উপবৃত্তির অর্থে প্রতারক চক্রের হাত

অন্তত নয়টি জেলার দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা তুলে নিয়েছে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র।

  • প্রতারক চক্রের সদস্যরা নগদের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে গোপন পিন নম্বর জেনে টাকা তুলে নেন।

  • প্রতারকদের ১৪৩টি মুঠোফোন নম্বর শনাক্ত করা হয়েছে।

  • নগদের মামলার পর তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ।

প্রতীকী ছবি

হাসান ও শামীমা ভাইবোন। তাদের বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার চর মাঘারদিয়া গ্রামে। তারা পড়ে পবার চর নবীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। হাসান পঞ্চম আর শামীমা তৃতীয় শ্রেণিতে। দরিদ্র পরিবারের হাসান ও শামীমা প্রতি মাসে উপবৃত্তির ৩০০ টাকা পেয়ে আসছিল। সরকারি এই উপবৃত্তির টাকা আসত তাদের মা আদরা বেগমের মুঠোফোনে। গত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে আদরার মুঠোফোনে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ফোন দেন। নিজেকে পরিচয় দেন মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘নগদের’ একজন কর্মকর্তা। কৌশলে ওই ব্যক্তি আদরার কাছ থেকে নগদ অ্যাকাউন্টের গোপন পিন নম্বর জেনে নেন। কিছুক্ষণ পরে হাসান ও শামীমার উপবৃত্তির টাকা তুলে নেন সংঘবদ্ধ ডিজিটাল প্রতারক চক্রের সদস্যরা।

আদরা বেগম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আমার দুই ছেলেমেয়ে উপবৃত্তির টাকা পেত। সেই টাকায় ওদের খাতা-কলমসহ অন্যান্য জিনিস কিনে দিতাম।’

কেবল আদরা বেগমের সন্তানদের নয়, দেশের অন্তত নয়টি জেলার শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্যরা।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে গত ২৫ মার্চ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি যৌথ সভা হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন বলছে, প্রতারক চক্রের সদস্যরা নগদের কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে অভিভাবকদের কাছ থেকে প্রথমে গোপন পিন নম্বর জেনে নেন। পরে শিক্ষার্থীদের টাকা তুলে নিয়ে প্রতারকেরা মুঠোফোন নম্বর বন্ধ করে দেন। এমন প্রতারণার শিকার হয়ে উপবৃত্তির টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

এ ঘটনায় গত ২ এপ্রিল নগদের পক্ষ থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে রাজধানীর বনানী থানায় মামলা করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার হননি।

মামলার বাদী ও নগদের কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নগদকে এই প্রতারণার কথা লিখিতভাবে জানানো হয়। পরে নগদের অনুসন্ধানেও উঠে আসে এ প্রতারণার বিষয়। ইতিমধ্যে প্রতারকদের ১৪৩টি মুঠোফোন নম্বর শনাক্ত করা হয়েছে।

নগদের করা মামলাটি প্রথমে তদন্ত করছিল গুলশান থানা-পুলিশ। তবে তারা কাউকে ধরতে পারেনি। পরে মামলাটির তদন্তভার পায় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। তবে তারাও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে যাঁরা শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (আইন) এস এম তারিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জেলায় জেলায় অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাটি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ ব্যাপারে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মামলাও হয়েছে।