্থ্যবিষয়ক কোনো উদ্যোগ নেওয়ার আগে সরকার যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সঙ্গে পরামর্শ করে, তা নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করবেন।

গত বুধবার মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। একই দিন রাতে বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতালের মালিকদের সঙ্গে সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য শয্যার সংখ্যা বাড়ানোর অনুরোধ জানান। ওই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রতিদিন যদি ৫০০ থেকে ১ হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতে থাকে, তাহলে গোটা ঢাকা শহরকে হাসপাতাল করে ফেললেও রোগী রাখার জায়গা হবে না। এই মুহূর্তে যা করতে হবে, তা হচ্ছে যে যে স্থান থেকে করোনা সৃষ্টি হচ্ছে, সেসব স্থানে জরুরি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ১৮টি নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।

তবে বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য এই ১৮ দফা নির্দেশনা বাস্তবসম্মত নয় বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তাঁরা বলছেন, এ ধরনের নির্দেশনা এক থেকে দেড় মাস আগে আসা দরকার ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বে-নজির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, নতুন রোগী শনাক্তের ক্ষেত্রে প্রতিদিন রেকর্ড হচ্ছে। শনাক্ত হওয়া রোগীদের একটি অংশকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। ১০ থেকে ১৫ দিন পরে এ ধরনের রোগীদের জন্য শয্যা পাওয়া যাবে কি না, তা মূল্যায়ন করা দরকার।

এদের সেবার জন্য অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সরঞ্জাম লাগবে, বাড়তি জনবল লাগবে। আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এসব করা যাবে না। জরুরি আয়োজনের মধ্যে এসব করতে হবে। তিনি বলেন, ‘এখন সংসদ চলছে। সরকার দেশে জরুরি স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঘোষণা করতে পারে। এতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সহজ হবে।’

অন্যদিকে বিএসএমএমইউর ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান মো. সায়েদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সংক্রমণ বন্ধ করতে হলে ‘লকডাউন’ করতে হবে। ‘লকডাউন’ শব্দ ব্যবহার না করলেও লোক চলাচল বন্ধ করতে হবে, বিশেষ করে যেসব জায়গায় সংক্রমণ বেশি। দ্বিতীয়ত, নমুনা পরীক্ষার পরিমাণ বাড়িয়ে রোগী শনাক্ত করে তাঁদের চিকিৎসার আওতায় নিতে হবে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের এই দুটি মৌলিক পন্থা বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা ১৮ দফা নির্দেশনায় নেই।