চট্টগ্রামে 'মাজারে' দুজনকে গলা কেটে হত্যা

চট্টগ্রাম নগরের আকবরটিলা এলাকায় গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঘরের ভেতরে দুজনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। এক কক্ষের ওই ঘরটি ‘ল্যাংটা ফকিরের মাজার’ নামে পরিচিত। এলাকাবাসী বলছে, হত্যাকাণ্ডের পর ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে গেছে খুনি।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন রহমত উল্লাহ ওরফে ল্যাংটা ফকির (৫৫) ও তাঁর খাদেম আবদুল কাদের (৩০)। পুলিশ বলছে, জুমার নামাজের সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
এলাকাবাসী জানান, হত্যাকাণ্ডের পর বেলা দুইটার দিকে ওই ঘরের সামনে দিয়ে শার্ট-প্যান্ট পরা অপরিচিত এক যুবককে দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। ধাওয়া দিয়ে প্রায় ৩০০ গজ দূরে ওই যুবককে জাপটে ধরেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। এ সময় ওই যুবক তাঁকে (বাসিন্দা) ছুরি মারে এবং দু-তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। বিস্ফোরণে আহত হয়েছে এলাকার দুই কিশোর। এলাকাবাসীর ধারণা, ওই যুবকই ‘খুনি’।
হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থলে যান চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য্য। সেখানে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হত্যাকারী একজনই। তাঁর ধারণা, প্রথমে ল্যাংটা ফকিরকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। তাঁকে দেখতে আসা খাদেম কাদেরকেও পরে একইভাবে হত্যা করে খুনি। তিনি বলেন, এটি পরিকল্পিত খুন বলে মনে হচ্ছে। তার কারণ, জুমার নামাজের সময় রাস্তায় লোকজনের চলাচল কম থাকায় হত্যাকাণ্ডের জন্য এই সময়টিকেই বেছে নিয়েছে খুনি। কেউ বাধা দিলে তাকে আটকাতে ককটেলও নিয়ে আসে। তাঁর ধারণা, মাজারের টাকাপয়সা কিংবা মাজারবিরোধীরা এ ঘটনা ঘটাতে পারে।
হত্যাকাণ্ডের আগের রাতে কথিত এই মাজারে খাবার ও কাওয়ালির আয়োজন করা হয়। স্থানীয় লোকজন জানান, চাঁদা তুলে প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে নিয়মিত এমন আয়োজন হতো। গত বৃহস্পতিবার রাতের খাবারের আয়োজনে ৫০ থেকে ৬০ জন লোক ছিল। তারা সারা রাত সেখানে অবস্থান করে সকালে যে যার মতো চলে যায় বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা ও বাবুর্চি জাফর আলী।
গতকাল দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, বায়েজিদ বোস্তামী সড়কের শেরশাহ বাংলা বাজার এলাকার পশ্চিমে পাহাড়ি এলাকায় রাস্তার পাশে আধা পাকা একটি ঘরই ‘মাজার’। এখানেই থাকতেন ‘ল্যাংটা’ ফকির। তবে ঘরের ভেতরে কোনো কবর নেই। স্থানীয় বাসিন্দা উমর আলীসহ কয়েকজন বলেন, ল্যাংটা ফকির বিয়ে করেননি। ছোটবেলা থেকে এই এলাকায় আছেন। শুরুতে পাহাড়ের পাদদেশে গাছতলায় থাকলেও ১৫ বছর ধরে আধা পাকা ঘরটিতে আস্তানা গড়ে তোলেন। ঘরটিতে মোমবাতি ও একটি রান্নার বড় পাতিল দেখা গেছে। আর খাদেম আবদুল কাদেরের বাড়ি ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায়।
কথিত মাজারের একটু দূরে স্থানীয় যুবক মো. সুমনের বাসা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দুইটার কিছুক্ষণ আগে নামাজ শেষে বাসায় খেতে বসলে হঠাৎ বাইরে ‘চোর’ ‘চোর’ চিৎকার শোনেন তিনি। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখেন প্যান্ট-শার্ট পরা এক যুবক দৌড়ে মাজার থেকে পশ্চিম দিকে বাবুল কলোনির দিকে পালিয়ে যাচ্ছে। তখন মাজারে গিয়ে দেখেন ফকির ও খাদেমের গলা কাটা লাশ পড়ে আছে।
সুমন বলেন, ওই যুবক পালিয়ে যাওয়ার সময় বাবুল কলোনির বাসিন্দা মো. মনির মাজার থেকে ৩০০ গজ পশ্চিমে খুনিকে ধরে ফেলেন। এ সময় মনিরের দুই পায়ে ছুরিকাঘাত করা হয়। আশপাশে থাকা লোকজন এগিয়ে আসতে চাইলে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে খুনি পশ্চিম দিকে ডেবারপাড় হয়ে ফয়’স লেক এলাকার দিকে চলে যায়। দূর থেকে দেখা গেছে যুবকটি তার গায়ে থাকা শার্ট খুলে ফেলে। ভেতরে টি-শার্ট ছিল। ককটেল বিস্ফোরণে মনির ছাড়াও মো. শাহীন ও মো. মুন্না নামের দুই কিশোর আহত হয়েছে।
আহত মো. মনির প্রথম আলোকে বলেন, ‘হত্যাকারী যুবকটির চেহারা মনে নেই। তাকে জাপটে ধরলে ছুরিকাঘাত করে। এরপরও ধরে রেখেছিলাম। ককটেল ছুড়ে মারার পর আর কিছু বলতে পারি না।’ মনির হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে পুলিশ বেলা ২টা ৩ মিনিটে হত্যাকাণ্ডের খবর পায়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তাঁর ধারণা, খুনি একজনই। তিনি বলেন, ককটেল ফাটিয়ে পালিয়ে যাওয়া ওই যুবককে ধরার চেষ্টা চলছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জঙ্গিদের কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আবদুল মান্নান নামের এক ব্যক্তিকে সন্ধ্যায় নগরের শেরশাহ এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।