হঠাৎ বাড়ল অক্সিজেন সিলিন্ডার, কমল হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা

এক দিনের ব্যবধানে অক্সিজেন সরবরাহসংক্রান্ত যন্ত্রপাতির দুই ধরনের তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছিল, সারা দেশে করোনা রোগীর চিকিৎসায় ২৪ হাজার ৪৬৪টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে। এর পরদিন গতকাল শনিবার বলেছে, সংখ্যাটি ২৭ হাজার ৮৩। এক দিনে ১১ শতাংশ অক্সিজেন সিলিন্ডার বেড়েছে।

শুক্র ও শনিবারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাশাপাশি রাখলে এই পার্থক্য চোখে পড়ে। অধিদপ্তর দেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা তখনই বাড়িয়ে দেখাল, যখন করোনা হাসপাতালে অক্সিজেন–সংকটে মানুষ মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একাধিক সংবাদপত্র এই সমস্যা নিয়ে প্রতিবেদন ছেপেছে। জাতীয় সংসদেও অক্সিজেন–সংকট নিয়ে কথা উঠেছে।

অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়লেও কমেছে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার দেশে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬৭০। গতকাল সংখ্যাটি কমে ১ হাজার ৫৪৬ হয়েছে। কমেছে ৭ শতাংশ। হঠাৎ কেন সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ল বা কেন ক্যানুলার সংখ্যা কমল, তার কোনো ব্যাখ্যা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সব সময় ঠিক তথ্য থাকে না। মহামারি শুরুর পর থেকে বেশ কয়েকবার তথ্যের অসংগতি দেখা গেছে। শুক্রবার পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, নড়াইল জেলার করোনা হাসপাতালে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার সংখ্যা ২০০। এ রকম মোট আটটি হাসপাতালের ক্যানুলার সংখ্যায় অসংগতি ধরা পড়ে প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের চোখে। তা নিয়ে গতকাল প্রতিবেদন ছাপা হয় প্রথম আলোতে। প্রথম আলো খোঁজ নিয়ে জানে, নড়াইলে ক্যানুলা ২টি, ২০০টি নয়।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, নড়াইলে ক্যানুলা ২টি। গতকালও অধিদপ্তর বলেছে, জয়পুরহাট সদর হাসপাতালে ক্যানুলার সংখ্যা ২। অথচ গতকাল সন্ধ্যায় হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা খন্দকার মিজানুর রহমান প্রথম আলোর প্রতিনিধিকে বলেন, হাসপাতাল কোনো হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা চালু নেই।

এ ধরনের অসংগতি আরও হাসপাতালের ক্ষেত্রে আছে। প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছেন, ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৬টি, কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ৩টি, মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ২টি, নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ৩টি, টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ৪টি, পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে ২টি ক্যানুলা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ৫টি নাজাল ক্যানুলা পাঠিয়েছিল। ৫টি ক্যানুলাই ব্যবহৃত হচ্ছে না। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকালের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এগুলো সচল দেখানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিদিনই যন্ত্রপাতি স্থাপন বা মেরামতের কাজ চলতে থাকে। হিসাবে ভুলত্রুটির এটি অন্যতম কারণ।’

করোনা রোগীদের চিকিৎসায় অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। একসঙ্গে বেশি অক্সিজেন প্রয়োজন হলে তা সিলিন্ডারের অক্সিজেন দিয়ে সামলানো সম্ভব হয় না। এ জন্য প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা এবং হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার কথা মহামারির প্রায় শুরু থেকে বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে করোনার জন্য নির্ধারিত ১০০টি সরকারি হাসপাতালের মধ্যে ২১টিতে এই ব্যবস্থা করতে পারেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা যুক্ত থাকে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন পদ্ধতির সঙ্গে। গতকাল প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা ৫০টি জেলায় খোঁজ নিয়েছেন। তাতে দেখা গেছে, ১০টি জেলার করোনা হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা নেই। আংশিক চালু হয়েছে একটি হাসপাতালে, চালু হয়নি একটি হাসপাতালে।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে সংশ্লিষ্ট জেলার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা]