আটা-ময়দা দিয়ে তাঁরা তৈরি করতেন ওষুধ

আয়ুর্বেদিক ওষুধের আড়ালে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল ওষুধ তৈরি চক্রের সঙ্গে জড়িত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)
ছবি: সংগৃহীত

আয়ুর্বেদিক ওষুধের আড়ালে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল ওষুধ তৈরি চক্রের সঙ্গে জড়িত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল রোববার পুরান ঢাকার মিটফোর্ড, কুমিল্লা এবং সাভার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবি বলছে, আটা-ময়দা ব্যবহার করে দেশি ৯টি কোম্পানি এবং বিদেশি একটি কোম্পানির নকল ওষুধ তৈরি করত চক্রটি। তাদের তৈরি নকল ওষুধের মধ্যে রয়েছে,ন্যাপ্রোক্সেন প্লাস, প্যানটোনিক্স, গরু মোটাতাজার নিষিদ্ধ ওষুধ পেরিএকটিন, খোলা মাইজিদ-৫০০ ট্যাবলেট।

আজ সোমবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই চক্র সম্পর্কে জানানো হয়।

ডিবি জানায়, অভিযানে বিপুল পরিমাণ ভেজাল ওষুধ জব্দ করা হয়। এ সংখ্যা এযাবৎকালের ডিবির পরিচালিত অভিযানের মধ্যে সর্বোচ্চ। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন হিমালয় ল্যাবরেটরিজের মালিক মোর্শেদ আলম শাওন (৩৫), সাভারের গোডাউনের কবির হোসেন (৪৪), কুমিল্লায় নকল ওষুধের ডিস্ট্রিবিউটর আল আমিন চঞ্চল (৩৫), নকল ওষুধ প্যাকেজিংয়ে জড়িত মো. নাজিম উদ্দিন (৪২), গোডাউন রক্ষণাবেক্ষণকারী মো. তৌহিদ (২৮)। এ ছাড়া গোডাউন ও ওষুধ তৈরি কারখানায় অপারেটর ও শ্রমিক আইনুল ইসলাম (৩২), মো. সাগর (১৯), মো. আবির (২১), মো. রুবেল (২৩), মো. পারভেজ (৩২)।

ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘অভিযানে আমরা দেখতে পাই, এই প্রতিষ্ঠানটি দেশি-বিদেশি ৯টি ব্র্যান্ডের ওষুধ নকল করছে। জব্দ করা ওষুধের মধ্যে রয়েছে ইনসেপ্‌টা ফার্মাসিউটিক্যালসের প্যানটোনিক্স-২০, এমজি ৯ লাখ ১৮ হাজার ৪৫৬টি, স্কয়ারের সেকলো-২০ ৪ লাখ ১০ হাজার ৪০০টি, দি এক্‌মি ল্যাবরেটরিজের মোনাস-১০ ৫৮ হাজার ৫০টি, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের সার্জেল ক্যাপসুল ৯৬ হাজার, অপসোনিন ফার্মার ফিনিক্স-২০ ৫৮ হাজার ৮০০, কুমুদিনি ফার্মার অ্যান্টিবায়োটিক দিজা ৬ হাজার ২৪০টি, আমবে ফার্মাসিউটিক্যালসের মাইজি–৫০০ ৬ হাজার ৪৮০ পিস, জেনিথের ন্যাপ্রোক্সেন প্লাস ৪১ হাজার ৪০০টি, ব্রোনসন-ইউএসএর জিবি-৬০ ৩০০০টি ।

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ইউনানি আয়ুর্বেদিক কোম্পানিগুলোর ট্যাবলেট ফরম্যাটে আসার পর নকল ও ভেজাল ওষুধের প্রবণতা বেড়েছে। যেভাবে ব্র্যান্ডের ওষুধ নকল ও ভেজাল হচ্ছে, তা সামনে করোনার চেয়েও মহামারি আকার ধারণ করবে। তাই উচিত এখনই এর লাগাম টানা।

এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, গত ছয় মাসে মোট ৪৪ জন গ্রেপ্তার ও মামলা হয়েছে ১৪টি। শুধু বিশেষ ক্ষমতা আইনের এই মামলাগুলো হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে মামলা ও অভিযান আরও বাড়বে।

ডিবি জানায়, চক্রটি ফয়েল পেপার দিয়ে সুন্দর করে মোড়কজাত করেছে। বোঝার কোনো উপায়ই নেই আসল না নকল ওষুধ। এই ওষুধের গুণগত মান বলতে কিছু থাকে না। আটা বা ময়দার সঙ্গে রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে তৈরি এসব নকল ওষুধ প্যাকেজিং করে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।