চট্টগ্রামে ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগে পুলিশের এসআই বরখাস্ত

অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা খন্দকার সাইফ উদ্দিন
অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা খন্দকার সাইফ উদ্দিন

চট্টগ্রামে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁর নাম খন্দকার সাইফ উদ্দিন। তিনি নগরের বাকলিয়া থানায় উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাইফ উদ্দিনকে নগর পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু বাকলিয়া থানা-পুলিশের সহযোগিতায় সাইফ পলাতক হয়ে যান বলে অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে নগরের বাকলিয়া থানার পশ্চিম বাকলিয়া এলাকার একটি বাসা থেকে ৪ হাজার ১০০ ইয়াবা বড়ি জব্দ করে র‍্যাব। এ সময় পুলিশের সোর্স নাজিম উদ্দিন ওরফে মিল্লাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। পাশাপাশি ওই বাসা থেকে পুলিশের ইউনিফর্ম, মাদক বিক্রির ২ লাখ ৩১ হাজার টাকা এবং একটি মোটরসাইকেলও জব্দ করা হয়। র‍্যাব বলছে, সাইফ ওই বাসাটি ভাড়া নিয়ে ইয়াবা ব্যবসা করতেন। তবে তিনি পরিবার নিয়ে অন্য জায়গায় থাকতেন।

এ ঘটনায় র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের উপসহকারী পরিচালক নাজমুল হুদা বাদী হয়ে মঙ্গলবার বিকেলে বাকলিয়া থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। এতে গ্রেপ্তার নাজিম ও পলাতক এসআই সাইফকে আসামি করা হয়।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মামলার আসামি হওয়ায় বাকলিয়া থানার এসআই সাইফকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।

পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, এসআই সাইফ গতকাল সোমবার রাতে বাকলিয়া থানা-পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। আজ সকালে তিনি অসুস্থ দাবি করলে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয় চিকিৎসার জন্য। সেখান থেকে তিনি কৌশলে পালিয়ে যান। কিন্তু পুলিশের আরেকটি সূত্র বলছে, বাকলিয়া থানা-পুলিশ সাইফকে পালানোর সুযোগ করে দিতে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে গিয়েছিল। বিষয়টি জানার পর নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সাইফকে ধরতে অভিযান শুরু করে।

এ বিষয়ে বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব কুমার চৌধুরী সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, বুকে ব্যথা হওয়ায় এসআই সাইফকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ফোর্স দিয়ে পাঠানো হয়েছে। কীভাবে পালিয়েছে জানেন না। বাসা ভাড়া নিয়ে ইয়াবা ব্যবসা করার বিষয়টিও তাঁর জানা নেই।

র‍্যাব সূত্রে জানা গেছে, বাকলিয়ার ওই বাসাটি দেড় বছর আগে ভাড়া নেন সাইফ। তিনি বাকলিয়া, চাক্তাই এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে ধরা পড়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে মামলা না দিয়ে টাকা নিয়ে ছেড়ে দিতেন। পরে ওই ইয়াবাগুলো বাসায় রাখতেন। এরপর গ্রেপ্তার নাজিম ‘পুলিশের হয়ে’ এগুলো বিক্রি করতেন।

এর আগে ১২ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হন চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া থানায় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. রেদোয়ান। সেদিন নগর গোয়েন্দা পুলিশ তাঁর কাছ থেকে এক হাজার ইয়াবা বড়ি জব্দ করে। এর আগে রেদোয়ান ২০১৬ সালের ২৬ নভেম্বর নগরের কোতোয়ালি থানার সরকারি সিটি কলেজের ফটকের সামনে ১ হাজার ৭০০ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সেদিন একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে রেদোয়ানকে ওই ইয়াবাসহ পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় করা মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এখনো এর বিচার শেষ হয়নি। ওই মামলায় ছয় মাস কারাভোগ করে জামিনে বের হয়েছিলেন রেদোয়ান। এরপর আবার তিনি ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হলেন। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। ২০১৬ সালের ঘটনায় রেদোয়ান এখন পর্যন্ত বরখাস্ত আছেন।