কেশরহাট পৌর মেয়রের কাণ্ড

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌর মেয়র পৌরসভার উন্নয়নকাজের জন্য বরাদ্দ পাওয়া অর্থ ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করেছেন। আবার সুবিধামতো কিস্তি ইজারামূল্য নিয়ে হাট ইজারা দিয়েছেন। এসব অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত মঙ্গলবার তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছে।
কেশরহাট পৌর মেয়রের নাম আলাউদ্দিন আলো। তিনি মোহনপুর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, কেশরহাট পৌর মেয়র আলাউদ্দিন আলো ২০১১-১২ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে কেশরহাট পৌরসভার উন্নয়ন-সহায়তা বাবদ দুই কিস্তিতে মোট ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ পান। বরাদ্দপত্রের ৭ নম্বর ক্রমিকে বলা হয়েছে, এ অর্থ কোনোভাবেই পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যতীত অন্য কোনো কাজে ব্যয় করা যাবে না। এমনকি বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যালিটি ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (বিএমডিএফ) ঋণের কিস্তিও এ অর্থ থেকে পরিশোধ করা যাবে না। এ টাকা পৌরসভার ব্যাংক হিসাবে ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর জমা হয়। এর পরে ১৬ নভেম্বর ব্যাংক থেকে ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ওঠানো হয়। এ টাকা মোহনপুর বাজারে অবস্থিত শামীমুল ইসলামের মালিকানাধীন ‘মুন মোটরস’কে ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে পৌরসভার সাতজন কাউন্সিলর দুদকে অভিযোগ করেন। এরপর ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা এক বছর ব্যবহারের বিনিময়ে ৬০ হাজার টাকা সুদসহ পৌরসভার তহবিলে জমা দেওয়া হয়।
প্রাথমিক তদন্ত শেষে দুদকের রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিজিয়া খাতুন বাদী হয়ে গত ৩১ মার্চ মেয়র আলাউদ্দিন আলোর বিরুদ্ধে মোহনপুর থানায় একটি মামলা করেন।
অপর দিকে দুটি অর্থবছরের জন্য পৌরসভার একটি হাট ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রেও মেয়র স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইজারাদারকে তাঁর সুবিধামতো কিস্তিতে ইজারামূল্য পরিশোধের অবৈধ সুযোগ করে দিয়েছেন। ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে একই অনিয়ম করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, ইজারা পাওয়ার দিন থেকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে ইজারাদারকে ইজারামূল্য পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। এ জন্য প্রথম অর্থবছরের জামানতের বাজেয়াপ্তযোগ্য ২ লাখ ৯৫০ টাকা এবং পরের অর্থবছরের ২ লাখ ৯৪ হাজার ৯০০ টাকা বাজেয়াপ্ত করার কথা ছিল। কিন্তু মেয়র তা বাজেয়াপ্ত করেননি, বরং ইজারাদারের সুবিধামতো কিস্তিতে টাকা পরিশোধের অবৈধ সুযোগ দিয়েছেন।
এ অভিযোগে রিজিয়া খাতুন একই দিন (৩১ মার্চ) মোহনপুর থানায় আরও দুটি মামলা করেন।
অভিযোগের বিষয়ে মেয়র আলাউদ্দিন আলো বলেন, টাকা বিনিয়োগের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। তিনি সুদসহ ওই টাকা পৌরসভার তহবিলে জমা দিয়েছেন। হাট ইজারা দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, সব পৌরসভাই এভাবে কাজ করে। অন্যথায় ইজারামূল্য বেশি পাওয়া যায় না।
এ ব্যাপারে রিজিয়া খাতুন বলেন, কোনোভাবেই মেয়র উন্নয়ন খাতের টাকা পৌরসভার উন্নয়ন ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ করতে পারেন না। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে নিজে লাভবান হয়েছেন এবং অন্যকে লাভবান করেছেন। তিনি অসৎ উদ্দেশ্যে সরকারি বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করে বরাদ্দপত্রের শর্ত ভঙ্গ করেছেন। হাট ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রেও মেয়র ইজারাদারকে স্বাধীনভাবে সুবিধামতো কিস্তিতে অর্থ পরিশোধের অবৈধ সুযোগ দিয়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।