২৬৯১ বাংলাদেশির মৃত্যু ২৩ দেশে

গত দুই মাসে মধ্যপ্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে করোনায় বাংলাদেশিদের মৃত্যুর হার অনেক কমেছে। তবে ব্যতিক্রম বাহরাইন।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করে গত বছরের গোড়া থেকে। এরপর বিশ্বের ২৩ দেশে এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৯১ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের ছয় দেশে। ওই ৬ দেশে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১ হাজার ৬৯০ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে।

অবশ্য বিভিন্ন মিশনে কর্মরত বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, করোনার সংক্রমণে বিদেশে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর সংখ্যাটা একেবারে নির্ভুল নয়। কোনো কোনো দেশে মৃত্যুর যে সংখ্যাটা পাওয়া যায়, বাস্তবে মৃত্যুর সংখ্যা তার চেয়ে বেশি। সাধারণত মৃত্যুর ঘটনা বা বিশেষ কোনো জটিলতায় না পড়লে কেউ দূতাবাসে গিয়ে কিছু জানায় না। ফলে দূতাবাসের পক্ষে প্রকৃত সংখ্যাটা জানা সম্ভব হয় না।

মধ্যপ্রাচ্যের যে ছয় দেশে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি মারা গেছেন, সে দেশগুলো হলো সৌদি আরব, বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই দেশগুলোয় প্রায় ৪০ লাখ বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন।

প্রবাসী বাংলাদেশি, অভিবাসী কর্মী ও কূটনৈতিক সূত্রগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বাইরে করোনায় প্রথম বাংলাদেশির মৃত্যু হয় গত বছরের ১৮ মার্চ, যুক্তরাষ্ট্রে। একই দিনে বাংলাদেশেও করোনায় প্রথম মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। শুরুতে করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিনই বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর আসছিল। যুক্তরাজ্য থেকেও প্রায় একই সময়ে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর খবর আসতে থাকে। অবশ্য গত দুই মাসে মধ্যপ্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দেশগুলোয় করোনায় বাংলাদেশের নাগরিকদের মৃত্যুর হার অনেক কমেছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ব্যতিক্রম বাহরাইন। শুধু মে মাসেই দেশটিতে ৩২ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো পাশ্চাত্যের দেশগুলোয় করোনায় মারা যাওয়া বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশ ওই দেশগুলোর নাগরিকত্ব পেয়ে গিয়েছিলেন। তবে অন্যান্য দেশে, বিশেষ করে যেসব দেশে বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন, সেসব দেশে করোনায় মারা যাওয়া বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশই শ্রমিক।

মধ্যপ্রাচ্যের ছয় দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা, প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠনের নেতা ও প্রবাসী কর্মীদের কাছ থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই দেশগুলোয় ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত করোনায় ১ হাজার ৬৯০ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। এর মধ্যে সৌদি আরবে ১ হাজার ১২৩ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৬৫ জন, কুয়েতে ১০৭ জন, বাহরাইনে ৮০ জন, ওমানে ৭০ জন ও কাতারে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রে ৪৪৫ জন, যুক্তরাজ্যে ৪১২, ইতালিতে ৪৩, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩০, লেবাননে ৩০, কানাডায় ৯, সুইডেনে ৮, ফ্রান্স ও স্পেনে ৭ জন করে, বেলজিয়ামে ৩, পর্তুগালে ২ এবং ভারত, মালদ্বীপ, কেনিয়া, লিবিয়া ও গাম্বিয়ায় একজন করে মোট ১ হাজার ১ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় আবার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় নতুন করে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে।

বাহরাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম গত শুক্রবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসে বাহরাইনে এখন পর্যন্ত ৮০ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। সংক্রমণ আবার বাড়ছে। বাহরাইনে বসবাসকারী সবাইকে টিকা নিতে শুরু থেকেই সরকার অনেক তাগিদ দিচ্ছে। যাঁরা টিকা নেননি, তাঁদের ওপর অনেক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এই অবস্থায় যেসব বাংলাদেশি কর্মী টিকা নেননি, তাঁদের টিকাদান নিশ্চিত করতে দূতাবাস বাহরাইনের কর্তৃপক্ষের সহায়তার অনুরোধ জানিয়েছে।

এদিকে ইতালি, স্পেনসহ ইউরোপের দেশগুলোয় করোনার সংক্রমণ অনেক কমে এসেছে। এসব দেশে বাংলাদেশিদের সংক্রমিত হওয়ার ও মৃত্যুর হার কমে এসেছে। যাঁরা করোনার দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন, তাঁরা ওই দুই দেশে ভ্রমণ করার সুযোগও পাচ্ছেন।

জানতে চাইলে ইতালিতে বাংলাদেশের শ্রম কাউন্সেলর মো. আরফানুল হক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, করোনার সংক্রমণ কমে আসায় লোকজনের চলাচল শুরু হয়েছে। বিদেশ থেকে লোকজনের আসাও শুরু হয়েছে। দূতাবাসের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চার থেকে পাঁচ শ লোককে কনস্যুলার সেবা দেওয়া হচ্ছে।