স্বাস্থ্যবিধি না মানতে যত অজুহাত

মুরাদপুর মোড়ে অনেকের মুখে নেই মাস্ক।
ছবি: জুয়েল শীল

গাড়ির কোনো আসন ফাঁকা নেই। এরপরও গাদাগাদি করে যাত্রী তুলছিলেন চালকের সহকারীরা। আবার তাঁদের কারও মুখে মাস্ক নেই। চালকদেরও একই অবস্থা। যাত্রীদের কারও মাস্ক আছে, কারও নেই।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় এ চিত্র দেখা যায় চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর এলাকায়। দেশে করোনা সংক্রমণের হার বৃদ্ধির কারণে সরকার বিভিন্ন বিধিনিষেধ জারি করেছে। কিন্তু সেগুলো মানার বিষয়ে অনীহা রয়েছে প্রায় সবারই।

গণপরিবহন, কাঁচাবাজার, রেস্তোরাঁ—প্রায় সব জায়গায় কার্যক্রম চলছে স্বাভাবিক সময়ের মতো। কোথাও করোনার বিধিনিষেধ মানার ব্যাপারে তেমন কোনো গরজ নেই কারও। মাস্কসহ স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়ে অজুহাতেরও শেষ নেই।

গত শনিবার থেকে গাড়িতে যত আসন তত যাত্রী চলার কথা। কিন্তু চট্টগ্রামের কোথাও এ নিয়ম মানতে দেখা যায়নি।

আজ নগরের মুরাদপুর মোড়ে দেখা যায়, বাস, মিনিবাস, টেম্পোসহ প্রায় সব গাড়ি যাত্রীতে ঠাসা। গাড়ির ভেতরে যাত্রী ভর্তি থাকার পরও গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা হয়।

মুখে নেই মাস্ক, তুলছেন যাত্রী। মুরাদপুর মোড়, চট্টগ্রাম, ১৮ জানুয়ারি
ছবি: জুয়েল শীল

একটি বাসের চালক সহকারী মো. হৃদয়ের মুখে মাস্ক ছিল না। মাস্ক না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাস্ক পকেটে আছে। যাত্রী তোলার জন্য হাঁকডাক করতে হয় বলে আপাতত পকেটে রাখছেন। আরেক চালকের সহকারী আলতাফ মিয়া বলেন, মাস্ক পরতে অস্বস্তি লাগে।

কয়েকজন চালকের সহকারীর মাস্ক থাকলেও তা ছিল থুতনিতে। আর চালকদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক ছিল না।

মুরাদপুর মোড়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন নগর পুলিশের ট্রাফিক পরিদর্শক ইসরাফিল মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চালক ও তাঁর সহকারীদের সচেতন করতে তাঁরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছেন। মাস্ক নিয়মিত বিলিও করেন। কিন্তু দেশে যে করোনা বাড়ছে, তা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই চালকদের। তাঁরা বিষয়টি আদৌ জানে কি না সন্দেহ। এ জন্য ব্যাপক প্রচারণার দরকার আছে। আর না মানলে প্রয়োজনে জরিমানা করতে হবে।

কাজীর দেউড়ি কাঁচাবাজারেও অনেক দোকানদারের মুখে নেই মাস্ক, ১৮ জানুয়ারি
ছবি: জুয়েল শীল

নগরের কাজীর দেউড়ি কাঁচাবাজারে সবজি বিক্রেতাদের কারও মুখে মাস্ক ছিল না। এ বাজারে প্রায় ১৫ জন সবজি বিক্রেতা আছেন। তাঁদের সঙ্গে আছেন এক-দুজন করে সহকারী। মাছের বাজারেও একই অবস্থা। মাত্র একজনের মুখে মাস্ক ছিল। মোহাম্মদ লিটন নামের ওই মাছ বিক্রেতা বলেন, দেশের করোনা পরিস্থিতি খারাপ। তাই সচেতন থাকার জন্য সব সময় মুখে মাস্ক রাখেন।
আর পাশের আরেক মাছ বিক্রেতা বলেন, মুখে মাস্ক থাকলে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলতে অস্বস্তি লাগে। ভালো করে দরদামও করা যায় না। তাই মাস্ক পরেন না।

বাজারের প্রবেশমুখে সবজি বিক্রেতা হারাধন দত্তের দোকান। তাঁর মুখেও মাস্ক ছিল না। জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, ‘আমি খুব সচেতন। সব সময় মুখে মাস্ক থাকে। এখন পান খাচ্ছি। এ জন্য খুলে রেখেছি।’ কথা বলা শেষ হওয়ার পরই পকেট থেকে মাস্ক বের করেন তিনি।

পাশাপাশি মাছের দোকান। কিন্তু কেউ মাস্ক পরে নেই। কাজীর দেউড়ি কাঁচাবাজার, চট্টগ্রাম
ছবি: জুয়েল শীল

সরকারি বিধিনিষেধ অনুযায়ী, হোটেল বা রেস্তোরাঁয় বসে খেতে চাইলে করোনার টিকার সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু চট্টগ্রামের খাবারের দোকানগুলোয় এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। কাজীর দেউড়ি এলাকার ক্যাফে লায়লার ভেতরে নাশতা করছিলেন লোকজন। বন্ধুদের নিয়ে এখানে খেতে আসেন আরাফাত হোসেন। তিনি বলেন, তাঁদের কাছে কেউ টিকার সনদ চাননি। আর তাঁরাও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন।

রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান করোনার টিকার সনদের বিষয়ে বিধিনিষেধ থাকার ব্যাপারটা ভালোভাবে জানেন না বলে দাবি করেন। মালিকপক্ষ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এ ধরনের কোনো নির্দেশনা পাননি বলে জানান। তিনি বলেন, কোথাও তো এ নিয়ম মানা হচ্ছে না।