চেক নিয়ে আইনি খেলা খেলেন মোরশেদ

ভুয়া চেক প্রত্যাখ্যানের (ডিজঅনার) মামলা ঠুকে দিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করানো তাঁর পেশা। আর এখন পাওনাদারের টাকা পরিশোধ না করায় তিনি নিজেই চেক প্রত্যাখ্যান মামলার আসামি। তাঁর নাম মো. মোরশেদ। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারায়। থাকেন চট্টগ্রাম নগরের মতিয়ারপুল এলাকায়।
এই মোরশেদ তাঁর একজন পাওনাদারকে আইনি সহায়তা দেওয়ায় চট্টগ্রামের দুই আইনজীবীর বিরুদ্ধে বার কাউন্সিলে পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ দেন। পাওনাদারের নাম মো. রাসেল। মোরশেদের কাছে রাসেল ইট বিক্রি ও পরিবহন বাবদ ৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা পাবেন। রাসেলকে আইনি সহায়তা দেওয়ায় তাঁর আইনজীবীসহ দুজনের সই ও সিলমোহর জাল করেন মোরশেদ। এ জন্য মোরশেদের বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার জালিয়াতির অভিযোগে চট্টগ্রামের আদালতে মামলা করেন রাসেলের আইনজীবী। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যরা ভবিষ্যতে মোরশেদকে আইনি সহায়তা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আদালত সূত্র জানায়, মোরশেদের বিরুদ্ধে আদালতভিত্তিক জালিয়াতের অভিযোগ তুলেছে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি। তিনি রাসেলের আইনজীবীসহ দুজনের সাক্ষর ও সিলমোহর জাল করে একটি চেকের মামলায় জামিন নেন।
আদালত সূত্র আরও জানায়, উল্টো ওই দুই আইনজীবীর বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ এনে মোরশেদ গত ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে যান। কিন্তু মোরশেদের এই জালিয়াতি এবং বার কাউন্সিলে দেওয়া অভিযোগ সম্পর্কে ওই দুই আইনজীবী আগে কিছুই জানতেন না। গত ১৭ জুলাই বার কাউন্সিল থেকে দুই আইনজীবীর কাছে পৃথক দুটি চিঠি এলে তাঁরা মোরশেদের জালিয়াতি সম্পর্কে অবগত হন। চট্টগ্রামের এই দুই আইনজীবী হলেন মো. রিদওয়ানুল হক ও ভবতোষ নাথ।
এর আগে চট্টগ্রামের একটি নিরীহ পরিবারের চার সদস্যকে ভুয়া চেকের মামলায় ফাঁসিয়ে দেন মোরশেদ। গত ৩ আগস্ট প্রথম আলোয় এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই চার সদস্যের পরিবারের গৃহকর্তা মজুরিভিত্তিক শ্রমিক হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরে কাজ করেন। গৃহকর্তার স্ত্রী ও তিন সন্তানকে একটি শিল্পকারখানার মালিক বানিয়ে চেক প্রত্যাখ্যানের ১০টি মামলা করেছিলেন মোরশেদ। এর মধ্যে আটটি মামলায় চারজনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে।
রাসেলের আইনজীবী রিদওয়ানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের ২৭ এপ্রিল চেকটি দেন মোরশেদ। মোরশেদের ব্যাংক হিসাবে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় গত বছরের ২১ আগস্ট চেকটি প্রত্যাখ্যাত হয়। এরপর চেক ডিজঅনার মামলা করেন রাসেল। গত বছরের ৮ নভেম্বর মোরশেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। মামলাটি পটিয়া আদালতে বিচারাধীন।
অন্য আইনজীবী ভবতোষ নাথ বলেন, ‘মোরশেদকে আমি চিনি না। তাঁর জামিনের আবেদন, নথি উপস্থাপনের আবেদন, ওকালতনামা ও জামিননামায় জালিয়াতি করে আমার সই ও সিলমোহর ব্যবহার করা হয়েছে।’
অভিযোগ সম্পর্কে মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, ইট সরবরাহ কম দেওয়ায় তিনি চেকের টাকা আটকে দেন। রাসেল মামলা করলে আইনজীবী রিদওয়ানুল হকের চেম্বারে নগদ টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেননি রাসেলের আইনজীবী। এ জন্য তিনি দুই আইনজীবীর বিরুদ্ধে বার কাউন্সিলে অভিযোগ দেন। তিনি বলেন, টাকা খাটিয়ে আয় (সুদ) করা তাঁর পেশা।
রিদওয়ানুল বলেন, ‘মোরশেদ আমার ও আইনজীবী ভবতোষ নাথের সই ও সিলমোহর জাল করে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি আদালত থেকে জামিন নেন। আমার চেম্বারে মোরশেদ কোনো টাকা রাসেলকে দেননি। এটা তাঁর মিথ্যাচার।’
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, এই ব্যক্তি (মোরশেদ) এর আগে আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি শ্রমিক পরিবারের চার সদস্যকে শিল্পপতি বানিয়ে ভুয়া চেকের মামলায় ফাঁসিয়েছেন। অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে দুই আইনজীবীর সই ও সিল জাল করে নিজের জামিননামা নিজে তৈরি করেছেন। এটাও আদালতের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।
মোরশেদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে। আইনজীবী সমিতি তাঁর শাস্তি চায়। মোরশেদকে চট্টগ্রামের কোনো আইনজীবী ভবিষ্যতে আইনি সহায়তা দেবেন না বলে জানান সাইমুল চৌধুরী।