শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও ২ মামলা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাফাইল ছবি: বাসস

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা দায়েরের তথ্য পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার ও আগের দিন সোমবার থানা ও আদালতে এসব মামলা করা হয়। এ ছাড়া ছাত্র–জনতার আন্দোলন ঘিরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও তিনটি হত্যা মামলার আবেদন জমা পড়েছে আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এ আবেদন করেছেন নিহতদের স্বজনেরা।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয় ঢাকার আদালতে। এর পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত ২২০টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৮৮টি মামলায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও তাঁর সরকারের সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) বিভিন্ন পেশার লোকজনকে আসামি করা হয়েছে।

বিএনপি কর্মীকে হত্যা

প্রায় দুই বছর আগে রাজধানীর পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা ও মকবুল নামের এক বিএনপি কর্মীকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ২৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মাহফুজার রহমান নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে সোমবার পল্টন থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ডাকা এক দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনের কর্মসূচিতে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতা–কর্মী ঢাকায় জড়ো হতে থাকেন। ৭ ডিসেম্বর বিকেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ, যুগ্ম কমিশনার মেহেদী হাসান ও বিপ্লব কুমারের নেতৃত্বে ৭০ থেকে ৮০ জন পুলিশ সদস্য বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় আসামিরা বিএনপির কার্যালয়ের বিভিন্ন আসবাবপত্র, কম্পিউটার, নগদ অর্থ, মুঠোফোন লুট করে নিয়ে যান, যার আনুমানিক মূল্য ৪৭ লাখ টাকা। অভিযানে বিএনপির কার্যালয় ও এর আশপাশে থাকা দলটির হাজার হাজার নেতা–কর্মীর ওপর হামলা চালানো হয়।

এই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক–ই–এলাহী চৌধুরী, বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুব–ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে আসামি করা হয়েছে। আসামির তালিকায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনও রয়েছেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে আগুন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৫২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ঢাকার সিএমএম আদালতে এ মামলা করেন মেহেদী হাসান। আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলায় বলা হয়েছে, গত ১৮ জুলাই বেলা ৩টার দিকে রাজধানীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. নাসির, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মফিজসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগের ৩০০ থেকে ৪০০ জন নেতা–কর্মী মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরসহ আশপাশের দোকানপাটে আগুন লাগান। মামলায় আসামিদের তালিকায় সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক সড়ক, যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিম, সিলেট–৩ আসনের সাবেক সদস্য হাবিবুর রহমান রয়েছেন।

উত্তরায় গুলি করে হত্যা

রাজধানীর উত্তরায় জসীম নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার আবেদন জমা পড়েছে। ঢাকার সিএমএম আদালতে এ আবেদন করেন জসীমের স্ত্রী ফরিদা। জসীমের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, ৫ আগস্ট বেলা ৩টার দিকে শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, তাঁতী লীগ ও তাঁদের অঙ্গসংগঠনের সদস্যরা ছাত্র–জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলি করেন। তখন জসীম গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয়। পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান, সাবেক সংসদ সদস্য খসরু চৌধুরী, হাবিব হাসান, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আজমত উল্লাহ খানকে আসামি করা হয়েছে।

রিকশাচালককে গুলি করে হত্যা

রাজধানীর ফুলবাড়িয়া এলাকায় রিকশাচালক মনিরুজ্জামানকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৫২ জনের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। মনিরুজ্জামানের মামা জাহাঙ্গীর খান বাদী হয়ে এ আবেদন করেন। এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থানার ওসির কাছে প্রতিবেদন চেয়েছেন আদালত।

মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্ট বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে ছাত্র–জনতার মিছিলে ছাত্রলীগের বাইজিদ হাওলাদারসহ অন্যরা হামলা চালান। তখন আসামি বাবু কাজল কৃষ্ণ গুলি করে মনিরুজ্জামানকে হত্যা করেন।

মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, আসাদুজ্জামান খান, সাবেক সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাবেক হুইপ নূরে আলম লিটন চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে।  

মিরপুরে যুবককে গুলি করে হত্যা

রাজধানীর মিরপুরে আসিফ নামের এক যুবককে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ২০৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার আবেদন জমা পড়েছে। ঢাকার সিএমএম আদালতে এ মামলা নেওয়ার আবেদন করেন আসিফের বাবা আমজাদ হোসেন। আসিফের মৃত্যুর ঘটনায় কোনো মামলা হয়েছে কি না, সেটি জানানোর জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলার আরজিতে অভিযোগ করা হয়, রাজধানীর মিরপুরে রাব্বানি হোটেলের সামনে ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার মিছিল হচ্ছিল। মিছিলে অংশ নেন আসিফ। তখন পুলিশসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ অন্যরা মিছিলে হামলা করে। তখন গুলিবিদ্ধ হন আসিফ। পরে তাঁকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও ওবায়দুল কাদের, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে আসামি করা হয়েছে।