গরু মোটাতাজায় নিষিদ্ধ ওষুধ

জামালপুর জেলা ও লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবহার করে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। এসব গরুর মাংস জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও কয়েক বছর ধরেই মৌসুমি গরু ব্যবসায়ীরা এই অপতৎপরতা চালাচ্ছেন। এতে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের কোনো তদারকি নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।
জামালপুর জেলায় ঈদের এক থেকে দেড় মাস আগেই গরু মোটাতাজা করার জন্য খামারিরা কিছু পল্লি চিকিৎসকের পরামর্শে স্টেরয়েড গ্রুপের বিভিন্ন নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবহার করছেন। কৃত্রিমভাবে গরুর মাংসপেশিতে ভারতীয় ডেক্সামেথাসন ট্যাবলেট ও ইনজেকশন (স্থানীয় নাম পাম ট্যাবলেট বা ইনজেকশন) নামের একধরনের ট্যাবলেট বা ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে। এসব গরুর মাংস খেলে মানুষের কিডনি, লিভারসহ বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত ও ক্যানসারও হতে পারে।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবহারের কথা স্বীকার করে বলেন, ওই সব ওষুধ ব্যবহারে মাংসপেশির অভ্যন্তরে পানি জমে বলে মাস খানেকের জন্য গরুকে স্বাস্থ্যবান মনে হয়। তবে খামারিদের এসব ওষুধ ব্যবহার না করার জন্য বিভিন্ন সময় সেমিনার করে সচেতনতামূলক পরামর্শ দেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি।
পৌর শহরের হাটচন্দ্রা গ্রামের খামারি দেলুয়ার হোসেন বলেন, ‘গরুর ডাক্তারের পরামর্শে গরু মোটাতাজা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ইনজেকশন ও ভিটামিন ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়। ওই সব গরুর মাংস খেলে মানবদেহের ক্ষতি হয়, তা আমার জানা নেই।’
পশুসম্পদ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যমতে, জামালপুর সদরে ১২০টি, মেলান্দহে ১২৫, ইসলামপুরে ৫১, দেওয়ানগঞ্জে ৪৯, মাদারগঞ্জে ৪২, সরিষাবাড়ীতে ১০১ ও বকশীগঞ্জ উপজেলায় ২০টিসহ ছোট-বড় মোট ৫০৮টি গরু মোটতাজা করার খামার রয়েছে। ওই সব খামারে প্রায় পাঁচ হাজার ৮০টি গরু রয়েছে। কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য গরুগুলো বিভিন্ন হাটে তোলা হবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আজগর আলী বলেন, গ্রামের হাতুড়ে গরু চিকিৎকেরা কিছু অখ্যাত কোম্পানির লোকজনের সঙ্গে আঁতাত করে নিরীহ ব্যবসায়ীদের অল্প সময়ে গরু মোটাতাজা করার পরামর্শ দেন।
এদিকে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার সোনাপুর, ভাদুর, নোয়াগাঁও, চণ্ডীপুর, ফতেপুর, ইসাপুর, লামচর, করপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষে ১০ হাজার গরুকে নিষিদ্ধ ভারতীয় পাম ট্যাবলেট খাওয়ানো হচ্ছে। স্থানীয় বেশ কিছু ওষুধের দোকানে এই ওষুধের রমরমা ব্যবসা চলছে।
সোনাপুর গ্রামের গরু ব্যবসায়ী রফিক উল্যা ও মোস্তফা ব্যাপারী বলেন, আকারভেদে দুই মাসে একেকটি পশুকে চোরাই পথে ভারত থেকে আসা ডেক্সামেথাসন, সিপ্রোহেপটাডিন, পেডনিসোল ও ডেক্সাভেট-জাতীয় ৬০০ থেকে ৮০০টি পাম ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। সাধারণত ব্যবসায়ীরা রোজার ঈদের পর শুকনো গরু ও মহিষ কিনে এই ওষুধ খাওয়ানো শুরু করেন।
রামগঞ্জ ও রায়পুরের কয়েকজন পশুচিকিৎসক বলেন, বলবর্ধক এসব নিষিদ্ধ ওষুধ খাওয়ানোর ফলে পশুর যকৃৎ ও কিডনি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এতে পানি জমে। এই পানি স্বাভাবিকভাবে শরীর থেকে বের হতে না পেরে মাংসে সঞ্চারিত হয় এবং গরুর শরীর ফুলে যায়। এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় পশুগুলো রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও হারিয়ে ফেলে। মোটাতাজা হওয়া পশুকে হঠাৎ করে বড়ি খাওয়ানো বন্ধ করা হলে যেকোনো মুহূর্তে এর মৃত্যু হতে পারে।
রামগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গরু মোটাতাজাকরণের জন্য আমরা ভিটামিন-জাতীয় ওষুধ ও খাদ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিই। অনেক পশু ব্যবসায়ী কম খরচের জন্য ওষুধ খাইয়ে মোটাতাজাকরণ করেন বলে শুনেছি।’