দিনাজপুরে ধর্ষণের শিকার শিশুটি আবার হাসপাতালে

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ধর্ষণের শিকার পাঁচ বছরের শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। সে এখন পর্যন্ত একা ভালো করে হাঁটতে পারে না। আতঙ্কও কাটেনি।

গত বছরের ১৮ অক্টোবর শিশুটি নিখোঁজ হয়। পরের দিন শিশুটিকে তার বাড়ির কাছে অসুস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়। শিশুটির প্রজনন অঙ্গ, মাথা, গলা, হাত ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। ঊরুতে সিগারেটের ছ্যাঁকার ক্ষত ছিল। শিশুটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন ছিল। শিশুটির চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে গত বছরের ২১ নভেম্বর প্রজনন অঙ্গে অস্ত্রোপচার হয়। এরপর বাড়ি ফিরে যায় শিশুটি। এখন আবার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটি বিছানায় বসে আছে। তার বিছানায় রাবার ক্লথ বিছানো। প্রস্রাবে একটু পর পর ভিজে যায় বলে হাফপ্যান্ট পরিবর্তন করে দিতে হয়। শিশুটির মন থেকে আতঙ্ক দূর হয়নি। বার্ন ইউনিটে দগ্ধ শিশুদের চিৎকার তার ভালো লাগে না। মন খারাপ হয়।

এখানে ভালো লাগে কি না, জানতে চাইলে প্রবল বেগে মাথা নেড়ে শিশুটি জানায়, তার এখানে ভালো লাগে না। আগে যেখানে ছিল, সেখানে (ওসিসি) যেতে চায়। সেখানে তার ভালো লাগত। শিশুটির সঙ্গে থাকা নানি একটু হাঁটতে বললে শিশুটি বিছানা থেকে নামে, তবে এক-দুই পা গিয়ে আবার ফিরে আসে।

শিশুর নানি জানালেন, শিশুটির মন থেকে আতঙ্ক দূর হয়নি। ঘুমের মধ্যে বারবার আঁতকে ওঠে। অন্য শিশুদের হাতে প্লাস্টিকের হাতি, ঘোড়া দেখে বায়না ধরেছে তা কিনে দেওয়ার জন্য। মা টিপের পাতা দিয়ে দেননি বলেও শিশুটির মন খারাপ বলে জানালেন নানি।

নানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শিশুটির মা অন্তঃসত্ত্বা। এ মাসেই সন্তান হওয়ার কথা। তাই তিনি দিনাজপুরে আছেন। আর শিশুটির বাবা বাড়ি, নিজের কাজ, আবার আদালতে দৌড়াচ্ছেন। এভাবেই চলছে পুরো সংসার।

বার্ন ইউনিটের সমন্বয়কারী চিকিৎসক সামন্ত লাল সেন প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটির বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ওর আতঙ্ক এখনো কমেনি। ওকে অন্য অসুস্থ শিশুদের থেকে একটু আলাদা করে রাখা যায় কি না, তার চিন্তাভাবনা চলছে।

আজ শিশুটির বাবা দিনাজপুরের আদালতে ছিলেন। ফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক আসামিরে এখন পর্যন্ত ধরতে পারে নাই পুলিশ। আরেক আসামি জামিন চাইছিল, বিচারক জামিন দেন নাই। থানায় মেয়ের জবানবন্দি নিছে। এর বাইরে আর কিছু হয় নাই।’

শিশুটির বাবা গত বছরের ২০ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলায় সাইফুল ইসলাম ও আফজাল হোসেন কবিরাজ নামের দুজনকে আসামি করা হয়। সাইফুলকে গ্রেপ্তারের পর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।