১৪ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ টিকার কী হবে?

দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিচ্ছেন এক নারী। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে
ফাইল ছবি

প্রায় ১৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষের দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও করোনাভাইরাসের টিকার এই সংকটের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছে। তবে কবে নাগাদ সংকট কাটবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

এখন বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশ এই টিকা আমদানি করছে। তবে গত মার্চের শেষ দিকে সেরামের টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এতে বাংলাদেশের পরের চালান পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, যা এখনো কাটেনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে এখন পর্যন্ত টিকার যে মজুত আছে তাতে আরও প্রায় ১২ লাখ মানুষ দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাবেন। মূলত যাঁরা ১৪ মার্চের পর প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছিলেন, তাঁদের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে এই অনিশ্চয়তা। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকা প্রথম ডোজ দেওয়ার আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছিল। তবে তা ১২ সপ্তাহ পর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে দেওয়া যায়। সে হিসাবে এই ১৪ লাখের বেশি মানুষের টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করতে হলে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার চালান আনতে হবে।

অবশ্য সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ঈদুল ফিতরের আগেই চীন থেকে টিকা আসার কথা রয়েছে। রাশিয়া থেকেও টিকা আনার উদ্যোগ আছে। তবে এসব টিকার প্রতিটি আলাদা। যাঁরা কোভিশিল্ড প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাঁরা দ্বিতীয় ডোজের ক্ষেত্রে চীনের বা রাশিয়ার টিকা নিতে পারবেন কি না, বা নিলে তা কার্যকর হবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নন কেউ। তাই ঈদের আগে এই টিকা এলেও যাঁদের দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে অনিশ্চয়তা, তাঁদের অনিশ্চয়তার মধ্যেই থাকতে হচ্ছে।

বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে অধিদপ্তরের অন্যতম মুখপাত্র রোবেদ আমিন বলেন, সরকারের হাতে এক কোটি দুই লাখ ডোজ ভ্যাকসিন ছিল। এখন নতুন ভ্যাকসিন না এলে সংকট সৃষ্টি হবে। তবে ঈদের আগেই চীন থেকে টিকা আসার একটি সুযোগ হয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়া থেকে স্পুতনিক-ভি ভ্যাকসিন আসার ব্যাপারে ছাড়পত্র স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। ছাড়পত্র দেওয়া হলে রাশিয়া থেকেও ভ্যাকসিন আসবে। এ ছাড়া রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যালস মডার্নার ভ্যাকসিন আমদানি করার আবেদন করেছে। এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।

করোনাভাইরাস টিকা
প্রতীকী ছবি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র বলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রথম ডোজের পর ১২ সপ্তাহ, এমনকি তার পরও দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যেতে পারে। তাই দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে ভয়ের কারণ নেই।

রোবেদ আমিন বলেন, মিক্সিং ভ্যাকসিন বা অক্সফোর্ডের টিকার এক ডোজ দেওয়ার পর অন্য কোম্পানির টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে কি না, এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য-উপাত্ত এখন পর্যন্ত নেই। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এ-সংক্রান্ত গবেষণা চলছে। ফলাফল পাওয়া গেলে সুবিধা হবে। তবে অতীতে জরুরি পরিস্থিতিতে ‘মিক্সিং ভ্যাকসিন’ দেখা গেছে।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনার টিকা
প্রতীকী ছবি: এএফপি

প্রসঙ্গত, গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে প্রথম ডোজের গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া শুরু হয় এর আট সপ্তাহ পর ৮ এপ্রিল থেকে। টিকার সংকট দেখা দেওয়ায় গত ২৭ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া বন্ধ রাখা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বাংলাদেশের হাতে মোট ১ কোটি ২ লাখ ডোজ টিকা ছিল। ইতিমধ্যে প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৮১১ জন। তাঁদের সবার দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিশ্চিত করতে মোট ১ কোটি ১৬ লাখ ৩৯ হাজার ৬২২ ডোজ টিকা প্রয়োজন।

বুধবার পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন ৩২ লাখ ১০ হাজার ৫০৯ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া শেষে বুধবার পর্যন্ত সরকারের হাতে টিকা মজুত আছে ১১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৮০ ডোজ। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত সরকারের হাতে যে মজুত আছে, তা দেওয়া হলে মোট ৪৩ লাখ ৮০ হাজার ১৮৯ জন মানুষ ২ ডোজ করে টিকা পাবেন। সে হিসাবে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন এমন ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬২২ জনের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে যাচ্ছে।