ছয় মাস আগেও জুবায়েরের বাড়িতে ছিলেন চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক

আনসার আল ইসলাম বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) গোয়েন্দা শাখার প্রধান মো. জুবায়ের। ছবি: সংগৃহীত
আনসার আল ইসলাম বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) গোয়েন্দা শাখার প্রধান মো. জুবায়ের। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের কুকি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়েছিল আনসার আল ইসলাম বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)। সম্প্রতি চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার হওয়া এবিটির গোয়েন্দা শাখার প্রধান মো. জুবায়ের পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্যই দিয়েছেন। 

কলাবাগানে খুন হওয়া জুলহাজ মান্নান ও মাহাবুব রাব্বী তনয় হত্যাসহ অন্তত চারটি হত্যায় যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করে গত ২২ জুলাই ঢাকার একটি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন জুবায়ের।

১৭ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে জুবায়েরকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের একটি দল। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৩ সালে এবিটিতে যোগ দেওয়া জুবায়ের সংগঠনটির গোয়েন্দা শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সংগঠনে তিনি শেখ আবদুল্লাহ, জায়েদ, জাবেদ, আবু ওমায়ের নামেও পরিচিত। এ জঙ্গি সংগঠনটির তহবিলের দেখভালও করতেন তিনি। এবিটির সামরিক শাখার প্রধান চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের সঙ্গে তাঁর সরাসরি যোগাযোগ ও আলোচনা হতো। ছয় মাস আগেও জুবায়েরের চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ এলাকার জাকির হোসেন রোডের বাসায় ছিলেন মেজর জিয়া।

কর্মকর্তারা বলেন, জুবায়ের চট্টগ্রামে থাকতেন। প্রতি মাসে ঢাকায় এসে একজনের কাছ থেকে পাঁচ বা ছয় লাখ টাকা করে নিয়ে যেতেন। সেই টাকা থেকে তিনি মেজর জিয়াকে দিতেন। আবার জিয়ার নির্দেশে বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে টাকা ভাগ করে দিতেন। সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে, সংগঠনটি ভারতে নিজেদের কর্মকাণ্ড বিস্তার করেছে। নিজেদের সদস্যদের জন্য অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ পেতে ভারতের নাগাল্যান্ডের কুকি বিদ্রোহীদের একটি দলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে এবিটি। এ কাজে মূল ভূমিকায় ছিলেন জুবায়ের। ভারত ও মিয়ানমার দুই দেশেই কুকি জনগোষ্ঠীর বিদ্রোহীরা রয়েছে।

ভয়ংকর জুবায়ের
এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া এবিটি সদস্যদের মধ্যে জুবায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করে একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলেই ছিলেন জুবায়ের।

২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল ঢাকার কলাবাগানে খুন হওয়া জুলহাজ মান্নান যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রটোকল কর্মকর্তা ছিলেন। সর্বশেষ তিনি মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির কর্মসূচি কর্মকর্তা পদে কাজ করছিলেন। তাঁর বন্ধু মাহবুব রাব্বী নাট্যকর্মী। তাঁরা দুজনেই সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করতেন। জুলহাজ মান্নানকে সরাসরি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া আইডি দিয়ে অনুসরণ করছিলেন জুবায়ের। হত্যাকাণ্ডের সময়ও তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন।

এর আগে পুলিশ জানিয়েছিল, জুলহাজ-তনয় জোড়া খুনের ঘটনায় আনসার আল ইসলামের নয়জনের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। খুনিদের ফেলে যাওয়া মোবাইলের কল তালিকার সূত্র ধরে তখনই পুলিশ জঙ্গি রাশেদ উদ্দিন ভূঞা ওরফে রায়হান ও শরিফুল ইসলাম ওরফে কেরামত নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। রাশেদ উদ্দিন আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ জঙ্গির নাম বলেছেন। এ ছাড়া হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী জিয়াউল হক ও সেলিমও এখনো গ্রেপ্তার হননি।

জুবায়ের নিজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অভিজিৎ রায় হত্যার ঘটনাস্থল রেকি করেছিলেন। এ ছাড়া তিনি পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দীন সামাদ হত্যার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া ব্লগার নীলাদ্রি নীল হত্যাকাণ্ডেও তাঁর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।