
রাজশাহী কলেজে গতকাল সোমবার ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। এর জেরে কলেজে ভাঙচুর করেছেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। তাঁরা শিবির কর্মী বলে এক ছাত্রকে পিটিয়ে পুলিশে দিয়েছেন। ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলেন, দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কলেজের শহীদ মিনারের পাশে মিছিল শেষে সমাবেশ করছিল ছাত্রদল। সে সময় কলেজের ভেতর থেকে মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের দিকে যাচ্ছিল ছাত্রলীগ। এ সময় ছাত্রদল উসকানিমূলক স্লোগান দেয়। ছাত্রলীগও পাল্টা স্লোগান দেয়। তখন সংঘর্ষের আশঙ্কায় কলেজের অধ্যক্ষ হবিবুর রহমান ছাত্রদলকে এবং ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক আনিসুজ্জামান ছাত্রলীগকে সামলাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তারপরও দুই পক্ষ হাতাহাতিতে লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের ধাওয়ায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে পালিয়ে যান।
এদিকে গতকাল রাতে কলেজ কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ক্যাম্পাসে সব ধরণের রাজনৈতিক মিছিল–সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলেন, ছাত্রদলকে ধাওয়া করে ছাত্রলীগের কর্মীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে ছড়িয়ে পড়েন। এ সময় তাঁরা শিবির কর্মী বলে ইসলামের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবদুল্লাহ সরকারকে ধাওয়া করেন। তিনি দৌড়ে দর্শন বিভাগের বারান্দায় আশ্রয় নিলে সেখানে গিয়েই তাঁকে মারধর করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা।
দর্শন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, আবদুল্লাহকে ধাওয়া করে এসে ছাত্রলীগের কর্মীরা অযথাই বিভাগের জানালার কাচ, ডিসপ্লে বোর্ড ও অন্যান্য আসবাব ভাঙচুর করেন। একপর্যায়ে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব হাসান এসে ছেলেটিকে বের করে নিয়ে যান। তাঁকে বোয়ালিয়া থানা-পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। অবশ্য বেলা দুইটার পর শিক্ষকদের জিম্মায় তাঁকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের বর্ণনা অনুযায়ী, দর্শন বিভাগের উত্তর পাশের চত্বরে ছাত্রলীগের ধাওয়ার মধ্যে পড়েন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক মিজানুল ইসলাম। তিনি একপর্যায়ে মাটিতে পড়ে যান। তাঁর মাথা জখম হয়। ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সভাপতি নূর মোহাম্মদ তাঁকে তুলে নিয়ে আসেন। এ সময় অধ্যক্ষ হবিবুর রহমান ছাত্রলীগকে থামাতে গিয়ে হাঙ্গামার মধ্যে পড়েন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হন তিনি। পরে পুলিশ তাঁকে বের করে আনে। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে ছাত্রলীগ এরশাদবিরোধী আন্দোলনে রাজশাহীতে পুলিশের গুলিতে নিহত জিয়াবুলের স্মরণে ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে। ওই মিছিলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার নেতৃত্ব দেন। সেখান থেকে তাঁরা মিছিল নিয়ে নগরের হেতেমখাঁ কবরস্থান শহীদ জিয়াবুলের মাজার জিয়ারত করতে যান।
বেলা পৌনে একটার দিকে রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাইমুল হাসানের নেতৃত্বে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ এলাকা থেকে একদল যুবক লাঠিসোঁটা ও রামদা নিয়ে রাজশাহী কলেজে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ গেট বন্ধ করে দেয়। পরে তাঁরা পশ্চিম দিকে কলেজের মুসলিম হোস্টেলের ভেতর দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে ছাত্রদলের বসার জায়গা এবং প্রশাসন ভবনের সামনের চত্বরে থাকা ফুলের টব ভাঙচুর করেন।
রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ বলেন, ছাত্রদলের উসকানিমূলক স্লোগান থেকে এ ঘটনার সূত্রপাত। তিনি দাবি করেন, তাঁরা জিয়াবুলের মাজারে থাকার সময় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মর্তুজা ফামিন বলেন, সোমবার ও বৃহস্পতিবার তাঁদের ‘রুটিন’ মিছিল। তাঁরা মিছিল শেষে সমাবেশ করছিলেন। তখন ছাত্রলীগ মিছিল নিয়ে এসে উসকানিমূলক স্লোগান দেয় ও তাঁদের ওপর হামলা চালায়।
অধ্যক্ষ হবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগকে এই কলেজে কোনো কিছুতেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না দেখে তারা অযাচিতভাবে এসব ভাঙচুরের ঘটনা ঘটাচ্ছে। মহানগর পুলিশের উপকমিশনার এ কে এম নাহিদুল ইসলাম বলেন, পুলিশের সামনে ভাঙচুরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে, নাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতো।