খাদ্য চলাচলে ১০ বছরের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক

সারা দেশে খাদ্য চলাচলে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সঙ্গে খাদ্য চলাচলে দুর্নীতির মাধ্যমে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও খাদ্য পরিবহনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অর্জিত জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। গত ১০ বছরে খাদ্য চলাচলে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের বিষয়টি দুদকের একটি সূত্র প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে।

গত ১০ বছরের খাদ্য চলাচল-সংক্রান্ত রেকর্ড চেয়ে সম্প্রতি খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছে দুদক। ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত খাদ্য অধিদপ্তরের অধীনে দেশের খাদ্যশস্য চলাচল (গ্রহণ, মজুত, সরবরাহ, ট্রানজিট, ঘাটতি ইত্যাদি) সংযোগে প্রতিবছরকে চারটি স্তরে বিভক্ত করে রেকর্ডপত্র চেয়েছে সংস্থাটি।

দুদকের উপপরিচালক (অনু ও তদন্ত-১) আবু নাসেরের সই করা চিঠি খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে ২০০৭ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে সারা দেশে খাদ্য চলাচলে ব্যাপক দুর্নীতি এবং খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও খাদ্য পরিবহনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে তথ্য সরবরাহের অনুরোধ জানানো হয়।

চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক দিন আগে খাদ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (সংস্থাপন) মামুন আল মোর্শেদ চৌধুরীর সই করা এক চিঠিতে দুদককে সহায়তায় রেকর্ডপত্র সরবরাহ করতে বর্তমান পরিচালককে (চসসা) তথ্য সরবরাহের জন্য বলা হয়েছে।

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. আরিফুর রহমান অপু প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাদ্য চলাচলের যে বিষয়টি অনুসন্ধান করা হচ্ছে, সেটা নিয়ে দুদক তথ্য চেয়েছে। আমরা সে অনুসারে তথ্য দেব।’

দুদক সূত্র জানায়, সবচেয়ে বেশি অভিযোগ উঠেছে অধিদপ্তরের চলাচল, সংরক্ষণ ও সাইলো (চসসা) বিভাগের পরিচালক চিত্ত রঞ্জন ব্যাপারীর বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিত্ত রঞ্জন বলেন, যেহেতু দুদক বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখছে, তারা দেখুক কী পায়।

অভিযোগের পাশাপাশি চিত্ত রঞ্জনকে অপসারণের দাবি জানিয়ে আল্টিমেটাম দিয়েছে খাদ্য বিভাগের তালিকাভুক্ত নৌপরিবহন ঠিকাদারদের সংগঠন খুলনা মেজর কেরিয়ার সমিতি ও খুলনা আঞ্চলিক নৌপরিবহন ঠিকাদার সমিতি (খাদ্য)। গত মাসে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর তারা চিঠি পাঠায়।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, মোংলা সাইলো থেকে নৌপথে বিভিন্ন গন্তব্যে খাদ্যশস্য পরিবহনের অনুকূলে চলাচল সূচি দেওয়ার জন্য ঘুষ নেন চিত্ত রঞ্জন। পরিবহনের সূচির মেয়াদ অল্প সময়ের জন্য দেওয়া হয়। এর মধ্যে পরিবহন করতে না পারলে সময় বাড়ানোর জন্য কোটাপ্রতি আরও ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে তিনি (চিত্ত রঞ্জন) সাসপেন্ড করার হুমকি দেন। সম্প্রতি মোংলা সাইলো থেকে ৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন গম নারায়ণগঞ্জ সাইলোতে পরিবহনে আইন লঙ্ঘন করে এককভাবে কাজ দেওয়া হয় ঠিকাদার কাজী সাহিদুর রহমানকে।

অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে অবিলম্বে পরিচালককে অপসারণের দাবি জানিয়ে সংগঠন দুটি গত মাসে এক দফা খাদ্য পরিবহন বন্ধ করে দেয়। পরে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুরোধে তারা খাদ্যশস্য পরিবহন করে। তবে চিত্ত রঞ্জনকে দ্রুত অপসারণ না করলে পরবর্তী সময়ে ফের খাদ্য পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে সংগঠন দুটি। এ বিষয়ে দুদকের কাছেও তারা তথ্য দিয়েছে বলে জানা গেছে।

খুলনা মেজর কেরিয়ার সমিতির সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান পল্টুর অভিযোগ, পরিচালক টাকা ছাড়া কোনো কাজ করেন না। তাঁকে অপসারণের দাবিতে গত ১১ জুন অনুষ্ঠিত এক সভা থেকে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। তাঁকে অপসারণ না করায় ১২ জুন থেকে নৌপরিবহন ঠিকাদারেরা খাদ্যশস্য পরিবহন বন্ধ করে দেন। এ ব্যাপারে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে লিখিতভাবে অভিযোগ দেওয়া হয়। পরে তিনি তাঁদের তাঁর কার্যালয়ে ডাকেন। সেখানে দুর্নীতির বিষয়টি প্রমাণসহ তুলে ধরলে তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

খুলনা আঞ্চলিক নৌপরিবহন ঠিকাদার সমিতির (খাদ্য) সভাপতি শাহজাহান মোল্লা বলেন, পরিচালক সব কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি করছেন। তিনি সময় কম দিয়ে অহেতুক হয়রানি করেন। তাঁকে অপসারণ না করলে সারা দেশে খাদ্যশস্য পরিবহনে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আরিফুর রহমান অপু বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের আমি বলেছি, সরকারের স্বার্থ ও আইনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাঁদের সমস্যার বিষয়গুলো আলোচনা করে সমাধান করা হবে।’