প্রহরীকে আটকে সরকারি বাসায় ঢুকে ইউএনওকে কুপিয়ে জখম

দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ মাহমুদ বলেন, বুধবার রাতের কোনো এক সময়ে হামলা হয়েছে। ঠিক কী কারণে এই ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

হামলার শিকার ঘোড়াঘাটের ইউএনওকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়।ছবি: মঈনুল ইসলাম
ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানম
ছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। বুধবার রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা তাঁর সরকারি বাসভবনে ঢুকে তাঁকে ও তাঁর বাবা ওমর আলীকে কুপিয়ে জখম করে।

বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে একটার দিকে ইউএনওকে নিয়ে হেলিকপ্টার ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। আড়াইটার দিকে তাঁকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ঢাকায় পৌঁছে। বেলা তিনটার দিকে তাঁকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে ভর্তি করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর বাবা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ মাহমুদ বলেন, বুধবার রাতের কোনো এক সময়ে হামলা হয়েছে। ঠিক কী কারণে এই ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

এটি কোনো ডাকাতির ঘটনা নয়। তাঁকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে আমার ধারণা।
সাংসদ শিবলী সাদিক, দিনাজপুর-৬

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইউএনওর সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর কেটে দুর্বৃত্তরা তাঁর শয়নকক্ষে ঢুকে পড়ে। এর আগে দুর্বৃত্তরা ওই বাসভবনের নিরাপত্তা প্রহরীকে বেঁধে প্রহরী কক্ষে তালা দিয়ে আটকে রাখে। ইউএনওর বাবা ওমর আলী (৬০) প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে তিনি হাঁটতে বের না হওয়ায় সঙ্গীরা তাঁর খোঁজ নেওয়ার জন্য বাসভবনে যান। অনেক ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে ইউএনও, তাঁর বাবা ও প্রহরীকে উদ্ধার করে।

ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, ইউএনওর বাসাটি সিসি ক্যামেরার আওতাধীন। ফুটেজ সংগ্রহ করে দোষী ব্যক্তিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

ইউএনও ও তাঁর বাবাকে গুরুতর আহত অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভোরে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

মেয়ের ওপর হামলার খবর শুনে ছুটে আসেন ইউএনওর মা। তিনি এখন আহত স্বামীর পাশে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছেন
ছবি: প্রথম আলো

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তোফায়েল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ইউএনওর মাথার বাম দিকে বেশি আঘাত লেগেছে। তাঁর প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ধাতব কোনো বস্তু দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়েছে। তাঁর শরীরের ডান দিক অবশ হয়ে গেছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।

সকালে দিনাজপুর-৬ আসনের সাংসদ শিবলী সাদিক, জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম ও পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সাংসদ বলেন, ‘এটি কোনো ডাকাতির ঘটনা নয়। কারণ ঘরের কোনো মালামাল খোয়া যায়নি। তাঁকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে আমার ধারণা।’ তিনি বলেন, এই উপজেলায় বড় কোনো শিল্পকারখানা নেই। অধিকাংশই কৃষক। স্থানীয়ভাবে তাঁর শত্রু থাকার কথা না। ইউএনওর বাড়ি নাটোর জেলায় এবং শ্বশুরবাড়ি নওগাঁ জেলায়।

রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইউএনওর উদ্বিগ্ন সহকর্মীরা
ছবি: প্রথম আলো

ইউএনওর বাবা ওমর আলী রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৯ নম্বর নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁর মাথা ও শরীরে ধাতব বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ভোর সাড়ে চারটার দিকে নামাজ আদায় করতে ওঠে পাশের ঘর থেকে মেয়ের চিৎকার শুনতে পাই। সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করলে একজন মুখে কাপড় বাঁধা অবস্থায় এসে আমাকে ভয় দেখিয়ে আলমারির চাবি চায়। বলে যে না দিলে মেরে ফেলা হবে। এরপর হাতুড়ি দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করলে আমি লুটিয়ে পড়ি। এরপর আর কিছু বলতে পারি না।’

হামলার শিকার ইউএনওর বাবা ওমর আলী রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন
ছবি: প্রথম আলো

ইউএনওর বাবা আরও বলেন, ‘ঘোড়াঘাটে মেয়ে একা থাকে। জামাতা রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ইউএনও। মেয়ের সঙ্গে তিন বছর বয়সী নাতি থাকে। এই উপজেলায় আড়াই বছর ধরে মেয়ের সঙ্গে থাকছি। মাঝে-মধ্যে মহাদেবপুরের বাড়িতে যাই। আমি মেয়ের সঙ্গে থাকা অবস্থায় আমার মেয়েকে কেউ কোনো হুমকি দিয়েছে কিনা, তা আমার জানা নেই।’